‘জোবাইদা রহমানকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছিল’ : খোকন


ডা. জোবাইদা রহমানকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
বুধবার সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে সাজার বিরুদ্ধে জোবাইদা রহমানের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন আদালত।
বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।এরপরই আদালত প্রাঙ্গণে কথা বলেন তার দুই আইনজীবী।
জোবাইদা রহমানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের জন্য ৫৮৭ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে আবেদন করেন জোবাইদা রহমান। শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের একই বেঞ্চ বিলম্ব মার্জনার আবেদন মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি আপিল তালিকাভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর আপিল করেন জোবাইদা রহমান। আজ আপিলটি আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় জোবাইদা রহমানের আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর এবং তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়।এই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিজ অথবা উকিলদের জিম্মায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে এ জন্য আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, এই আপিল দায়ের করতে গিয়ে যা দেখেছি এটি একটি দূরভিসন্ধিমূলক মামলা। এছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটাও আইনতভাবে প্রমাণ হয়নি। কারণ তিনি জ্ঞাতসারে কোনো সম্পত্তি অর্জন করেননি। যে প্রপার্টি তিনি স্টেটমেন্টে দেখিয়েছেন সেটা উনার বৈধ সম্পত্তি। শুধু রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এবং উনাকে দণ্ডাদেশ দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য এ মামলাটি করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস এ মামলার পূর্ণ শুনানির সময় আমরা শুধু জোবাইদা রহমান নয় তারেক রহমানকেও মুক্ত করতে পারব।
ব্যরিষ্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ মামলায় দুদকের পক্ষ থেকে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এমনকি সাক্ষীরা কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। তারেক রহমান বা জোবাইদা রহমান কোনো অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করেছেন এটার একটা সিঙ্গেল ওয়ার্ডও হাজির করতে পারেনি। জিয়া পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
আদালতে জোবাইদা রহমানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানি করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া, মাকসুদ উল্লাহ ও এস এম মাহিদুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে আইনজীবী আসিফ হাসান শুনানিতে ছিলেন।
ওই মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে দুটি ধারায় তারেক রহমানের ৯ বছর কারাদণ্ড (৬ ও ৩ বছর, একসঙ্গে চলবে) এবং তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের ৩ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা এই মামলায় জোবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করে গত ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনের ভাষ্য, সাজা স্থগিত চেয়ে জোবাইদা রহমানের করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাঁকে দেওয়া দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হলো।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৬ মে যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন জোবাইদা রহমান। তিনি তার স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। এর মধ্যে ১৭ বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি জোবাইদা রহমান।
দেশে ফিরে আপিল করার জন্য ৫৮৭ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদনটি করেন জোবাইদা রহমান। বিলম্ব মার্জনার আবেদন মঞ্জুরের পর তিনি আপিল করেন এবং জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জোবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
