বন্ধ সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা সব পোশাকশিল্প কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বন্ধ কারখানা সংশ্লিষ্ট এলাকার শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, শিল্প পুলিশদের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ।
এর আগে গত রোববার পোশাকশিল্প কারাখানায় কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে ১৩০টি পোশাক কারখানার সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এ ঘোষণার দুদিনের মাথায় সব কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত এলো।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করে পোশাকশ্রমিকরা। মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে। সেসব কারখানার কর্মকর্তাদের মারধর করে। কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এসব কারণে পোশাকশিল্প কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পোশাক কারখানার মালিকরা মূলত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে সব কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় বন্ধ সব কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রমিক, শ্রমিক নেতা, কারখানা মালিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, তবে মিরপুর এলাকার দু-একটি কারখানা এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। সেসব কারখানার সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি সেগুলোও আগামীকালের মধ্যে খুলে যাবে।
তবে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত হলেও এখনো সব ধরনের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকছে। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, আমরা পোশাক কারখানায় নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরিস্থিতি অনূকূলে এলে আবার নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিজিএমইএর পর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানায়গুলোও নতুন নিয়োগ বন্ধ করে। বিকেইএমইএ এক চিঠির মাধ্যমে তাদের সদস্য কারখানাগুলোকে জানিয়েছে, প্রয়োজন না হলে নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কারখানাগুলোর গেটে ‘নিয়াগ বন্ধ’ নোটিশটি দৃশ্যমান রাখার কথাও বলা হয়েছে।
সর্বনিম্ন মজুরি বিষয়ে আপত্তি ১১ শ্রমিক সংগঠনের:
পোশাকশ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ১১টি শ্রমিক সংগঠন। রোববার (১২ নভেম্বর) নিম্নতম মজুরি বোর্ডে লিখিত আপত্তি জানানো হয়। শ্রমিকনেত্রী তাসলিমা আখতারের নেতৃত্বে ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’র ব্যানারে তারা ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানান।
তাদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামোতে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ এবং ১ ও ২ নম্বর গ্রেড বাতিল করে শ্রমিকদের ঠকানো হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো গ্লোবাল লিভিং ওয়েজ কোয়ালিশনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ন্যূনতম মাসিক ২৫ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের কথা বলে। একই সঙ্গে ৫ ও ৬ নম্বর গ্রেডকে ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করার দাবি জানান তারা।
সম্প্রতি বেতন বাড়ানোর দাবিতে সাভার ও গাজীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। গত ৭ নভেম্বর সচিবালয়ে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। যেখানে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটি কার্যকর হবে আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে।
তবে সরকার নির্ধারিত এই বেতন কাঠামো প্রত্যাখ্যান করে ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় শ্রমিক সংগঠনগুলো। চলমান আন্দোলনে এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া বেশকিছু পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)