নড়াইলের মঙ্গলহাটা গ্রামে ‘গলাকাটা ভিটা’ নিয়ে নানান কথা


নড়াইল জেলার মঙ্গলহাটা গ্রামে গেলে দেখা মিলবে একটি ভিটার। নামে ভিটা হলেও এখন জঙ্গলই বলা চলে। সেখানে কোনো বাড়িঘর নেই। আছে শুধু গা ছমছমে পরিবেশ। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে প্রচলিত গল্পটা হলো, প্রায় একশ বছর আগে এখানে এক অচেনা ব্যক্তির গলাকাটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এ জায়গায় দেখেছে অস্বাভাবিক সব দৃশ্য। দিনে দিনে তাই নাম হয়েছে ‘গলাকাটা ভিটা’।
এই ভিটা নিয়ে এলাকার মানুষজনদের মধ্যে রয়েছে নানা গল্প।
কেউ বলছে, এখনো এখানে রাতের বেলায় একটা মুন্ডহীন অবয়ব দেখা যায়। অনেকে নিছক গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন । কিন্তু বয়স্ক অনেকেই জানালেন, তারা নিজের চোখে দেখেছেন সেই অবয়ব ও অস্বাভাবিক অনেক কিছু। কেউ দাবি করলেন, তিনি নিজে না দেখলেও তাদের বাপ-দাদারা গলাকাটা ভিটার অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
তবিবর রহমানের বয়স সত্তরের কাছাকাছি। তিনি জানালেন, ‘না দেখে কেউ কোনো কিছু বিশ্বাস করতে চায় না। আমিও বলতাম, ওসব ফালতু কথা। মানুষ বানিয়ে বলে। কিন্তু একদিন রাতে আমি বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর স্মৃতি হাতড়ে আবার বলা শুরু করলেন, ‘একা একা বাড়ি ফিরছিলাম। রাত খুব বেশি না হলেও অন্ধকার ছিল। ভিটার কাছে আসতেই এর ইতিহাস মনে পড়ে গেল। গা শিরশির করে উঠল আমার। ভয়ে ভয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি একটা আলোর অবয়ব। ভয়ে চিৎকার শুরু করি। কিন্তু মনে হলো, কেউ আমার চিৎকার শুনছে না। কারণ গলা দিয়ে শব্দই বের হচ্ছিল না। দেখলাম একটা গলাকাটা মানুষের শরীর। পুরো শরীরে রক্ত আর রক্ত। এ ভিটা থেকে বেরিয়ে সোজা পশ্চিমে নদীর দিকে চলে গেল। আমি দৌড় দিতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর টানা তিন মাস জ্বরে ভুগেছি। দৃশ্যটা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠি।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী খুশি বেগমের বয়স ৮০ বছর ছুঁই ছুঁই। তিনি জানালেন, ‘গলাকাটা ভিটার পাশে আগে অনেক খেজুরগাছ ছিল। আমার স্বামী গাছি ছিলেন। তিনি একদিন অসুস্থ থাকায় আমার বড় ছেলেকে গাছে কলস বাঁধতে পাঠালেন। তার বয়স তখন বারো-তেরো হবে। আমিও তার সঙ্গে গেলাম। ছেলে একের পর এক গাছে কলস বাঁধছে। আমি নিচে দাঁড়িয়ে দেখছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আর পাঁচ-ছয়টি গাছ বাকি। একটি সরু খেজুরগাছে ছেলে উঠছে, আমি তাকিয়ে আছি। হঠাৎ দেখি, যে গাছে ছেলে উঠছে, সে গাছের মাথায় সাদা কাপড় পরা একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার মাথা নেই। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম-বাবা! নেমে আয়! আর ওঠা লাগবে না। আমার চিৎকার শুনে সে নেমে এসে বলল, কী হয়েছে? আমি কিছু বলতে পারলাম না। দুজনে বাড়ি চলে আসি। পরে আমার ছেলে বলল, সে কিছু দেখেনি। কিন্তু আমি স্পষ্ট দেখেছি, সাদা কাপড় পরা গলাকাটা লোকটাকে।’
মতিউর রহমান নামের আরেক গ্রামবাসী বললেন, ‘অনেক রাত পর্যন্ত চলাফেরা করতাম। ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু একদিন রাত বারোটার দিকে ঘুরছি। গলাকাটা ভিটার কাছে কিছু বড় মরা গাছ ছিল। আমি ওই গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা কিছু ভাবছিলাম। হঠাৎ দেখি ইয়া বড় মানুষের আকৃতির মতো একটা কিছু। সে একটা গাছের ওপর পা মেলে বসে আছে। প্রথমে ভাবলাম, চোখের ভুল বা হয়তো আলোছোয়ার কারণে এমনটা মনে হচ্ছে। কিন্তুু চারিদিকে তাকিয়ে দেখি, কোনো আলোর উৎস নেই। দারুণ ভয় পেয়ে গেলাম। মানুষের মুখে শোনা গল্পগুলো মনে পড়ে যাওয়ায় ভয় বেড়ে দ্বিগুণ। তারপর দিলাম দৌড়। সেই থেকে আর রাতে ঘুরতে বের হই না, সন্ধার পরে তো ওই ভিটার দিকে ফিরেও তাকাই না।’
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে সুমন আহমেদ। গলাকাটা ভিটার সামনে দিয়েই বাড়িতে যেতে হয় তাকে। সে জানাল সাম্প্রতিক এক ঘটনা, একদিন রাতে সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছি। সঙ্গে কেউ নেই। একটু ভয়ে ভয়ে হাঁটছি। গলাকাটা ভিটার কাছে আসতেই ভয় আরো বেড়ে যায়। কিছু না দেখার ভান করে সামনে হাঁটতে থাকি। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ। মনে হলো, ওপর থেকে একটা কিছু ভেঙ্গে পড়ছে। তাকিয়ে দেখি, বিশাল এক গাছের মধ্যে কালো একটা কিছু বসে আছে। সে আমাকে ধরার জন্যই বারবার ডালটাকে নিচের দিকে নামাতে চাচ্ছে। এটা দেখে আর কে দাঁড়ায়! দিলাম দৌড়। এরপর কয়েক দিন অসুস্থ ছিলাম।’
এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘গলাকাটা ভিটা নিয়ে মানুষের নানা ভৌতিক গল্প শুনে আসছি। রাতে এটা-ওটা দেখে আর দিনে গল্প করে। আমি এ এলাকায় থাকলেও কখনো কিছু দেখিনি। আর আমার এসবে তেমন বিশ্বাস নেই। আমি মনে করি, এগুলো মনের ভুল ছাড়া কিছু নয়।’

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
