পেরুকে হারিয়ে ফাইনালে ব্রাজিল
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলকে ঠিক ‘ব্রাজিলের’ মত মনে হলো না। একক আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে পেরু। বরং পুরো দ্বিতীয়ার্ধে পেরুর আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিলো ব্রাজিলের রক্ষণভাগ। গোলরক্ষক এডারসন দৃঢ়তা দেখাতে না পারলে হয়তো বিদায়ই নিতে হতো ব্রাজিলকে।
আসলে দুর্ভাগ্য পেরুরই। একের পর এক আক্রমণ আর গোলে শট নিয়েও বল জড়াতে পারলো না ব্রাজিলের জালে। উল্টো প্রথমার্ধে করা একমাত্র গোল দিয়েই পেরুকে বিদায় করে টানা দ্বিতীয়বারের মত কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেলো স্বাগতিক ব্রাজিল।
সেই লুকাস পাকুয়েতার গোলেই জয় নিশ্চিত হলো সেলেসাওদের। কোয়ার্টার ফাইনালে চিলির বিপক্ষে যখন গোল পাচ্ছিল না ব্রাজিল, তখন এই লুকাস পাকুয়েতাই মাঠে নেমে গোল করে জেতালেন দলকে।
এবার গ্যাব্রিয়েল হেসুসের লাল কার্ড থাকার কারণে তিনি খেলতে পারছেন না সেমিফাইনালে। এ কারণে পাকুয়েতাকে দিয়েই সেমিফাইনালের একাদশ সাজান ব্রাজিলে কোচ তিতে।
সেই পাকুয়েতাই খুললেন পেরুর গোলের তালা খুললেন। ৩৪ মিনিটে নেইমারের অসাধারণ একটি পাস থেকে বাম পায়ের দুর্দান্ত শটে পেরুর জালে বল জড়িয়ে দেন লুকাস পাকুয়েতা। পেরুর বিপক্ষে এই এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে গেলো ব্রাজিল।
তবে প্রথমার্ধের স্কোরশিট দেখলে কোনোভাবেই ব্রাজিল কতটা প্রভাব বিস্তার করে খেলেছে তা বোঝা যাবে না। পেরুর গোলরক্ষক গ্যালাসে বারবার কঠিন দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে না গেলে গোল হতে পারতো আরো কয়েকটি।
খেলার ৬ষ্ঠ মিনিটের মাথায় রেনান লোদির ক্রস বিপদ ডেকে আনার আগেই মাঠের বাইরে বের করে দেন কোরজো। কর্ণার পেয়ে যায় ব্রাজিল। ৮ম মিনিটেই গোলের দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল। এ সময় লুকাস পাকুয়েতা বল বাড়িয়ে দেন রিচার্লিসনের দিকে। তিনি দুর্দান্ত এক ক্রস করেন নেইমারের দিকে। কিন্তু দারুণ সুযোগ পেয়েও নেইমার সেই বলটি পাঠিয়ে দেন মাঠের বাইরে।
১৩ মিনিটের মাথায় ফ্রি-কিক থেকে ক্যাসেমিরোর জোরালো শট সোজা চলে যায় পেরুর গোলরক্ষক গ্যালাসের কাছে। তিনি প্রতিহত করলে গোল বঞ্চিত হয় ব্রাজিল। ১৫ মিনিটের মাথায় রিচার্লিসনের কাছ থেকে বল পেয়ে গোলমুখে শট নেন এভার্টন। কিন্তু তার শট প্রতিহত করে দেন গালেসে।
১৯ মিনিটের মাথায় আরও একটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু পাকুয়েতা-নেইমার জুটির বার কয়েক চেষ্টার পরও পেরুর গোলরক্ষককে পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে।
৩৪তম মিনিটে এসে অবশেষে পেরুর গোলের তালা খুললেন নেইমার এবং পাকুয়েতা। বক্সের মধ্যে অন্তত দু’জনকে কাটালেন নেইমার। এরপর বল বাড়িয়ে দিলেন পাকুয়েতার দিকে। বাম পায়ের দারুন শটে সেটি তিনি জড়িয়ে দেন পেরুরর জালে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরিবর্তন আনেন পেরুর কোচ রিকার্ডো গ্যারেকা। ট্রাউকোক তুলে নিয়ে লোপেজকে মাঠে নামান তিনি। একই সময়ে রামোসের বদলে মাঠে নামেন গার্সিয়া। এই গার্সিয়া মাঠে নেমেই খেলার ধারা পরিবর্তন করে দেন। পুরো ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন যেন পেরুকে।
লোপেজ আর গার্সিয়া নতুন উদ্যমে আক্রমণ শুরু করে। যার ফলে ৪৯ মিনিটে অসাধারণ এক আক্রমণ সাজায় পেরু। ইয়োতুনের থ্রো বল ধরে বক্সের মধ্যে বল নিয়ে যান লাপাডুলা। তার দুর্দান্ত শট অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় রক্ষা করেন ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসন।
এরপরই যেন নতুন শক্তি পেয়ে যায় পেরু এবং নতুন উদ্যমে আক্রমণ শুরু করে। ৫২ মিনিটে ব্রাজিলের গোল লক্ষ্যে শট নেন গার্সিয়া। কিন্তু তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৩ মিনিটে গার্সিয়া এবং লাপাডুলার সম্মিলিত আক্রমণ ছিল ব্রাজিলের পোস্ট লক্ষ্যে। কিন্তু গার্সিয়ার শট চলে যায় ব্রাজিলের পোস্টের ওপর দিয়ে।
এ সময় ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও চোখে পড়ে। বল ধরে রাখতে না পারা, উল্টা-পাল্টা পাস দেয়া, সঠিক পাস না দেয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এরই মধ্যে একের পর এক ব্রাজিলের গোলমুখে প্রেসার তৈরি করতে থাকে পেরু।
৬১ মিনিটে ব্রাজিলকে আরও একটি গোল থেকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক এডারসন। গার্সিয়ার শট অসাধারণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন এডারসন। ফিরতি বলে যদিও লাপাডুলার চেষ্টা ছিল, কিন্তু সেটি ছিল অফসাইড।
৬৫ মিনিটে নেইমার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগটিকে হেলায় হারান পোস্টের ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দিয়ে। ৭১ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন করেন নেইমার এবং রিচার্লিসন। নেইমার বল পেয়ে ফাঁকায় বাড়িয়ে দেন। দৌড়ে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রন নেন রিচার্লিসন। কিন্তু বক্সের মধ্যে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন পেরুর এক ডিফেন্ডার। এরপর পেনাল্টির আবেদন করলে রেফারি তাতে কোনো সাড়া দেননি।
৮১ মিনিটে আরও একটি দারুণ সুযোগ পায় পেরু। কিন্তু ইয়োতুনের ক্রসে বল পেয়ে ক্যালেন্স যে শট নেন, সেটি চলে যায় ব্রাজিলের পোস্টের ওপর দিয়ে। একের পর এক পরিবর্তন করেও এ সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছিল না ব্রাজিল।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)