সম্ভাবনায় পর্যটন স্পট সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বাঁশঝাড়িয়া


সুন্দরবনের সৌন্দর্য হৃদয়কে স্পর্শ করে না এমন মানুষ নেহাত কমই আছে। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য ও মায়াজাল দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে ছুটে যান অনেকে। তবে সে জন্য সময়, শ্রম, অর্থ সব কিছুর প্রয়োজন হয় ভ্রমণে। সহজেই সুন্দরবনের সেই ছোঁয়া পাবেন বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের কালিন্দী নদীর পাড়ে আসলে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আগতরা সৌন্দর্য উপভোগ করেন। সুন্দরবনের এই অপরূপ সৌন্দর্য।
হ্যা, বাস্তবেই তাই। সেটি হলো বাঁশঝাড়িয়া মিনি সুন্দরবন! সুন্দরবনের মূল ভূখন্ড থেকে ৪০/৫০ কিঃ মিঃ উত্তরে কালিগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের বাঁশঝাড়িয়া বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন কালিন্দী নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরে ৬’শ একরের অধিক চরভরাটে জমি ইতিমধ্যে মিনি সুন্দরবন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার বিস্তীর্ণ চর জুড়ে গড়ে উঠেছে সবুজ অরণ্য। সুন্দরবনের অসংখ্যা প্রজাতির উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন প্রকার গাছের দেখা মিলবে এখানে। নদীর মাঝখানে সবুজ সুন্দরী বৃক্ষের সারি অার বনের চারিপাশে জলরাশি যা সকলের মনকে আপ্লুত করবেই।
প্রতিদিন প্রকৃতি প্রেমী অসংখ্য মানুষ অবসর সময় কাটাতে ও ছবি তুলতে এখানে আসেন। এই বনে মৌমাছিরা মধু আহরণ করে তৈরি করছে মৌচাক। পাখিদের বসবাসের জন্য অভয়ারণ্য বলা হয় এই বনকে। সুন্দরী, কেওড়া বাইন গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি পাখি ও বন্য প্রানীদের কারণে ইতোমধ্যে মিনি সুন্দরবন নামে যার পরিচিতি পেয়েছে জেলা জুড়ে।
এখানে এলে গাছের শীতল ছায়া আর নির্মল বাতাস সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় ভ্রমণ পিপাসুদের। এই মিনি সুন্দরবনকে ঘিরে এ অঞ্চালে আসার আলো দেখা দিয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম ম্যানগ্রোভ বন হিসাবে এটি বিস্তৃতি লাভ করায় অনেকটা সম্ভবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। চারপাশে পানি বেষ্ঠিত এ বনভূমিটি সৌর্ন্দয্য পিপাসু ব্যাক্তির জন্য একটি আকর্ষনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। সরকার বাহাদুর যথাযথ ব্যবস্থা নিলে বাঁশঝাড়িয়া মিনি সুন্দরবন হতে পারে দেশের অন্যতম একটি সম্ভাবনার পর্যটন স্পট ও পিকনিক কর্নার।
প্রাপ্ততথ্যে জানা যায়, ১৯২৬ সালের দিকে বাঁশঝাড়িয়া মৌজায় প্রায় ৩’শ একর জমি কালিন্দীর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এর ১৫ বছর পর ১৯৪০ সালের দিকে কালিন্দী নদীর বাংলাদেশের সীমানায় জেগে ওঠে একটি বিশাল চর। তখন থেকে বাঁশঝাড়িয়া চর নামে এই মিনি সুন্দর বনের আত্ন প্রকাশ ঘটে।
ভূতপূর্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ থাকাকালে বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিব মাসুদ হোসেন এ মিনি সুন্দরবন পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় গ্রামবাসিরা আকবর আলী গাজী (৮০) ও পিয়ার আলী গাইন (৭৫) বলেন, তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের কাঠুরিয়ারা বাঁশঝাড়িয়া বনে নির্বিঘ্নে কাঠ কাঠতো। ১৯৭৭ সালের দিকে সহস্রাধিক ভারতীয় মৎস্য শিকারী বন জবর দখলের জন্য বাঁশঝাড়িয়া বনে একতরফা ভাবে অনুপ্রবেশ করে। এসময় মৎষ্য শিকারের সুবিধার্থে তারা বাংলাদেশের সীমানায় বাঁধ দিতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্ঠি হলে ১৯৭৮ সালে ভারতের নয়াদিল্লীতে বিডিআর ও বিএসএফ‘র মহাপরিচালক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিধান্ত হয় যতদিন পর্যন্ত উভয় দেশের মধ্যে যৌথ সীমানা জরিপ সম্পন্ন না হবে ততদিন পর্যন্ত বিরোধপূর্ন ঐ বনভূমির মালিকানা কেউ দাবী করতে পারবে না। সেই থেকে ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্পন্ন হয়নি সীমানা জরিপের কাজ। ফলে বাঁশঝাড়িয়া বনভূমি সংক্রান্ত বিরোধেরও কোন নিস্পত্তি হয়নি।
তবে চর ও বনভূমি নিয়ে বর্তমানে কোন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নেই বলে বাঁশঝাড়িয়া বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার ক্যাম্প কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম জানান।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
