সাতক্ষীরায় উন্নয়ন ভাবনা এবং স. ম আলাউদ্দীন শীর্ষক মতবিনিময় সভা
দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীনের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সাতক্ষীরায় উন্নয়ন ভাবনা এবং স. ম আলাউদ্দীন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৭ জুন) সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে জেলা নাগরিক কমিটির আয়োজনে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এডঃ আজাদ হোসেন বেলাল।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম।
অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন, জেলা জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রিয়াজ, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাগরিক নেতা শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, অবসরপ্রাপ্ত সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কবি কিশোরী মোহন সরকার, মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী মাধব দত্ত, দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পরভীন সেঁজুতি, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি কমরেড আবুল হোসেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী, জাসদ নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, জাপা নেতা আনোয়ার জাহিদ তপন, জেলা ভূমিহীন নেতা কাওসার আলী, জেএসডি নেতা আব্দুল জব্বার, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সামাদ, অ্যাডভোকেট মুনিরউদ্দীন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দিলু, অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট খগেন্দ্রনাথ, অ্যাডভোকেট একে আজাদ, অ্যাডভোকেট খায়রুল বদিউজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আক্তার হোসেন, ডাক্তার সুব্রত ঘোষ, মহিলা যুবলীগ নেত্রী আয়শা খাতুন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক গাজী শাহজাহান সিরাজ, সাংবাদিক আবুল কাশেম, এসএম শহীদুল ইসলাম, শেখ তানজির আহমেদ, মোঃ রবিউল ইসলাম, আহসানুর রহমান রাজীব, মোঃ আব্দুস সামাদ, আসাদুজ্জামান সরদার, শেখ আব্দুল আলিম, আব্দুর রহিম, মনসুর রহমান, জিএম আমিনুল হক, শামীম রেজা, আবু সাঈদ, জহুরুল কবির, সেলিম হোসেন, আলতাফ হোসেন বাবু, বায়েজিদ হোসেন, জেলা নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি মফিজুর রহমান, উন্নয়ন কর্মী শ্যামল বিশ্বাস, আবু জাফর সিদ্দিকী প্রমুখ।
‘সাতক্ষীরায় উন্নয়ন ভাবনা এবং স. ম আলাউদ্দীন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন উদীচী সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান।
সভা পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীনের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন ও সৃষ্টিশীল চিন্তার উল্লেখ করে বলেন, স. ম আলাউদ্দীন ছিলেন সাবেক এমএলএ। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। অন্যায় অসত্যের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেননি। তিনি ছিলেন সাহসী ও আপষহীন নেতা। আপষহীনতার কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে।
সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নে আজ থেকে ৩০ বছর আগে তিনি যে চিন্তা করেছিলেন তা আজ বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। সাতক্ষীরায় রেললাইন নির্মাণের দাবি, সাতক্ষীরায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, সাতক্ষীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা, ভোমরা স্থল বন্দর প্রতিষ্ঠা, চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠা, আধুনিক পদ্ধতিতে পরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি যে রূপরেখা ৩০ বছর আগে করেছিলেন সেটি এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। সাতক্ষীরায় একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। সাধারণ শিক্ষার পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষার বিকাশে স. ম আলাউদ্দীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজ। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ১৯জুন ঘাতকের গুলিতে নিহত হবার পর প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। অথচ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। সাতক্ষীরার কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স. ম আলাউদ্দীনের ভাবনা ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। তার সেই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে সাতক্ষীরাসহ পদ্মার এপারের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হতো না।
বক্তারা সাতক্ষীরায় নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের নকশা পরিবর্তন করে নির্মাণ করা হয়েছে। নদী ও খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত জেলার ২২ লক্ষ মানুষ। রেল লাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সরকার প্রায় এগারো শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু রেললাইন নির্মাণে কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সাতক্ষীরায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হলেও তা ঢেউ খেলানো অবস্থা। যে কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ভোমরা স্থল বন্দরে চলছে চরম নৈরাজ্য। সেখানে ব্যবসায়ীরা টিকতে পারছে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ভোমরা বন্দর থেকে ব্যবসায়ীরা চলে যাচ্ছে অন্যত্র। এর কারণ একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্র। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলেও যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না হওয়ায় সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সুফল পাচ্ছে না। পণ্য পরিবহনে অধিক খরচ হচ্ছে। রেললাইন নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের মানুষ পণ্য পরিবহনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে সুফল পাবে। সাতক্ষীরা পৌরসভার পানির বিল হঠাৎ চার গুণ বৃদ্ধি করায় বক্তারা কঠোর সমালোচনা করেন।
বক্তারা বলেন, স. ম আলাউদ্দীন বেঁচে থাকলে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়াতেন। আজ সেই রুখে দাঁড়ানোর মতো মানুষটির বড় অভাব। বক্তারা স. ম আলাউদ্দীনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ভেদাভেদ ভুলে সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ন্যায় ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করার আহ্বান জানান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)