বন্ধুদের ধার দেওয়া টাকা ফেরত পেতে হালখাতা
ইউএনবি : সাধারণত সারাবছর বেচাকেনার পর বছর শেষে বাকি টাকা তুলতে হালখাতার আয়োজন করে থাকে ছোট-বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকদের হালখাতার চিঠি দিয়ে অনুষ্ঠানের দিন-তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে কুড়িগ্রামে ঘটেছে এক ব্যতিক্রম ঘটনা। পাওনা টাকা ফিরে পেতে আব্দুল আউয়াল নামে এক স্কুল শিক্ষক হালখাতার আয়োজন করেছেন।
তিনি কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় এমএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পাওনা টাকা ফিরে পেতে দেনাদারদের কাছে হালখাতার চিঠি পাঠান আউয়াল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে আন্ধারীঝাড় বাজারে আন্ধারীঝাড় বাজারের সিঙ্গাড়া হটস্পট নামে একটি দোকানে আয়োজন করা হয় এই হালখাতা। এ উপলক্ষে রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয় দোকানটি। ছিল চেয়ার-টেবিল, টাকার বাক্সের সামনে সাঁটানো হয় শুভ হালখাতার ব্যানার।
বিভিন্ন সময় বন্ধু ও পরিচিতজনেরা বিপদে পড়ে চাইলে টাকা ধার দিয়েছিলেন আব্দুল আউয়াল। এভাবে ৩৯ জনকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধার দিয়ে ফেলেন তিনি। তবে দীর্ঘ সময়েও এসব টাকা ফেরত না পাওয়ায় তিনি বিপাকে পড়েন। এরপর তিনি পাওনা টাকা ফিরে পেতে হালখাতার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এই আয়োজনের মাধ্যমে মাত্র দেড় লাখ টাকা তুলতে পেরেছেন তিনি। যারা টাকা ফেরত দিয়েছেন, তাদের হাতে বিরিয়ানির প্যাকেটও তুলে দিয়েছেন আবদুল আউয়াল।
হালখাতা অনুষ্ঠানে দেনাদারদের অনেকে টাকা ফেরত দেন। আর আবদুল আউয়াল টাকা গুনে নিয়ে খাতায় তালিকা করে তাদের হাতে তুলে দেন বিরিয়ানির প্যাকেট।
এদিকে, টাকা যারা ধার নিয়েছিলেন তারা বাদেও পুরো বিষয় দেখতে ভিড় করেন স্থানীয়রা। খোঁজ নেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা।
হালখাতায় টাকা পরিশোধ করতে আসা সোলাইমান ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, “বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক আউয়ালের কাছে ৩ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছিলাম। হালখাতার চিঠি পেয়ে প্রথমে হতভম্ব হলেও আজ হালখাতা করলাম। বিরিয়ানি খেয়ে ধারের টাকা পরিশোধ করেছি।”
জব্বার মিয়া নামে আরেকজন বলেন, “সাড়ে ৬ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম কয়েক মাস আগে। আজ হালখাতায় পরিশোধ করলাম। বিষয়টা ভালো লেগেছে। এতে ঋণমুক্ত হলাম।”
আন্ধারীঝাড় এমএএম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ারুল হক বলেন, “আউয়ালের মন অনেক বড়। তিনি বন্ধু-বান্ধবদের টাকা ধার দিয়ে আনন্দ পান। সেই টাকা তোলার জন্য আজ হালখাতার আয়োজন করেছেন। বিষয়টি নেগেটিভলি না নিয়ে পজিটিভলি নেওয়া দরকার। কারণ, ধার নিয়ে মানুষ এখন দিতে চায় না। সেটা তোলার জন্য এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় তাকে ধন্যবাদ।”
হালখাতার আয়োজক আব্দুল আউয়াল বলেন, “দীর্ঘদিন যাবত ধরে ধার দেওয়া টাকা তোলার জন্য হালখাতার আয়োজন করেছি। হালখাতার চিঠি পেয়েই অনেকে সঙ্গে সঙ্গেই টাকা পরিশোধ করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “শুক্রবার হালখাতার দিন অনেকে টাকা পরিশোধ করেছে। আবার অনেকে আসেনি। ৩৯ জনকে চিঠি দিয়েছিলাম। এদের মধ্যে ১৯ জন এসেছেন। মোট দেড় লাখ টাকা উঠেছে। এখনও দুই লাখের মতো টাকা তুলতে পারি নাই।”
আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাবেদ আলী মন্ডল হালখাতার আয়োজন দেখতে এসে বলেন, “ধার বা হাওলাত সমাজের একটি চিরাচরিত নিয়ম। মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন এই নিয়ম থাকবে। তবে হাওলাত নেওয়া টাকা ফেরত না দেওয়ার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আজকে হাওলাতের টাকা তুলতে হালখাতা করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশে এর আগে হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি অবাক করার মতো। তবে হাওলাতের টাকা সময়মতো ফেরত দেওয়া উচিত।”
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)