দেবহাটায় ভাতা ভোগীদের অভিযোগ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত প্রায় দেড় হাজার অসহায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা উধাও হওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা অনুসন্ধানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সোমবার সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরআগে ভাতার টাকা না পাওয়া সমাজের সবচেয়ে নীরিহ এসব অসহায় ভাতা ভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেবহাটা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অধীর কুমার গাইনের চরম দায়িত্বহীনতার তথ্য তুলে ধরে বৃহষ্পতিবার (২৪ জুন) বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মো. রোকনুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, বয়ষ্ক-বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীদের তালিকা প্রণয়ন থেকে শুরু করে সঠিকভাবে টাকা পৌঁছানোর জন্য তাদের নগদ অ্যাকাউন্টের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানীকে সরবরাহসহ সুবিধা ভোগীর টাকা প্রাপ্তি পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় দেখভালের দায়িত্ব ছিল উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অধীর কুমার গাইনের। কিন্তু সময় স্বল্পতা, দাপ্তরিক ব্যস্ততা বা অফিসে দক্ষ জনবলের ঘাটতির কারনে হয়তো তিনি ভাতা ভোগীদের এসব সমস্যা ঠিকমতো তদারকি করতে পারেননি।
এছাড়া এ প্রক্রিয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানী নগদ’র লোকজনেরও ভুল ছিল। যার ফলশ্রুতিতে হয়তো ভাতা ভোগীদের নামের তালিকার সাথে মোবাইল নম্বর ভুল হয়েছে এবং ভাতা ভোগীদের টাকা গুলো বিভিন্ন জেলার মোবাইল ব্যবহার কারীদের কাছে চলে গেছে। তিনি আরোও বলেন, পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর ইতোমধ্যেই ঘটনার অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে প্রায় দেড় হাজার ভাতা ভোগীর টাকা খোয়া যাওয়ার তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা না পাওয়ার একাধিক কারন থাকতে পারে। তবে হয়তো জনপ্রতিনিধিরা ভুক্তভোগীদের সংখ্যার বিষয়ে গণমাধ্যমকে একটু বাড়িয়ে বলেছেন।
দেবহাটার পাঁচ ইউনিয়নে মোবাইল নম্বরের ভুলের কারনে টাকা খোয়া যাওয়া ভুক্তভোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের তুলনায় কিছুটা কম হবে বলেও জানান তিনি।
রোকনুজ্জামান একটু আশার আলো দেখিয়ে বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর আমরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে উর্দ্ধত্তন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলাম। যেসব ভাতা ভোগীর টাকা ভুল করে অন্য মোবাইলে চলে গেছে তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য সঠিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে শীঘ্রই থানায় জিডি করার জন্য আমাদের পাঠানো চিঠির প্রতিউত্তরে রোববার রাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদিও তা অনেক লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া এবং তাতে কতজন সুবিধাভোগী টাকা ফেরত পাবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। তারপরও দ্রুততার সাথে ভুক্তভোগীদের জরুরী ভিত্তিতে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে টাকা না পাওয়া অসহায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা মাসের পর মাস ধরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অধীর কুমার গাইনের অফিসে ধরনা দিলেও তাদেরকে পাত্তা না দিয়ে বরং অসৌজন্য মুলোক আচরণ ও বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে অফিস থেকে বারবার ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আর অন্যদিকে সমাজের এসব অসহায় ভাতা ভোগীদের টাকা খোয়া যাওয়ায় সমাজসেবা অফিসারের চরম দায়িত্বহীনতার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বর্তমানে ঘটনা ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপসহ সাংবাদিকদের শায়েস্তা করতে নানা ফন্দি ফিকির আটছেন অভিযুক্ত অধীর কুমার গাইন।
একাধিক সূত্র জানায়, অধীর কুমার গাইন গেল কয়েক বছর চাকুরির সুযোগে দেবহাটাতে যেন স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেছেন।
উপজেলা পর্যায়ের এক জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতার সাথে সখ্যতা রেখে নানা দূর্নীতি-অনিয়ম স্বত্ত্বেও বহাল তবিয়তে থাকছেন দেবহাটাতে। সখিপুর মোড় ও উপজেলা পরিষদ এলাকায় খুলে বসেছেন ‘আশির্বাদ হোমিও’ নামের পৃথক দুটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসালয়।
এসব চিকিৎসালয়ে নারীদের বন্ধ্যাত্ব থেকে শুরু করে যাবতীয় গোপন রোগসহ ক্যান্সার ব্যাতীত সকল রোগ ভাল করার আইওয়াশ সাদৃশ্য বাহারি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিয়মিত রোগীও দেখেন তিনি।
এমনকি অধীর গাইন দেবহাটা সদর ইউনিয়নে ভোটার হওয়াসহ এদেশ থেকে ভারতে টাকা পাঠিয়ে সেখানে অবস্থানরত তার নিকট আত্মীয়দের তত্বাবধানে অর্থসম্পদ গড়ে তুলছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
এছাড়া উপজেলায় কোন এনজিও’র নিবন্ধন পেতে সমাজসেবা অফিসে ১৫/২০ হাজার টাকা হারে ঘুষ দিতে হয় বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও দীর্ঘদিন সমাজসেবা অফিসার পদে দেবহাটা উপজেলায় বহাল তবিয়তে থাকায় অধীর গাইনের খুঁটির জোর নিয়েও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভাতা’র টাকা বঞ্চিত অসহায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, অসহায় ভাতা ভোগীদের টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের এমন স্পর্শকাতর স্যোশাল সেফটিনেট প্রকল্পে দায়িত্বহীনতা বা নয়-ছয় হওয়ার প্রমান পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)