জব্দের আগেই অ্যাকাউন্ট শূণ্য করলো বেনজীর
গত ২৩ মে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তবে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জব্দের আগেই ওই অ্যাকাউন্টের সব টাকা সরিয়ে নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। তবে এসব অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা ছিল, তা জানা যায়নি।
এদিকে দুদক কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর মতো করে জমি, ফ্ল্যাট বা অন্য কোনো সম্পদ বিক্রি বা স্থানান্তর করেছেন কিনা, সে তথ্য দুড়দকের কাছে নেই। এছাড়া তিনি দেশে আছেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। কেউ জানে না তিনি এখন কোথায় আছেন! তবে অনির্ভরশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবার নিয়ে বেনজীর এখন দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ও তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৩টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী, মেয়াদি, এসএনডি আমানত হিসাব। কিছু ঋণ হিসাবও আছে। অ্যাকাউন্ট জব্দ কার্যকরের আগেই আমানত হিসাব থেকে নগদ টাকা উত্তোলন কিংবা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট জব্দ হতে পারে– বিষয়টি তিনি আগেই জেনে গিয়েছিলেন, নাকি ধারণা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বেনজীরের সম্পদের বিষয়ে যেসব সরকারি সংস্থা খোঁজ রাখছে, তাদের মধ্যে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, গত সপ্তাহে তাঁর অ্যাকাউন্টগুলো ফাঁকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যখনই কেউ বুঝতে পারেন তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে, তখনই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলেন। অবশ্য টাকা তুললেও নগদে রেখেছেন, নাকি অন্য কারও অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন– তা বের করা সম্ভব।
বেসরকারি একটি ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডকুমেন্টের ভিত্তিতে কাজ করে ব্যাংক। ফলে সুনির্দিষ্ট আদেশের কপি ছাড়া মৌখিক কোনো তথ্য কিংবা গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে কারও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে বা স্থানান্তর না করতে দেওয়ার সুযোগ নেই। কেননা, আদালত কারও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজের আদেশ দিলে পরে স্থগিতাদেশ দিতে পারেন। এ রকম ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক টাকা তুলতে না দিলে বিপদে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণভাবে এ ধরনের ব্যক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে নিজস্ব লোক থাকে। ফলে গোপনে জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার পত্রিকায় লেখালেখি এবং দুদকের কার্যক্রমের ফলে এমনিতেই তিনি টাকা সরিয়ে ফেলতে পারেন। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে নগদে তুলে বিশ্বস্ত কারও কাছে রাখা হয়। এখন দেখার বিষয় বেনজীর ও তাঁর স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন প্রোফাইলের নিয়ম মেনে টাকা উত্তোলন হয়েছে কিনা। আবার টাকা উত্তোলন বা স্থানান্তরের পর ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট (এসটিআর) এবং নগদ লেনদেন রিপোর্ট (সিটিআর) করেছে কিনা।
অন্যদিকে, বেনজীর আহমেদের দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সিটিজেন টিভির মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালে এ টিভির অনুমোদনের সময় তারা দু’জনই ছিলেন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, দুদকের চিঠি আমলে নিয়ে তিন দেশে কোনো সম্পদ আছে কিনা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
উল্লেখ্য, বেনজীর, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে গত ২২ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। দুদকের অনুরোধে বিএফআইইউ বিভিন্ন ব্যাংকে তথ্য তলব করে চিঠি দেয়। বিএফআইইউ এসব তথ্য পাঠায় দুদকে। এর পর দুদকের তথ্যের ভিত্তিতে আদালত গত ২৩ মে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। একই দিন তাদের ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি জব্দেরও আদেশ দেওয়া হয়।
দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে গত ২৬ মে রোববার ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা এরই মধ্যে সব অফিসে পাঠিয়েছে দুদক। দুদক জানিয়েছে, ব্যাংক হিসাবের অর্থ যাতে হস্তান্তর বা রূপান্তর না হয়, সে জন্য আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি যাতে হস্তান্তর না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর আদালতের জব্দের আদেশ পাঠানো হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)