নড়াইলে বিলুপ্ত পথে গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প
নড়াইলে বিলুপ্ত পথে গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। এ সময় গ্রামীণ জনপদে বাঁশঝাড় ছিল না এমনটা কল্পনাও করা যেতো না। যেখানে গ্রাম সেখানে বাঁশঝাড় এমনটিই ছিল স্বাভাবিক। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় বেত বনের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ।
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, কিন্তু বর্তমানে জন জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। এক সময় গ্রামীণ জনপদে বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো বাঁশ ও বেতের হাজারো পণ্য সামগ্রী। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ কেটে গৃহিণীরা তৈরী করতেন হরেক রকম জিনিস। অনেকে এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। দরিদ্র পরিবারের অনেকের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এগুলো। কিন্তু আজ ক’টি গ্রামে এ হস্তশিল্পটি উপার্জনের পেশা হিসেবে বেঁচে আছে তা ভাবনার বিষয়।
এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন বা হচ্ছেন। আগে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসের কদর ছিল। চেয়ার, টেবিল, বইয়ের সেল্ফ, মোড়া, কুলা, ঝুড়ি, ডোল, চাটাই থেকে শুরু করে এমনকি ড্রইং রুমের আসবাবপত্র তৈরিতেও বাঁশ ও বেত প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া মাছ ধরার পলো, হাঁস, মুরগীর খাঁচা, শিশুদের ঘুম পাড়ানোর দোলনা এখনো গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
একসময় নড়াইল জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণে এসব বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরী হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যেতো। এখন সচরাচর গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতেও বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি উন্নতমানের খোল, চাটাই, খালুই, ধামা, দোয়াড়, আড়ি, টোনা, আড়, হাপটা, মোড়া, বুকসেলফ চোখে পড়ে খুব কম। যেখানে তালপাতার হাত পাখারই কদর নেই, সেখানে অন্যগুলো তো পরের কথা। প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সুবিধা যেমন হাত পাখার চাহিদা কমিয়েছে তেমনি মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ আর বেত জাতীয় হস্তশিল্পের কদর। প্রকৃতপক্ষে বাঁশ বেতের স্থান অনেকটাই প্লাস্টিক সামগ্রী দখল করে নিয়েছে।
তাছাড়া এখন বাঁশ ও বেতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর দামও বেড়ে গেছে। ফলে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। সৌখিন মানুষ ঘরে বাঙালির ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য বাঁশ বেতের সামগ্রী বেশি দাম দিয়ে কিনলেও মূলত ব্যবহারকারীরা বেশি দাম দিতে চান না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা সমিতি থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা নিয়ে বাঁশ ও বেতজাত দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করলেও এতে তাদের খরচ পোষায় না। এর ফলে তারা অন্য পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী যারা তৈরি করছে তাদেরকে সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও’র সহায়তা করা অত্যন্ত জরুরী। বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতের সামগ্রীকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর পেছনের মানুষগুলোকে আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে তাদের পেশাকে বাঁচাতে হবে। প্রয়োজন হলে এদের বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় এসব সুন্দর বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাঁশ ও বেত শিল্পকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)