রঙিন মাছ চাষ করে ভাগ্য বদলেছে সাতক্ষীরার সাইফুল্লাহ গাজীর
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা থেকে রঙিন মাছের চাষ শুরু। হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। মাত্র ছয়শত বিশ টাকা পুঁজিতে ছয় জোড়া রঙিন মাছ চাষ করে হয়েছেন কোটিপতি। গাড়ি, বাড়ি, পুকুর কি নেই এই উদ্যোক্তার।
মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরোনো ছেলিটি ছিলো হিসাবে পটু। তাইতো নিজের ভাগ্য নিজের হাতেই গড়তে চেয়েছিলেন। ভাগ্যবিড়ম্বনায় কাজের সন্ধ্যানে চলে যান ভারতে। কাজ নেন টেক্সাটাইল মিলে। কাজের ফাঁকে একদিন গ্রাম এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ে রঙিন মাছের। খুঁজে পান সফল হওয়ার মূল উপাদান। রঙিন মাছ তাকে টেনে নেয় গভীর ভালোবাসায়, এটাই হবে আমার সেই ব্যতিক্রম কাজ।
বলছিলাম সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়ার ব্রজবাকসা গ্রামের সাইফুল্লাহ গাজীর কথা। হার না মানা সাইফুল্লাহ গাজী কাজের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতে।
রঙিন মাছ চাষের গল্পটা এতটাও সহজ ছিলোনা। জানা ছিলো না চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে। নানা চড়াই উৎরাই দুই বছরের অধিক সময় পার করে অসাধ্য সাধন করলেন। রঙিন মাছের চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে ফেললেন তিনি।
অনেক আশা বুকে নিয়ে ফিরলেন মায়ের কোলে বাংলাদেশে। জানালেন পরিবারকে রঙিন মাছ চাষের কথা। ভাগ্য সহায় হলো না। পরিবার থেকে বিদ্রুপ করলো সবাই। আবার চলে গেলেন ঢাকার গার্মেন্টেসে। কাজ নিলেন কাটিং হেলপারের। কাজের ফাঁকে বের হতেন শহরে। শহরের দোকানে সুন্দর কাঁচের ভিতরে নিজের দীর্ঘদিনের লালিত স¦প্ন রঙিন মাছের দেখা পান তিনি। আবার মনের ভিতরে নতুন আশার সঞ্চার হয়।
আগ্রহ নিয়ে সাইফুল্লাহ গাজী দোকানীর সাথে কথা বলেন, জানতে পারেন রঙিন মাছের বাজার সম্পর্কে। দোকানদারের সহযোগীতায় ছয়শত বিশ টাকা দিয়ে মাত্র ছয়জোড়া রঙিন মাছ নিয়ে ফিরে আসেন গ্রামে।
আধুনিক কোন উপকরণ না থাকায় চাড়িতে শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। তারপর ডিম ফুটে, বাচ্চা। রাখার কোন জায়গা নেই। আবার নতুন ভাবনা! পুকুরে চাষ করলে কেমন হয়? সেই ২০০৪ সাল পুকুরে রঙিন মাছের স্বপ্ন বুনলেন সাইফুল্লাহ গাজী। এখন তার সবমিলিয়ে ২০ টির বেশি পুকুর ও ১২৮ টির অধিক হাউজ আছে। তিনি সর্বপ্রথম পুকুরে রঙিন মাছের চাষ শুরু করে সমগ্র বাংলাদেশকে জানালেন। তারপর কয়েকবার পুঁজি হারালেও একটা সময় সাফল্য ধরা দিলো তার হাতে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাইফুল্লাহ গাজী জানান “একবার না পারিলে দেখ শতবার” আমি কতবার দেখেছি যে, হাল ছেড়ে দিবো? বিশবার দেখলেও সামনে এখনও আঁশিবার বাকি আছে। আমি চেষ্টা করেছি সফল হয়েছি। বাংলাদেশের বেকার যুবকদের জন্য সাইফুল্লাহ গাজী আজ রোল মডেল। তিনি আরো বলেন রঙিন মাছ চাষ করতে হবে এমন নয়। বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের জন্য এক উর্বর ভূমি এখানে যে কোন বিষয় নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবেই।
সাইফুল্লাহ গাজীর হাত ধরে আজ সারা বাংলাদেশে উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে প্রায় তেত্রিশ শত। কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে ২০-২৫ জন বেকার যুবকের। সাইফুল্লাহ গাজীর খামারে এখন গোল্ডফিস, গাপ্পি, কৈকার্প, মলি প্ল্যাট, সোর্ডটেল, অ্যানজেল, ফাইটার, গোরামীসহ ৩২ প্রজাতির রঙিন মাছ আছে।
মৎস্য অফিসের প্রসংসা করে সাইফুল্লাহ গাজী বলেন, মৎস্য অফিসার এখানে আসেন মনোযোগ সহকারে সবকিছু দেখেন এবং পরামর্শ দেন। খামার সম্প্রসারণের জন্য আমাকে প্রণোদানাও প্রদান করেছেন।
খামারে কাজ করেন আব্দুল আহাদ বলেন, ভোর সকালে এখানে কাজে আসি আর সন্ধ্যা ৬ টায় চলে যায়। মাসে দশ হাজার টাকা মাইনে। এখানে রঙিন মাছের সাথে কাজ করতে খুব ভালো লাগে।
কর্মচারী রেহান জানান, ভোর সকালে এসে মাছের খাবার দেয়। পুকুরে নামি, মাছের কোন রোগব্যাধি আছে কি সেটা খেয়াল রাখি। রঙিন মাছ দেখতে ও বেশ ভালো লাগে।
রঙিন মাছের আর এক উদ্যোক্তা ইয়ামিন হোসেন জানান, আমি এখানে এসে সাইফুল্লাহ মামার কাছ থেকে কাজ শিখে মাছ চাষ করে লেখাপড়ার পাশাপাশি এই রঙিন মাছ বিক্রয় করে বেশ লাভবার হচ্ছি।
সাইফুল্লাহ গাজী রঙিন মাছের সম্ভবনার বিষয়ে জানান, আন্ত-র্জাতিক বাজারে রঙিন মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকারিভাবে আরোও আধুনিক প্রশিক্ষন প্রদান করে যদি কোয়ালিটি ফুল মাছ তৈরি করা যায় তাহলে দেশের বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আন্ত-র্জাাতিক বাজারে এই মাছ পাঠানো যায় তবে এখাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)