বুধবার, মে ৮, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

পর্ব-১

সিয়াম, রামাদান ও কুরআন

সিয়াম, রামাদান ও কুরআন- পর্ব-১
***************************

* প্রভাত (সুবহে সাদিক) থেকে সূর্যাস্ত (মাগরিব) পর্যন্ত আল্লাহর এবাদত ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ইত্যাদি সকল সিয়াম বা রোযা ভঙ্গকারী কর্ম থেকে বিরত থাকা হল সিয়াম বা রোজা | আত্মার পরিশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নতি, মানবিক মমতা বোধের বিকাশ,তাকওয়া ও সততা অর্জনের জন্য সকল যুগের সকল বিশ্বাসী মানুষের অন্যতম প্রধান অবলম্ব হলো সিয়াম |

* রামাদানের সিয়াম ফরয ও ইসলামের রুকন| এছাড়া যথাসম্ভব বেশি অতিরিক্ত বা নফল সিয়াম পালনে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে |

* ফরয ও নফল সিয়ামের ফযীলতে রাসুল(স.) বলেন,আল্লাহ বলেন: ” আদম সন্তানের সকল কর্ম তার জন্য |একমাত্র ব্যতিক্রম হলো সিয়াম,তা শুধু আমারই জন্য এবং আমি তার প্রতিদান দিবো | সিয়াম হলো ঢাল | তোমাদের কেউ যে দিনে সিয়াম পালন করবে সেই দিনে সে অশ্লীল বাজে কথা বলবেনা ও চিল্লাচিল্লি,হৈ চৈ বা ঝগড়াঝাটি করবে না| যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে মারামারি করে তবে সে যেন বলে,আমি সিয়ামরত, আমি সিয়ামরত | মুহাম্মদের জীবন যাঁর হাতে তার শপথ, সিয়াম রত ব্যক্তির মুখের ক্ষুধা-জনিত গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের সুগন্ধির চেয়েও প্রিয় | সিয়াম পালনকারীর জন্য দুইটি আনন্দ রয়েছে যখন সে আনন্দিত হয়: (১) যখন সে ইফতার করে তখন সে তার ইফতারীর জন্য আনন্দিত হয় এবং (২) যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত করবে তখন সে তার সিয়ামের জন্য আনন্দিত হবে |”-বুখারী,আস-সহীহ ২/৬৭৮ |

* তিনি আরো বলেন: ” যুদ্ধে তোমাদের যেমন ঢাল থাকে,তেমনি জাহান্নামের আগুন থেকে ঢাল হলো সিয়াম | আর প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করা ভালো |”-ইবনু খুযাইমা, আস-সহীহ ৩/১৯৩ |

* প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম ছাড়াও যথাসম্ভব বেশি বেশি নফল সিয়াম পালনে উৎসাহ দিয়েছেন রাসুল (স.) কারণ সিয়াম একটি তুলনাবিহীন ইবাদাত | আবূ উমামা বলেন,” আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে একটি আমল শিখিয়ে দিন |

*তিনি বলেন,” তুমি সিয়াম পালন করবে, সিয়ামের মত আমল আর নেই | ” আবূ উমামা বলেন, আমি তিনবার তাঁকে এইরূপ অনুরোধ করলাম এবং তিনি তিনবারই একই উত্তর দিলেন” | এজন্য আবূ উমামা প্রায় ১২ মাসই সিয়াম পালন করতেন |”-নাসাঈ ৪/১৬৫ |

* নফল সিয়াম পালনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আশুরার দিন, আরাফাতের দিন এবং শাওয়াল মাসের ৬ দিন এছাড়া প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং প্রতি আরবি মাসের-১৩,১৪,ও ১৫- তারিখ নফল সিয়াম পালন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবাদাত |
* আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, মাসে কয়েক দিন সিয়াম পালন করা দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী |
* রমাদান মাসের ফরজ সিয়াম পালন ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ |*

*” রাসূল (স.) বলেলন:” রামাদান মাস যখন আগমন করে তখন জান্নাতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয়, এবং জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয় , এবং শয়তানদেরকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয় |”- বুখারী, আস-সহীহ ২/৬৭২|

*” হাদীস- তোমাদের নিকট রামাদান মাস এসেছে ৷এই মাসটি বরকত ময় | আল্লাহ তোমাদের উপর এই মাসের সিয়াম ফরয করেছেন | এই মাসে আসমানের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয় | এবং এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয় | এই মাসে দুর্বিনীত শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয় ৷ এই মাসে এমন একটি রাত আছে যা এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম | যে ব্যক্তি সেই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত সে একেবারেই বঞ্চিত হতভাগা |”-নাসাঈ,আস-সুনান ৪/১২৯ |

* সিয়াম ফরজ করার উদ্দেশ্যে সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন:

يٰٓـاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِکُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ
হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের উপর সিয়াম লিপিবদ্ধ(ফরয) করা হয়েছে, যেরূপভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর তা লিপিবদ্ধ(ফরয) করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো |- সূরা বাকারা:আয়াত-১৮৩ |
* আমরা দেখেছি, আল্লাহ বলেছেন যে, সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হবে | তাকওয়া অর্থ হলো হৃদয়ের মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে আত্মরক্ষার সার্বক্ষণিক অনুভূতি | যে কোনো কথা, কর্ম বা চিন্তার আগেই মনে হবে, এতে আল্লাহ খুশি না বেজার হবেন | যদি আল্লাহর অসন্তুষ্টির বিষয় হয় তবে কোনো অবস্থাতেই হৃদয় সে কাজ করতে দেবে না |

