ভারতের হারে উল্লাস, বাংলাদেশিদের বুকিং বন্ধ আরো দুই হোটেলে
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের পর এবার রাজ্যের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের দুটি হোটেলের দরজাও বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো।
চলতি বছরের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারতের শোচনীয় হারের পরই বাংলাদেশি নাগরিকদের একাংশে উল্লাসে মেতে ওঠার দৃশ্য সামনে আসে। এরপরেই হোটেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অদ্ভুত পদক্ষেপ নিয়েছে।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হোটেল বুকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রায়গঞ্জের দুটি হোটেল। রায়গঞ্জ শহরের বিবেকানন্দ মার্কেটে অবস্থিত হোটেল নর্থ ইস্ট এবং কনিষ্ক লজ হোটেল দুটির রিসেপশনে বড় বড় করে লেখা রয়েছে নো রুমস এভেইলেবল ফর বাংলাদেশি সিটিজেনস।
এ ব্যাপারে হোটেল মালিক অরিন্দম সিংহ রায় জানান, ভারতের সংস্কৃতি অনুযায়ী অতিথি দেবতার মতো। এটা অতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। সম্প্রতি আমরা দেখলাম বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া ভালো খেলেছে তাই তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
কিন্তু সেখানে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের যে আচরণ তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও বেদনাদায়ক। আমাদের উভয় দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশ আছে। বাংলাদেশের কিছু নাগরিক তা নষ্ট করে দিচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার কাছে আগে দেশ তারপর অন্য কিছু। এ সিদ্ধান্তের কারণে হয়তো হোটেল ব্যবসার কিছু ক্ষতি হবে।
তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশের সব নাগরিকই এমনটা নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ক্রমশ ভারতবিদ্বেষ বাড়ছে। এ সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে তার কারণেই এমন প্রতিবাদ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর আমার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। কিন্তু তাদের মধ্যেই একশ্রেণির মানুষের আচরণের প্রতিবাদ করছি মাত্র।
যদিও এই অদ্ভুত সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ ভুল করতেই পারে। কিন্তু কেউ ভুল করলে আমাকেও ভুল করতে হবে এই মানসিকতায় আমি বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের বয়কট করাটা ঠিক নয়। ক্রিকেট একটা খেলা মাত্র। সেখানে রাজনীতি বা ধর্মের বিষয় আনা উচিত নয়। বাংলাদেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব দেখাচ্ছে না বলে আমরাও সেই পথ অনুসরণ করব সেটা চলতে পারে না।
অনেক ভারতীয় নাগরিকও বাংলাদেশিদের বয়কটের বিরোধিতা করছেন।
রায়গঞ্জের বাসিন্দা প্রিয়রঞ্জন পাল জানান, ভারতের হারে যেভাবে বাংলাদেশিদের একাংশ উল্লাস করেছে সেটা কোথাও মনে হচ্ছে ভারতবিদ্বেষের জায়গায় পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশিদের কাছে এটা কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। তার জন্য বাংলাদেশিদের বয়কট করার যে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে সেটাকে আমি সমর্থন করি না। বাংলাদেশি মাত্রই বয়কট এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাব।
গত ১৯ নভেম্বর গুজরাটের আমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্যত দাঁড়াতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। সেদিন ভারতকে ৬ উইকেটে পরাজিত করে ষষ্ঠবারের জন্য বিশ্বকাপ যেতে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের এই অপ্রত্যাশিত হাড়ের কারণে স্বপ্নভঙ্গ হয় দেশটির ক্রিকেটপ্রেমীদের। যদিও ভারতের এ হারে উল্লাসে ফেটে পড়েছিল বাংলাদেশিদের একাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই উল্লাসের ছবি সামনে আসতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে দুই বাংলায়।
তবে অনেকেই বলছেন, অল্প কিছু বাংলাদেশির জন্য ভারতে আসা পর্যটকদের খেসারত দিতে হচ্ছে। তিনদিন আগেই দার্জিলিংয়ে জনপ্রিয় হোটেল রয়োপোরাস তক্তসং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে জানান, অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের হোটেলে বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটন স্থানের হোটেল ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)