সেন্টমার্টিনে নেয়ার কথা বলে সরকারি বরাদ্দের বালু-সিমেন্ট গেলো মিয়ানমার!


কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর সিমেন্ট-বালু ভর্তি একটি ট্রলারসহ তিন মাঝিমাল্লার খোঁজ মিলছেনা। অভিযোগ উঠেছে সরকারি বরাদ্দের এসব মালামাল মিয়ানমারে পাচার করেছে একটি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারি চক্র।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রলারটি দ্বীপে পৌঁছেনি। এর আগে বুধবার বিকালে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা থেকে টিআর প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দের এসব সিমেন্ট, বালু ও টিন ছাড় নেওয়া হয়। ওই দিন বিকালে এগুলো ট্রলারে তুলে সেন্টমার্টিনে নেওয়ার কথা বললেও বৃহস্পতিবার সাড়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়নি বলে জানায় ট্রলার মালিক সমিতি।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, ‘সেন্টমার্টিন পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র’ সংস্কারে টিআর প্রকল্পে অধীনে বিএমসিএম সদস্য আশিকুর রহমানের নামে সোমবার টেকনাফ থেকে ৯ বান্ডিল টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টুন টাইলস, ৩০০ ফুট বালু ও ২০ ব্যাগ সিমেন্ট সেন্টমার্টিন নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ভুয়া অনুমতি পত্র বানিয়ে ২০ ব্যাগ সিমেন্টের বদলে ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট উল্লেখ করে যা প্রতারণা।
অভিযোগ উঠেছে, টেকনাফ বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমান, সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল, নুরুল ইসলাম, আবদুল মুনাফসহ একটি চোরাকারবারি চক্র মিলে সরকারি কাজের কথা বলে এসব মালামাল মিয়ানমারে পাচার করে দিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আশিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অনুমতিপত্র আমার নামে নেওয়া হয়েছে। তবে সেন্টমার্টিনের ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার তা রিসিভ করেন। পরে শুনেছি সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় আমি জড়িত নই। একটি চক্র আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার বলেন, ‘টিআর প্রকল্পের বরাদ্দের অনুমতিপত্র হাতে পেলেও আমরা মালামাল বুঝে নিইনি। একটি চক্র অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে বরাদ্দকৃত মালামাল তুলে মিয়ানমারে পাচার করেছেন।’
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বিকালে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখিয়ে মো. সারোয়ার হোসেনসহ তিন জন মাঝিমাল্লা ৪০০ বস্তা সিমেন্ট, ৯ বান্ডিল টিনসহ বরাদ্দের মালামাল ট্রলারে তোলেন। এসব মালামাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা কেফায়েত উল্লাহ। কেফায়েত সেন্টমার্টিনের চোরাকারবারি আক্তার কামালের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
কেফায়েত উল্লাহ বলেন, সেন্টমার্টিনের সাবেক ইউপি সদস্য আক্তার কামাল উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দের একটি অনুমতিপত্র আমাকে দিয়েছেন। সেটির বরাদ্দের মালামাল বুধবার বিকেলে ট্রলারে তোলা হয়। পরে বিকালে জানতে পেরেছি, মালামালগুলো মিয়ানমারে পাচার করা হয়েছে। এতে আমি জড়িত নই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, সেন্টমার্টিনের পর্যটন তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আশিকুর রহমানকে ২০ বস্তা সিমেন্টসহ কিছু মালামাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মালামালের অনুমতিপত্র জালিয়াতি করে ৪০০ বস্তা সিমেন্ট মিয়ানমারে পাচার করেছেন বলে খবর পেয়েছি। এ ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
