লকডাউনের আগে পেঁয়াজের দাম ফিরেছে
লকডাউন আতঙ্কে রাজধানীর বাসিন্দাদের অতিরিক্ত কেনাকাটার কারণে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। তবে বিধিনিষেদের মধ্যে বাজারে ক্রেতাদের চাপ কমায় দু’দফায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে আবার আগের দামে ফিরে গেছে।
পেঁয়াজের দামে এমন উত্থান-পতন লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন খুচরা ও পাইকারি উভয় শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দাম বাড়ার পর পেঁয়াজের বাজার এভাবে হুট করে পড়ে যাবে, তা কেউ ধারণাও করতে পারেননি। তাদের ধারণা ছিল- পেঁয়াজের দাম আরও একটু বাড়তে পারে। এ কারণে দাম বাড়ার শুরুতে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বাড়তি পরিমাণে পেঁয়াজ কিনে রাখেন।
ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন- বাজারে এখন ভালো মানের হালি পেঁয়াজে ভরপুর। এই পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। দাম কমে যাওয়ার পরও এই ভালো মানের পেঁয়াজ এখন ক্রেতারা কিনছেন না। অথচ কিছুদিন আগে যখন দাম বেড়ে যায়, তখন এক শ্রেণির ক্রেতা পেঁয়াজ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের খুচরা পর্যায়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারিতে পেঁয়াজ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯-৩০ টাকা কেজি।
গত ৫ এপ্রিল সরকার মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে প্রথম দফায় এক সপ্তাহের লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপের আগে এই দামে বিক্রি হচ্ছিল পেঁয়াজ।
তবে এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা আসার পর রাজধানীর বাসিন্দারা বাড়তি কেনাকাটা শুরু করলে পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকায় উঠে যায়। এরপর কিছুটা দাম কমলেও দ্বিতীয় দফায় সরকার এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলে আবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি ৪০-৪৫ টাকায় উঠে। এ পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে পেঁয়াজের দাম আবার কমা শুরু হয়েছে।
মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, রোজার আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখে ৩৬ টাকা কেজি দরে ২০ মণ পেঁয়াজ কিনেছিলাম। সেই পেঁয়াজের অর্ধেকেও বিক্রি হয়নি। এখন ৩৬ টাকা কেজি কেনা পেঁয়াজ ৩৫ টাকা বিক্রি করছি। এক পেঁয়াজেই এ বছর একাধিকবার ধরা খেলাম।
তিনি বলেন, আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে আছে। লকডাউনের আগে বিক্রি ভালো ছিল। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে বিক্রি কমে গেছে। অথচ এখন রোজা চলছে। রোজায় পেঁয়াজের চাহিদা অন্য সময়ে তুলনায় অনেক বেশি থাকে। এই করোনা মহামারির মধ্যে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, কিছুদিন আগে ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনতে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। এতে দাম আরও বেড়ে ৪৫ টাকা হয়ে যায়। এখন পেঁয়াজের কেজি ৩৫ টাকা হয়েছে। কিন্তু আগের সেই ক্রেতা নেই। আসলে মানুষের আচরণ বোঝা বড় দায়। যখন দাম বাড়ে তখন কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, আর দাম কমলে খবর থাকে না।
তিনি বলেন, এবার পেঁয়াজের দামটা বেশি ওঠা-নামা করছে। এতে আমাদের মতো বেশিরভাগ খুচরা ব্যবসায়ী লোকসান গুনছে। কেউ কেউ কেনা দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে মূলধন তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিক্রির যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে সামনে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যেতে পারে।
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম আর শুনেন না। পেঁয়াজ নিয়ে খুব বিপাকে আছি। ৩০ টাকা কেজি কেনা পেঁয়াজ এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২৯-৩০ টাকা। পেঁয়াজের দাম যে এভাবে হুট করে পড়ে যাবে, তা ধারণাও করতে পারিনি।
তিনি বলেন, সবাই মনে করে পেঁয়াজের ব্যবসায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনেক লাভ করে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কারওয়ান বাজারের অনেক ব্যবসায়ী গত বছর পেঁয়াজে লোকসান গুনে গ্রামে ফিরে গেছে। এবারও পেঁয়াজের ব্যবসায় অনেকে ধরা খাবে বলে মনে হচ্ছে।
শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে তাতে কী হয়েছে। ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছে, সরকারের তো কিছু হয়নি। মানুষ কম দামে পেঁয়াজ কিনে খেতে পারছে। আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা মরলে কার কী যায়-আসে।
তিনি বলেন, আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে সাতদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। কেউ কোনো খবর নেইনি। সবাই মনে করে শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা অনেক লাভ করে। কিন্তু ৩২ টাকা কেজি দরে কেনা পেঁয়াজ এখন যে আমরা ২৯-৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছে, এটা কেউ দেখে না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)