নড়াইলে ‘প্রেমের ফাঁদে’ ফেলে একাধিকবার স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ
নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ‘নড়াইলের মেডিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস’ এ প্যাথলজিস্ট হিসেবে কর্মরত রিপন সরকার (৩০) বিরুদ্ধে।
একাধিকবার ধর্ষণে ৩ মাসের গর্ভবতী হয়ে পড়েছে ওই স্কুল ছাত্রী। নাবালিকা স্কুল ছাত্রী গর্ভবতী হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। ১০ম শ্রেণির ছাত্রী নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের বেনাহাটি গ্রামের বাটুল রায়ের মেয়ে।
অভিযোগ রয়েছে একই গ্রামের প্রতিবেশি বখাটে যুবক রিপন সরকার তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণ করে। অসহায় হতদরিদ্র বাটুল বার বার তার মেয়ের উপর নির্যাতনের ঘটনা বখাটে রিপন সরকারের বাবা সুশান্ত সরকারকে জানিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালী সুশান্তর সরকার ও তার ভাই গোবিন্দ সরকার ছেলের বিচার করা তো দুরের কথা বাটুলকে কোন পাত্তাই দেয়নি।
শুক্রবার (২৪ মার্চ) এ বিষয়ে একটি দল অনুসন্ধানে গেলে বেনাহাটি গ্রামের লোকজন জানায়, সুশান্ত সরকার ও গোবিন্দ সরকার খুবই দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে রিপন বখাটে হয়েছে। অল্প বয়সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে এলাকায় একাধিক নারী কেলেংকারি ঘটিয়েছে। অপকর্ম করে এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে বেশ কিছু দিন এলাকার বাইরে ছিল। সামান্য কিছু প্যাথলজিক্যাল কাজ শিখে নড়াইল শহরের মেডিল্যাবে প্যাথলজিস্ট হিসেবে কাজ করে। বাকি সময়ে এলাকার সুন্দরী মেয়েদের পিছনে লেগেতাদরে উত্যক্ত ও সর্বনাশ করাই তার কাজ। আর কাজে তাকে তার পরিবার হতে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করে। এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রিয়ন্তী গর্ভবতী হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে, বখাটে রিপন তাদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে নড়াইল মেডিল্যাব ডায়গনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে। এরপর তার বিভিন্ন রকম টেস্ট করে নিশ্চিত হয় সে ৩ মাসের গর্ভবতী। ওই মেডিল্যাবে বসে রিপন গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য প্রিয়ন্তীকে চাপ দেয়। প্রিয়ন্তী রাজী না হওয়ায় তার বড় ধরনের ক্ষতি করে দেয়ার হুমকি দেয়। এরপর ধুরন্ধর রিপন শারীরিক সুস্থতার ঔষধের কথা বলে প্রিয়ন্তীকে একটি ট্যাবলেট খেতে দেয়। ওই ট্যাবলেটটি তাৎক্ষনিক খাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে প্রিয়ন্তীর সন্দেহ হয়। সে ট্যাবলেট না খেয়ে কাছে রেখে অন্যদের দেখালে তারা জানায়, এটা সন্তান নষ্ট করা ট্যাবলেট। এ ঘটনার দু’দিন পর রিপন তার কাছে জানতে চায় সন্তান নষ্ট হয়েছে কি-না? সন্তান নষ্ট হয়নি শুনে তাকে অসম্মানসুচক কথা বলে ও মারধর করে। সন্তান নষ্ট না করলে তাকে বিয়ে করবে না বলে হুমকি দেয়। একই ভাবে রিপনের বাবা সুশান্ত সরকার ও কাকা গোবিন্দ সরকার বাড়ির উপর গিয়ে বাটুলকে ধমকিয়ে তার মেয়ের গর্বের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন। এতে করে প্রিয়ন্তীর গর্ভবতী হওয়ার ঘটনাটি অত্র এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। জানাজানি হয় সর্বমহলে। মিডিয়া কর্মীরা ভিড় জমায় প্রিয়ন্তীদের বাড়িতে। স্থানীয় গ্রাম্য মাতবররা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। রিপনের পরিবার থেকে কোন ভাবেই প্রিয়ন্তীকে মেনে নিতে রাজী নন। উল্টে তারা প্রিয়ন্তীর বিরূদ্ধে নানা বদনাম দিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রিয়ন্তীর নিকট জানতে চাইলে সে জানায় অনেক দিন ধরে রিপন তার পিছনে লেগেছে। বাড়ি এলাকায় সুযোগ না পেয়ে স্কুলে যাতায়াতের পথে তাকে বিরক্ত করতো। বিষয়টি গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মন্ডলকে একাধিকবার জানালেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
বাড়িতে জানালে তার বাবা বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কথা বলেছে রিপনের পরিবারের সাথে। কিন্তু রিপনের বাবা-মা ও কাকা এ বিষয়ে কোন পাত্তা দেয়নি। এরপর বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের ফলে প্রিয়ন্তী গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। এতো বড় ঘটনার পরও রিপনের পরিবার এ ব্যাপারে একেবারে চুপ রয়েছে। প্রিয়ন্তীর বাবা,মা ও প্রতিবেশিরা কোন কথা বলতে গেলে তারা কর্নপাত করছেন না। একাধিকবার গ্রামে সালিশ হলেও স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে প্রিয়ন্তীকে ঘরে তুলছে না বখাটে রিপন। প্রিয়ন্তী আরোও জানায় প্রথম দিকে সে রাজী না থাকলেও দৈহিক সম্পর্কের কারনে সে রিপনকে ভালোবেসে ফেলেছে। রিপন যদি তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলে না নেয়,তা-হলে সে তার পাপী মুখ কাউকে দেখাবে না।
প্রিয়ন্তীর বাবা বাটুল বলেন, প্রিয়ন্তীকে যদি তারা মেনে না নেয়, পরিবারের সবাই মিলে আত্নহত্যা ছাড়া আর কোন পথ নেই। এ ব্যাপারে রিপনের সাথে যোগযোগ করলে রিপন জানায় তাদের পরিবারের অভিভাবক তার কাকা গোবিন্দ সরকার। কাকা গোবিন্দ সরকারের কথার বাইরে গিয়ে তার কিছু করার নেই।
প্রিয়ন্তীকে গর্ভবতী করার ব্যাপারে সে জানায়, কোন ধর্ষণের বিষয় না। ভালোবাসার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন দৈহিক সম্পর্কের ফলে সে গর্ভবতী হয়েছে। রিপনের বাবা সুশান্ত সরকার বলেন,গ্রামের লোকজন সালিশ করে বলেছে ওই মেয়েকে ঘরে তুলে নিতে। কিন্তু মেয়েটি ভালো না। তার অনেক বদনাম। আরোও অনেক ছেলের সাথে তার খারাপ সম্পর্ক। তাছাড়া পরিবারের সবাই রাজি না। ছেলের কাকা রাজি না। এ কারনে তাকে মেনে নেয়া খুব সমস্যা হচ্ছে।
রিপনের কাকা গোবিন্দ সরকার বলেন,ওই মেয়ে আগে বলবে তার গর্বের সন্তানের বাবা আসলে কে? তারপর তাকে আনা হবে। সে গর্ভবতী হয়েছে এটা সত্য। তবে তার গর্ভের সন্তানের বাবা রিপন না,অন্য কেউ। কারণ ওই মেয়ে ভালো না। আগে তার গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় বের করা হবে এবং ওই সন্তানকে তার বাবার কাছে দিয়ে তারপর প্রিয়ন্তীকে এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নড়াইল মেডিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস এ কর্মরত রিপন সরকার বলেন, একটা ঘটনা ঘটে গেছে। আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করবো। আপনারা এই নিয়ে লেখা লেখি করেন না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)