বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে ফেইক ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ মমতার
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার মাঝেই বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভাষণে আরও একবার উঠে এলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রসঙ্গ।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিধানসভার অধিবেশনে তিনি যেমন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তেমনই ‘একটা রাজনৈতিক দলের’ বিরুদ্ধে ফেক ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন।
নাম প্রকাশ না করে তিনি উল্লেখ করেছেন, দুই দেশের সম্পর্কে বর্তমানে যে টানাপোড়েন চলছে সেই পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে চাইছে ওই দল। তার কথায়, অনেক ফেক ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দল উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে।
বিধানসভায় তার ভাষণে সম্প্রীতি ও শান্তির পরিবেশ বজায় রাখার এবং প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সংযত থাকার অনুরোধও করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের একটা ভিডিও প্রকাশ্যে আসে যেখানে কিছু ব্যক্তিকে ‘কলকাতা দখলের’ ডাক দিতে দেখা গিয়েছিল। নিজেদের সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলে জানিয়েছিলেন তারা।
একই সঙ্গে অন্য একটা ভিডিওতে বাংলাদেশের এক প্রবীণ নেতাকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা দখলের কথাও বলতে শোনা গিয়েছিল। যারা এই মন্তব্য করেছেন তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মমতা।
গত সপ্তাহে বিধানসভার অধিবেশনে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। কেন্দ্র সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন যাতে কেন্দ্রের তরফে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশে শান্তি সেনা পাঠানোর আর্জি জানানো হয়। তার সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল বাংলাদেশ।
দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে তার দলের নেতাসহ সবাইকে শান্ত থাকার এবং উস্কানিমূলক মন্তব্য করা থেকে দূরে থাকার বার্তা দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। সীমান্তবর্তী রাজ্যের শান্তি যাতে কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্যই এই আহ্বান।
বিধানসভায় তার বক্তব্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে হামলা হচ্ছে, তা দুঃখজনক।
একই সঙ্গে সমস্ত বিধায়কের উদ্দেশে বলেছেন, কেউ উস্কানিমূলক বক্তৃতা দেবেন না।
তার কথায়, হিন্দু, মুসলিম, শিখ বা খ্রিস্টানরা দাঙ্গা শুরু করে না। সমাজবিরোধীরা দাঙ্গা শুরু করে। আমাদের এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত নয় যাতে বাংলায় খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমি খুশি যে এখানকার হিন্দু এবং সংখ্যালঘু উভয় সম্প্রদায়ই বাংলাদেশে অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। এটা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ স্বভাবের পরিচয় দেয়।
সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবাদ জানিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি তাদের নিষেধ করেছি। অনেকে এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন। তারা আরেকটা দাঙ্গা শুরু করবে। আমরা দাঙ্গা চাই না, শান্তি চাই। হিন্দু-মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টানদের রক্ত একই।
এরপরই কারও নাম না করে তিনি বলেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি। অনেক ফেইক (ভুয়া) ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দল ইন্ধন দেওয়ার চেষ্টা করছে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষকেই এই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, কিছু ক্ষেত্রে সেই বিষয়কে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, যারা এটা নিয়ে রাজনীতি করার কথা ভাবছেন, তাদের মনে রাখা উচিত, এতে আপনার রাজ্যেরও ক্ষতি হবে। ওখানে (বাংলাদেশে) থাকা বন্ধুদেরও ক্ষতি হবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)