নড়াইলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সরকারি হাসপাতালের কোনোটিতে নেই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড
নড়াইলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তিনটি সরকারি হাসপাতালের কোনোটিতে নেই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড। নড়াইলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে জেলার তিনটি সরকারি হাসপাতালের কোনোটিতে নেই ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড। এ নিয়ে আতঙ্কে থাকেন পাশের অন্য রোগীরা।
উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, এদিকে জেলার পৌর এলাকার বাসিন্দারা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে নড়াইল পৌর এলাকার অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘরের দরজা-জানালা আটকিয়ে রেখেও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদাসীন।
নড়াইল সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আসাদ উজ জামান মুন্সী বলেন, নড়াইলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কারণ, খাল, ডোবা, ড্রেন ও বাসার আশপাশে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা। এতে মশা বেড়েছে।
তবে নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, পৌর এলাকায় মশকনিধনে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। প্রতিটি ড্রেনে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে মশকনিধনের কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি।
নড়াইলে রয়েছে তিনটি সরকারি হাসপাতাল। নড়াইল সদর হাসপাতাল এবং লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই তিন হাসপাতালেই মূলত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওই তিন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ মৌসুমে গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত ৩২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। প্রথম রোগী ভর্তি হন ৭ জুন নড়াইল সদর হাসপাতালে। জুনে ভর্তি হওয়া দুজনের মধ্যে আরেকজন লোহাগড়া হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই তিন হাসপাতালে জুলাইয়ে ৬ জন, আগস্টে ২৩, সেপ্টেম্বরে ৬৬, অক্টোবরে ১৫১ জন ভর্তি হয়েছেন। নভেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭৬ জন। বর্তমানে ১৬ জন রোগী তিন হাসপাতালে ভর্তি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ভর্তি হওয়া জেলার মোট ৩২৪ জন রোগীর মধ্যে ২০৫ জন নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। লোহাগড়া হাসপাতালে ১০২ ও কালিয়া হাসপাতালে ১৭ জন ভর্তি হন। সদর হাসপাতালে লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার রোগীরাও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
হাসপাতালের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, জেলার তিনটি পৌর এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। এ ছাড়া নড়াইল সদর উপজেলার দেবভোগ, নিরালী, বীড়গ্রাম, বাঁশভিটা, কলোড়া, বাগডাঙ্গা, ভদ্রবিলা ও বাঁশগ্রাম; লোহাগড়া উপজেলার রায়পাশা, মল্লিকপুর, শামুকখোলা, কুমড়ি, দিঘলিয়া, কোলা ও লাহুড়িয়া এবং কালিয়া উপজেলার সালামাবাদ গ্রামের ডেঙ্গু রোগী বেশি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বা অন্য শহর থেকে আক্রান্ত হয়ে এ জেলার অনেক বাসিন্দা এসব হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। নড়াইল সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে আলাদা কোনো ডেঙ্গু ওয়ার্ড নেই। দোতলায় সাধারণ মহিলা ওয়ার্ড ও নিচতলায় সাধারণ পুরুষ ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগী রাখা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে মশারি দেওয়া হলেও সব ডেঙ্গু রোগী মশারি টানাননি।
৭ বছর বয়সী সংগীতা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে সদর হাসপাতালে। তাকে রাখা হয়েছে দোতলায় সাধারণ মহিলা ওয়ার্ডের মাঝখানের একটি বিছানায়। মশারি টানানো নেই। পাশে বসে আছেন মা সুচিত্রা শিকদারসহ আরও একজন স্বজন। আশপাশের বিছানায় অন্য রোগীরা। সুচিত্রা জানান, গত শনিবার ভর্তি হয়েছে মেয়েটি। মশারি আছে কিন্তু টানানো হয়নি।
নড়াইল সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বারান্দায় বা মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগী বেশি, কক্ষ কম তাই আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা সম্ভব হয়নি। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)