‘বঙ্গবন্ধুর ডাকা সেই খোকা আমি জাবেদ’

‘বঙ্গবন্ধুর ডাকা সেই খোকা আমি জাবেদ’
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ
রাজনীতি এটা একেবারে আমার শৈশবের পরতে পরতে। স্বাধীনতার সংগ্রাম আর বাবার (মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু) রাজনীতির বিচরণে আমি তো নৌকা ছাড়া কাউকে ভোট দিতে দেখিনি। স্বাধীনতার বিজয়ের প্রতীক নৌকা নিয়ে খেলে বেড়ে উঠি। জুপিটার হাউস ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধার সাহস আর প্রেরণার আশ্রয়স্থল। এখানে আসতো মুক্তিকামী মানুষগুলি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে। চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আমার চাচা (শহীদ বশরুজ্জামান চৌধুরী)। বাবার সাথে লালদীঘি মাঠে স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর কথাগুলো শোনার সৌভাগ্য হয়। স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে খোকা ডেকে আদর করেছিলেন। রক্তের সাথে রাজনীতি নেশাটা জড়িয়ে পড়ে, মনে হয় সেই থেকে। দেশ স্বাধীনতার পর বাবা পুরোদমে রাজনীতির মাঠে।
সাধারণ মানুষ আর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভাবতেন তিনি সব সময়। বাবার এ জিনিসটা আমরা না বুঝলেও আমাদের কড়া জবাবে তিনি বলতেন এটা (জাবেদ) তোমার দাদা থেকে পাওনা। তোমাকে ও তা করতে হবে। জীবিত বাবার সামনে হেঁসে উড়িয়ে দিলেও বাস্তবতা হলো বাবার কাছে আমি হেরে যাই। বাবার মৃত্যুর পর কিভাবে আমিও জড়িয়ে পড়ি সাধারণ মানুষ-এর গল্পের মিছিলে। রাজনীতি কর্মীদের ভালোবাসায় সেই চেয়ারে খুঁজে পায় বাবাকে।
রাজনীতিতে বাবার জনপ্রিয়তার জয় বাংলার অসংখ্য কর্মী সৃষ্টি। বিপরীতে রাজনীতির মাঠে ঘরে-বাইরে তৈরি হয় নানা ষড়যন্ত্র। চট্টগ্রামে স্বাধীনতার পক্ষের শক্ত খুঁটি আমার বাবাকে সরানো পরিকল্পনা করে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ১৯৯৩ সালে বিএনপি সরকার ষড়যন্ত্রম‚লক মামলায় জড়িয়ে বাবাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। তখন আমি সদ্য ব্যবসাতে পা রাখি। কষ্ট না থাকলেও টেনশন আমাদের ঘিরে ধরেছিলো। আল্লাহ রহমতের ছায়া ছিল। বাবার তৃণম‚ল মাঠের কর্মীদের সাহসী ¯েøাগান আর পাশে দাঁড়ানোর কারণে রাজনীতির মাঠে আমি চষে বেড়াই। জয় বাংলা ¯েøাগানকারীদের মিছিলে আমার রাজনীতি যাত্রা। তরুণ ব্যবসা থেকে বাবার রাজনীতির হালধরি। আগে পর্দার আড়ালে থাকলেও দলের প্রয়োজনে নৌকার পাশে দাঁড়ায়।
তখন আমার মহান নেত্রী আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে তাঁর মিন্টু রোডের বাসায় ডেকে বলেন- ৎজাবেদ তুমি প্রস্তত হও আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য। তখন আমি প্রস্তুত ছিলাম না। আমি তাহাকে ফুফি ডাকতাম। এটাই আমার প্রথম সক্রিয় রাজনীতির প্রেরণা। নেত্রী জননেতা আমাদের পরিবার আওয়ামী লীগের জন্য কি। এখান থেকে আমার শুরু রাজনীতির হাতেখড়ি। তারপর বিরোধী দলীয় যাত্রা শুরু। বাবার সংসদীয় আসন আনোয়ারা ও তৎকালীন পশ্চিম পটিয়া (বর্তমান কর্ণফুলী উপজেলা) আনোয়ারা কর্ণফুলীর মাঠে-ময়দানে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করি। ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রæয়ারি বিএনপি’র একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধ করি। তত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলনে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করি। বাবার মতো রাজনীতিবিদ নয়, তবে তার শুন্যতা পূরণের চেষ্টা কমতি ছিল না। তার ফসল ১৯৯১ সালে দল ক্ষমতায় আসেন।
