নড়াইলে ১৪ বছরের শিশু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল আসামি গ্রেফতার
নড়াইল জেলার সদর থানাধীন নিধিখোলায় ইজিবাইক চালক মোঃ নাজমুল শেখের ছেলে শয়ন শেখ (১৪) অন্যের জমিতে কাজ করতো।
শয়ন শেখ গত ১৯/০৭/ তারিখ রাত অনুমান ৮. সময় নিজ বাড়ি থেকে জনৈক রাজুর চায়ের দোকানে যায়। ঐ রাতে সে বাড়িতে না ফিরলে তার বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু তার কোন সন্ধান পায় না। পরের দিন ২০/০৭/ তারিখ সকালে স্থানীয় এক ব্যক্তি ধানক্ষেত দেখতে যাওয়ার পথে ঘটনাস্থলে ঐ কিশোরের নিথর দেহ দেখতে পায়। নড়াইল সদর থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) তারেক আল মেহেদী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ দোলন মিয়া ও নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওবাইদুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দুরন্ত শিশু শয়ন শেখের লাশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। পুলিশ সুপার মহোদয় এই শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম গঠন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় শিশু শয়নের পিতা-মাতা পুলিশ সুপারের নিকট ছেলে হত্যার বিচার চাইলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন যে, “দ্রুতই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
নড়াইল সদর থানা পুলিশ মৃত শয়নের সুরতহাল প্রস্তুত করতঃ মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য মৃতদেহ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। শয়নের পিতা নাজমুল শেখ ও এলাকাবাসীর তথ্য মতে শয়ন শেখের সাথে কারো শত্রুতা ছিল না। অজ্ঞাতনামা কেউ তার ছেলেকে হত্যা করেছে। এ সংক্রান্তে নিহতের বাবা বাদী হয়ে নড়াইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে নড়াইল সদর থানার মামলা নং-১৭ তারিখ- ২১/০৭/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। হত্যা মামলাটির তদন্তভার এসআই (নিঃ) সাইফুল ইসলাম এর উপর অর্পণ করা হয়। উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে এসআই (নিঃ) সাইফুল ইসলাম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার মোসাঃ সাদিরা খাতুন দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব মোঃ দোলন মিয়ার নেতৃত্বে সদর থানার এসআই (নিঃ) সাইফুল ইসলাম ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলের এসআই (নিঃ) আলী হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামি রাজু মোল্যাকে নড়াইল সদর থানাধীন পাইকমারী স্কুলের সামনে থেকে রবিবার (৩০ জুলাই) গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি রাজু মোল্যা একজন চায়ের দোকানদার। নিধিখোলা স্কুলের পাশে তার চায়ের দোকান। সে শয়নের কাছে ৬০০/৭০০ টাকা পেতো। ১৯ জুলাই রাত ৮.০০ ঘটিকায় তার দোকান থেকে কিশোর শয়ন চানাচুর নিয়ে দৌঁড় দেয়। রাজুও শয়নের পিছে পিছে দৌঁড়ে যায়। স্কুলের কাছে গিয়ে রাজুর স্যান্ডেল স্লিপ করে এবং সে শয়নকে নিয়ে পড়ে যায়। ফলে শয়নের মাথা স্কুলের সিঁড়ির সাথে লেগে প্রচন্ড আওয়াজ হয় এবং তার মাথার পিছনে ফুলে যায় ও রক্তক্ষরণ হয়। রাজু রক্ত দেখে ভয় পেয়ে শয়নকে ঘাড়ে করে জনৈক রুহুল মাস্টারের মেহগনি বাগানে নিয়ে যায়। সে শয়নকে বসানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পাশের ক্ষেত থেকে পাট এনে তার উপর শয়নকে শায়িত করে এবং জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় থাকে। আস্তে আস্তে শয়নের হাত-পা শীতল হয়ে যায়। পরে রাজু দোকানে এসে সিগারেট নিয়ে পুনরায় শয়নের কাছে যায়। এ সময় রাজু চিন্তা করে শয়ন বেঁচে থাকলে সে শয়নকে এভাবে আঘাত করেছে বলে দোষী সাব্যস্ত হবে। এমন চিন্তা থেকে রাজু শয়নের কাছে থাকা গামছা দিয়ে তার গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শ্বাসরোধ করার সময় শয়নের দেহ নড়াচড়া করলে তালগাছের ডগা দিয়ে সে শয়নের মুখে আঘাত করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতে ডান পা দিয়ে সে শয়নের বুকে চাপ দেয়।
আসামি রাজু মোল্যাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)