ব্যাংকগুলোতে বেতন কমানো হচ্ছে কেন?
গত জুন মাসে কর্মীদের বেতন কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। বিএবি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের এক্সিম ব্যাংকের বেতন কমানোর মধ্য দিয়ে এই যাত্রার শুরু হয়। অবশ্য বিএবি’র এই ঘোষণার আগেই সিটি ব্যাংক বেতন কমানোর ঘোষণা দেয়।
সিটি ব্যাংকের মতোই টিকে থাকার তাগিদে কর্মীদের বেতনভাতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এ নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা হতে থাকে। গত মাসে বেতন কমানোর তালিকায় নাম লেখায় বেসরকারি এবি ব্যাংক। গত মাস থেকেই এন্ট্রি লেভেল থেকে এমডি পর্যন্ত ৩ ও ৫ শতাংশ হারে বেতনভাতা কর্তন করেছে ব্যাংকটি।
এদিকে চলতি জুলাই মাসে ওয়ান ব্যাংক এই তালিকায় যুক্ত হয়। আরও কয়েকটি ব্যাংক ঘোষণা না দিয়ে ভেতরে ভেতরে তাদের কর্মীদের বেতন কমিয়েছে।
এবার এবি ব্যাংকের বিরুদ্ধে কর্মী ছাঁটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসের পর এ পর্যন্ত তারা কোনও কর্মী ছাঁটাই করেননি। বরং চলতি জুলাই মাসে ১৫৭ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল বলেন, করোনার আগে জানুয়ারি মাসে ৭০/৮০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছিল, তাদের পারফরমেন্স খারাপ ছিল। তারপর আজ পর্যন্ত ছাঁটাইয়ের কোনও তালিকা হয়নি। কাউকে ছাঁটাইও করা হয়নি। বরং ১৫৭ জনকে এই মাসে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি কাজী মো. সফিকুর রহমান বলেন, প্রথমে এবি ব্যাংক বেতন কমিয়েছে। এখন তারা ছাঁটাই করা শুরু করেছে। আজ ব্যাংকটি ১২১ জনের নামে ছাঁটাইয়ের চিঠি ইস্যু করেছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এবি ব্যাংক ছাড়াও আরও তিনটি ব্যাংক বেতন কমিয়েছে। এগুলো হলো ওয়ান ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবেই গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলোকে টিকে থাকতে হবে। যেসব ব্যাংকের আয় কমে গেছে, তাদের ব্যয়ও কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বেতন কমিয়ে অথবা অন্য যে কোনও পদ্ধতি গ্রহণ করে টিকে থাকতে হবে। তিনি জানান, তার ব্যাংকের (এক্সিম ব্যাংক ) যারা ৪০ হাজার টাকার বেশি বেতন পান, আগামী দেড় বছরের জন্য তাদের ১৫ শতাংশ বেতনভাতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু ব্যাংক বেতন কমানোর দিকে যাবে বলেও জানান তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, করোনার কারণে চলমান সংকটে অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত খরচ বহন করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ভবিষ্যতে টিকে থাকতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
এদিকে মহামারি করোনার আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবি ব্যাংক গত মে ও জুন মাসের বেতন ৫ শতাংশ কমায় ব্যাংকটি। এছাড়া সমালোচনার মধ্যেও চলতি মাসে কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের ওয়ান ব্যাংক। ব্যাংকটি তাদের কর্মকর্তাদের বেতন ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে ব্যাংকটি।
আদেশে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অফিসার থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাদের বেতন ৫০ হাজার টাকার বেশি তাদের বেতন ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতন কমানো হয়েছে ১০ শতাংশ। বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৫ ও ১০ শতাংশ হারে কমানো হবে। তবে ৫০ হাজার টাকা বা তার নিচে যারা বেতন পান তাদের বেতন কমানো হবে না। আর ৫০ হাজার টাকার ওপরে যারা বেতন পান তাদের বেতন কমানোর পর যদি ৫০ হাজার টাকার নিচে নেমে আসে তাহলে তার বেতন ৫০ হাজার টাকা নির্ধারিত হবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, করানোভাইরাসের ক্ষতি মোকাবিলায় খরচ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে ব্যাংকে এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেতন কর্মকর্তা পর্যায়ে কমানো হয়েছে। আশা করি এতে কর্মকর্তারা মনোক্ষুণ্ন হবেন না বরং বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মনোবল চাঙা রেখে সঠিকভাবে কাজ করবেন। সুদিন আসলে আবার সব ঠিক হবে বলেও কর্মীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে আদেশে। ব্যাংকের স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক সবার জন্যই এ নিয়ম কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে ব্যাংক কর্মীদের বেতনভাতা ১৫ শতাংশ কমানো, পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেন্টিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ১৩ দফা সুপারিশ করে দেশের সব বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয় বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতনভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। কর্মকর্তাদের বেতনের কমে যাওয়া ১৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৬ শতাংশ। ব্যাংকটি আগামী বছর (২০২১ সালে) পারফরমেন্স বোনাস ও ইনক্রিমেন্টও দেবে না। বেতন কমানোর এই সিদ্ধান্ত গত ১ জুন থেকেই কার্যকর হয়েছে। বহাল থাকবে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এছাড়া বেসরকারি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের পরিচালনা পর্ষদ।
কেন বেতনে হাত
ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস হলো বিতরণকৃত ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদ। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ফি আর এলসি কমিশন থেকেও বড় অঙ্কের আয় করে থাকে ব্যাংকগুলো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আয়ের এ দুটি উৎসই প্রায় বন্ধ রয়েছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও গ্রাহকদের খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে স্থগিত করা হয়েছে এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের সুদও। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য সচল আছে, এমন সামর্থ্যবান গ্রাহকরাও ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ রেখেছেন। ফলে ব্যাংকগুলো এখন বাধ্য হয়ে কর্মীদের বেতনে হাত দিয়েছে। কোনও কোনও ব্যাংক ছাঁটাইয়ের পথ অনুসরণ করছে।বাংলা ট্রিবিউন
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)