নড়াইলের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা!
নড়াইলের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল বাঁশের সাঁকোই তাদের ভরসা।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের মধ্যবর্তী চিত্রা নদীর শাখা ‘লাইনের খালের’ ওপর সেতু নেই। প্রাচীন এই খালটির ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ইউনিয়নের ৫-৬টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
পাশাপাশি চাঁচুড়ী এবং কৃষ্ণপুর বিলে অবস্থিত কয়েক হাজার মৎস্য ঘের চাষি ও কৃষকসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে। ফলে মানুষের যাতায়াত, মৎস্য ঘেরে খাবার পৌঁছানো, মাছ এবং কৃষিপণ্য পরিবহনে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ‘লাইনের খাল’ পারাপারে কয়েক হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। প্রায় ২০ বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় এবং তাদের কাছ থেকে বাঁশ সংগ্রহ করে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ওই খাল পারাপার হয় পথচারীরা। এরপর থেকে নষ্ট হলে চাঁদা তুলে নিজ উদ্যোগে সাঁকোটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করে আসছে এলাকাবাসী।
প্রতিদিন এ পথে উপজেলার কৃষ্ণপুর, ডহর চাঁচুড়ী, চাঁচুড়ীসহ ৫-৬টি গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কিষাণ-কিষাণী, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ। জেলার বাইরের দূর-দূরান্তের এলাকারও অনেক চিংড়ী চাষিরা শত শত একর জমি লিজ নিয়ে চাঁচুড়ী-কৃষ্ণপুর বিলে মাছ এবং বোরো ধানের চাষ করেছেন। খালের ওপর পাকা সেতু না থাকায় তাদের মাছ ও ধান আনতে দুর্ভোগ হচ্ছে।
সাঁকোটির অদূরেই উপজেলার সর্ববৃহৎ চাঁচুড়ী বাজার।
সেখানে প্রতিদিন রমরমা বাজারের পাশাপাশি সপ্তাহে রোব ও বৃহস্পতিবার হাট বসে। ফলে মৎস্য ঘেরের পাড়ে চাষাবাদকৃত সবজি ও মাছ নিয়ে এসে কৃষকেরা এবং এলাকার বাসিন্দারা সাঁকো পার হতে ভোগান্তির শিকার হন।
এছাড়া কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য পরিবহনেও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বাজারে আসা মানুষদের। বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে কৃষি পণ্য পরিবহন সম্ভব না হওয়ায় উভয় পারের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য পার্শ্ববর্তী হাট-বাজারে নিতে পারেন না।
সাঁকোটির পাশেই ডহর চাঁচুড়ী-কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সন্নিকটেই শামসুল উলূম পুরুষ এবং সামেলা খাতুন মহিলা মাদ্রাসা অবস্থিত। যে কারণে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে এপার-ওপারে যেতে হয়। অনেক সময় অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
এছাড়া বাঁশের সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। বন্যার সময় সাঁকোটি দিয়ে পারাপার খুবই কষ্টকর ও অনিরাপদ হয়ে পড়ে। বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের নিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকরা।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, প্রায় ১০০-১২০ ফুট দীর্ঘ সাঁকোটিতে চলার সময় সেটি দোলে, থরথর করে কাঁপতে থাকে। আবার অনেক স্থানে বাঁশ-খুঁটি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ভগ্নপ্রায় বাঁশের সাঁকোটির ওপর দিয়ে অতি কষ্টে ও সাবধানতা অবলম্বন করে পারাপার হচ্ছে মানুষ। অনেকে সাইকেল মাথার ওপর তুলে একহাত দিয়ে বাঁশ ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পার হচ্ছেন।
সাঁকোটির পূর্বপারের বাসিন্দা আফজাল আলী মীর বলেন, এই খালের ওপর আমাদের ব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বারবার তাগিদ দেওয়ার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে থাকে না।
কৃষ্ণপুর এবং ডহর চাঁচুড়ী এলাকার আহাদুল ইসলাম ও ইমন রহমানসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, সাঁকো পার হয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়। অনেকে প্রায়ই সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় পানিতে পড়ে যায়।
জানতে চাইলে চাঁচুড়ী ইউপি সদস্য ছামিউল শেখ বলেন, ওই স্থানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শিগগিরই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডির কালিয়া উপজেলা প্রকৌশলী প্রণব কান্তি বল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)