মিয়ানমারে সংঘাত: বান্দরবানের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান ২৮ পরিবারের ১৪০ জনের
মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) চলমান সংঘর্ষের জেরে বাংলাদেশে সীমান্ত নিকটবর্তী গ্রামগুলো এখন প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
এদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারণে বান্দরবানের ঘুমধুম ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
এদিকে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা পর্যন্ত বর্তমানে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় ২৮টি পরিবারের ১৪০ জন সদস্য আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশের সদস্য রঞ্জিত বড়ুয়া।
তিনি জানান, গতকাল বিকেল ২টা থেকেই ভয়ে আর আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। রাতে তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া রহিমা বেগম জানান, তাদের অধিকাংশ পরিবারের সব শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে। শুধু বাড়ির কোনো জিনিসপত্র আনতে না পারায় তার স্বামী সেখানেই থেকে গেছেন। তাদের রাতে ভাত-মাছ আর সকালের নাস্তা শুটকি ভর্তা দিয়ে গরম ভাত দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন আশ্রয় নেওয়া ২৮ পরিবারের ১৪০ জন সদস্য।
গ্রাম পুলিশ বাদশা মিঞা জানান, রাতে ও সকালে তেমন কোনো গোলাগুলি হয়নি বলে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই চাইলে নিজের বাড়িতে ফিরতে পারে। তবে আজকে যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।
আশ্রয়কেন্দ্র উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিপন বড়ুয়া বলেন, গতকাল জেলা প্রশাসক সীমান্ত পরিদর্শনে এসেছিলেন এবং এই স্কুলটি বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে আছে। যারা এখানে আছেন তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। শ্রেণিকক্ষগুলো এখন থাকার রুম হিসেবে ব্যবহার করছি। তাই শ্রেণি কার্যক্রমও এখন বন্ধ আছে।
ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, টানা কয়েক দিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির কারণে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। তাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে আমরা সব কার্যক্রম পরিচালনা করছি, আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এদিকে গতকাল নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বুধবার সীমান্তবর্তী এলাকা পরিদর্শনের কথা রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে গত তিন দিনে এ পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৬৪ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন এবং তাদের বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
এদিকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)