* কিন্তু পরিপূর্ণ তাকওয়া আমরা সিয়ামের মাধ্যমে অর্জন করতে পারছি না| একজন রোযাদার প্রচন্ড ক্ষুধা বা পিপাসায় কাতর হয়েও কোন অবস্থাতে পানাহার করতে রাজি হন না | নিজের ঘরের মধ্যে, একাকী, নির্জনে সকল মানুষের অজান্তে পিপাসা মেটানোর সুযোগ থাকলেও তিনি তা করেন না| কারণ তিনি জানেন তা করলে দুনিয়ার কেউ না জানলেও আল্লাহ জানবেন ও তিনি অসন্তুষ্ট হবেন | এ হলো তাকওয়ার প্রকাশ | কিন্তু এ ব্যক্তিই রোজা অবস্থায় বা অন্য সময়ে এর চেয়ে অনেক কম পিপাসায় বা প্রলোভনে সুদ-ঘুষ,মিথ্যা,গীবত, ভেজাল,ওযনে ফাঁকি,কর্মে ফাঁকি,অন্যের পাওনা না দেওয়া ও অন্যান্য কঠিনতম পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছেন | কেন এরূপ হচ্ছে ?

*” মহান আল্লাহ তাকওয়া অর্জনের জন্য আমাদেরকে দুটি বিষয় একত্রে দিয়েছেন: সিয়াম ও কুরআন | কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সিয়াম নিয়েছি এবং কুরআন বাদ দিয়েছি | এজন্য প্রকৃত ও পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন করতে পারছি না |
*” আল্লাহ বলেছেনঃ

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْٓ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَ بَيِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِۚ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَـصُمْهُ ؕ وَمَنْ کَانَ مَرِيْضًا اَوْ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيْدُ اللّٰهُ بِکُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيْدُ بِکُمُ الْعُسْرَ وَلِتُکْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰى مَا هَدٰٮكُمْ وَلَعَلَّکُمْ تَشْكُرُوْنَ
” রামাদান মাস | যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী ৷ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাসটি পাবে,তারা যেন এই মাসের সিয়াম পালন করে | আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গণনা পূরন করবে | অাল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান ,তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না -যাতে তোমরা গণনা পুরন কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর,যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর | -সূরা বাকারা:আয়াত-১৮৫|

* মহান আল্লাহর কুরআনের সাথে রমাদানের সিয়ামকে জড়িত করেছেন | হাদিস থেকে জানা যায় যে, দুভাবে এ সংশ্লিষ্টতা | প্রথমত রামাদানে রাতদিন কোরআন তেলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়তঃ রাতে কিয়ামুল্লাইল বা তারাবীহের সালাতে কুরআন পড়া বা শোনা |

* মুমিনের অন্যতম এবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা | আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ যিকর কুরআন তিলাওয়াত | কুরআন কারীমের একটি আয়াত শিক্ষা করা-১০০-রাক’আত নফল সালাতের চেয়েও উত্তম বলে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে | সারা বৎরই তিলাওয়াত করতে হবে | বিশেষত রমাদানে বেশি তিলাওয়াত করা রাসূল (স.)এর বিশেষ সুন্নাত, যাতে অতিরিক্ত সাওয়াব ও বরকত রয়েছে |

* আসুন আমরা সবাই যেন সিয়ামের মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারি৷ আমি ও আমার পরিবারের সকলেই যেন সঠিকভাবে সিয়াম পালন করতে পারে | মহান আল্লাহ আমাদেরকে সিয়াম পালনের মাধ্যমে তাঁর প্রিয় বান্দা হত্তয়ার তাওফীক দান করুন |

** পবিত্র মাহে রামাদানের অসিলায়- !
মহান আল্লাহ! প্রানঘাতি করোনা ভাইরাসের মহামারীর গযব থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন | এই দেশকে রক্ষা করুন |

*-দোয়ার মুহতাজ-*
মাও. জিয়াউল ইসলাম যুক্তিবাদী
কলারোয়া,সাতক্ষীরা|
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক।

একই রকম সংবাদ সমূহ

কলারোয়ার অপরূপ পুরাকীর্তি শ্যামসুন্দর মঠ-মন্দির, সংরক্ষণে নেই কার্যকরী উদ্যোগ

শেখ জিল্লু : প্রকৃতির সাথে পুরাকীর্তি যাদের সমানভাবে আকর্ষণ করে তাদের আসতেবিস্তারিত পড়ুন

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

  • বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত
  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • A visionary leader committed to serving the constituents of Satkhira-1
  • সবুজ হোসেন-এর কবিতা “কুয়াশা”
  • আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও আমাদের ভাবনা
  • বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে
  • বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প
  • আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদ
  • বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান
  • প্রধানমন্ত্রীর সফলতা ও জাতীয় উন্নয়ন
  • যশোর শিক্ষা বোর্ডের আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্রে পাঠ্যপুস্তক-বহির্ভূত প্রশ্ন!
  • ছিলো নদীবন্দর: কলারোয়ার চান্দুড়িয়ায় স্থলবন্দর চালুর দাবি