বাবা রাজকীয় ভাবে দেশে ফিরে আসেন। ষড়যন্ত্রম‚লক মামলা থেকে রেহাই পেয়ে আবার রাজনীতির মাঠে। আমি ফিরে যায় পারিবারিক ব্যবসায়। সময় পেলে ব্যবসার ফাঁকে বাবাকে রাজনীতিতে সহযোগিতা করতাম। চেম্বার এর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দলের জন্য কাজ করেছি ভিন্ন ভাবে। বাবা থেকে রাজনীতি ভাবধারার শেখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বুঝতে দিতাম না। ধৈর্য আর সাহসিকতার প্রেরণার উৎসাহ ছিল আমার বাবা। আজকের সাফল্যে গল্পের তারই অতীত। বাবার হঠাৎ মৃত্যু। সিঙ্গাপুর থেকে বাবা আর ফিরবেনা তা ভাবতে পারেনি। অসুস্থতার সময় বাবার সাথে পারিবারিক কথার বাইরে রাজনীতির কথা উঠলে তিনি নেত্রীর (মাননীয় প্রানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার) কথা বলতেন। পরামর্শ দিতেন তাঁর অবর্তমানে নেত্রীর কথামতো চলার এবং তাঁর পাশে থাকার।
দীর্ঘদিন আমি সক্রিয় রাজনীতির বাইরে থাকায় সত্যি বলতে রাজনীতির প্রতি কিছুটা আগ্রহ কমছিলো। বাবার মৃত্যুর পর তাঁর জানাযা মানুষের ঢল আর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চোখের জল রাজনীতিকে না বলার উপায় ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯ বছর পর আমাকে পুনরায় ডেকে বললো জাবেদ তুমি রাজনীতি করো। তোমার বাবার (বাবু ভাইয়ের) অসমাপ্ত কাজ করতে হবে। উনার স্বপ্ন আমি তোমাকে দিয়ে বাস্তবায়ন করবো। বাবাকে হারানোর কয়েক মাসের মাথায় উপ-নির্বাচনে এমপি তারপর নেত্রী ডেকে আমাকে রাজনীতির স্বীকৃতি দিলো। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত করে।
এক বছরেই আমার সততা ও প্রজ্ঞাকে তিনি নজর রাখেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। মমতাময়ী ও দায়িত্বশীল নেত্রী হিসেবে আমাকে ম‚ল্যায়ন স্বরূপ মনোনীত করেন ভ‚মিপ্রতিমন্ত্রী। আমি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমি প্রায় সময় একটা কথা বলি আমার দুটো চোখ একটা আনোয়ারা অন্যটা কর্ণফুলী উপজেলা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে আলাদা করে দেখিনি। আমার বাবার স্বপ্ন ও অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করায় আমার লক্ষ্য ছিল। এক্ষেত্রে ত্রিমুখী শাসনে পিছিয়ে ছিলেন কর্ণফুলী। বাবার স্বপ্ন ছিল এটাকে আলাদা উপজেলা করা। শেষটা করতে পারেনি। নেত্রী আমাকে দিয়ে করালেন। সবাই বললো কর্ণফুলীকে উপজেলা করা অসম্ভব। কিন্তু নেত্রী আমাকে দিয়ে বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করালেন।
আগামী ১০ বৎসর কর্ণফুলীর চেহারা বদলে যাবে। আমার বাবা জাতীয় রাজনীতিবিদ হলে আনোয়ারা তার শেখড়। বিলাসী জীবন চাইলে করতে পারতো। কিন্তু দুঃখী মানুষের পাশে থেকে এলাকায় উন্নয়নে তার চিন্তা। বাবার অসমাপ্ত কাজ আনোয়ারা মডেল উপশহর করবো। ইতোমধ্যে তার দৃশ্যমান হচ্ছে এখানে বিনিয়োগ হচ্ছে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, কর্ণফুলী ট্যানেল, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র এখানে গড়ে উঠবে। আনোয়ারা বাসীর দুঃখ নামে খ্যাত উপক‚লীয় বাধের জন্য ২৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় আনোয়ারা কর্ণফুলী একদিন দেশের সেরা অর্থনৈতিক জোন হবে। আমার সততা আর কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম বৃথা যাবেনা। এটা আমার বিশ্বাস।আমার বাবার ধারাবাহিকতায় উন্নয়নের রোল মডেল হবে আমার এলাকা। সৃজনশীল রাজনীতিতে এগিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত।
লেখক:
সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এমপি
ভূমিমন্ত্রী,
ভূমি মন্ত্রণালয়-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
অনুলিখন; মুহাম্মদ সেলিম হক।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
