সাতক্ষীরায় ঋশিল্পীর সমাবেশে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সামাজিক ব্রিগেড গড়ে তোলার আহবান
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বাল্যবিবাহ মানেই প্রতিভার পতন। বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক সমস্যা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ একটি সামাজিক আন্দোলন। তাই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামাজিক ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে। তরুণ সমাজই পারে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে। তাই তরুণ সমাজকে সমাজের এই বিষফেঁড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু প্রশাসন কিংবা বেসরকারি সংস্থা দিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন বিষয়। সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। সবার আগে প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে ছাত্রীদের সচেতন করতে হবে।বাল্যবিবাহ মুচলেকা কিংবা জরিমানা করে বন্ধ করা সম্ভব না। বন্ধ করার পর অভিভাবকরা গোপনে অন্য স্থানে নিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। জনসচেতনতা ছাড়া বাল্যবিবাহ নির্মূল করা সম্ভব নয়। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন কিন্তু মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হলে পরিবারের সদস্যদের ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দারিদ্র্য কখনও বাল্যবিবাহের কারণ হতে পারে না। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে পরিবার ঘুরে দাঁড়ালেই ঘুরে দাঁড়াবে সমাজ।
প্রজেট্টো উত্তমো-ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল অনলুস-এর উদ্যোগে ‘আমার সোনার পরিবার’ এর আয়োজনে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বার্ষিক সমাবেশ দেশি-বিদেশি অতিথিগণ এ মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে সাতক্ষীরার বিনেরপোতাস্থ ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল অনলুস-এর অডিটোরিয়ামে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মোমবাতি প্রোজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন অতিথিগণ।
অনুষ্ঠানে প্রজেট্টো উত্তমো-ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল অনলুস-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বক্তারা আরও বলেন, বাল্যবিবাহ বন্ধের পর যাতে ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে দিতে না পারে, এ জন্য তদারকিরও প্রয়োজন। অধিকাংশ ইউনিয়নে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে যে কমিটি রয়েছে, ওই কমিটিও গতিশীল নয়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের লোকবল খুবই কম। যানবাহন নেই। বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য নেই কোনো বরাদ্দ। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাল্যবিবাহ বন্ধে সহযোগিতা করা তো দূরের কথা, তাঁরাও নানাভাবে বিয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গোপনে বা যেকোনো উপায়ে বিয়েগুলো আবার হয়ে যাচ্ছে। এখানেই নজরদারির বিষয়টি জরুরি। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার, বিশেষ করে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বন্ধ করা বাল্যবিবাহের ঘটনা পুনরায় ঘটলে তার দায় নিতে হবে। আর স্থানীয় পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কমিটিও আছে। কমিটিগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে তা জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করার দাবি জানান বক্তারা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ।
প্রজেট্টো উত্তমো-ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল অনলুস-এর প্রতিষ্ঠাতা ভিনসেনজো ফালকোনে (এনসো) এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইতালিয়ান অতিথি বন্ধু এগলে, প্রজেট্টো উত্তমো-ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল অনলুস-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সেলিমুল ইসলাম, কো-অর্ডিনেটর সৈয়দ মোহাম্মদ খাদিল, প্রোগ্রাম ম্যানেজার সনোজ কুমার বসু, কুশখালি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার, ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ এমাদুল ইসলাম, মাছখোলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী, পল্লী উন্নয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান,কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আজিজুল ইসলাম, বৈকারি ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, তালতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম, ধুলিহর আদর্শ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গৌতম মন্ডল ও জ্যোৎস্না আরা। সমাবেশে ঋশিল্পীর উপকারভোগী কয়েকশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)