কলম থেকে কলাম
পরনির্ভরশীলতা নয়, উদ্যোক্তা হতে পারে আগামির ভবিষ্যৎ
আমাদের সমাজ এমন কেন? একবার কী ভেবেছেন আমরা কেন কাউকে উপরে উঠতে দেই না? কেনই বা কারো বড় হয়ে ওঠা টা মানতে পারিনা, আবার কারো নিজের মতের চিন্তা ধারাকেও প্রাধান্য দেই না। আমরা ভাবি লেখাপড়া করে সুশিক্ষিত হয়ে একটা বড় চাকরি করতে হবে।
কখনও কি এভাবে ভেবেছেন? আপনি আপনার গ্রাজুয়েট শেষ করতে আপনার জীবন থেকে প্রায় ২৫ টি বছর নিয়ে নিচ্ছেন। এই ২৫ টি বছর কিন্ত আপনার গড় আয়ু ৬০-৬৫ থেকে থেকে চলে যাওয়া। তাহলে আর আপনার থাকছে ৩৫-৪০ বছর। এই ৩৫ বছর ভালভাবে বেঁচে থাকার জন্য যদি ৩০ বছর কঠিন পরিশ্রম করেই যাচ্ছেন শুধু লেখাপড়া নিয়ে, শুধুই একটা চাকরির জন্য। আর এই সাথে সংগ্রামী জীবন পার করে আমাদের পিতামাতা। তাদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে আমরা কিন্ত এই ৩০টি বছর পার করি। আর এই সব কিছু পার করে এবার প্রয়োজন একটা সুন্দর সরকারি চাকরির। আর এই ৩০ই কিন্তু সরকারি চাকরির শেষ বয়স। এবার ভাবেন আপনার জন্য কি বাংলাদেশ সরকার চাকরি নিয়ে বসে আছে? না বসে নেই। আপনাকে প্রতিযোগিতার মধ্য থেকেই কিন্ত একটা চাকরির জন্য লড়তে হবে। হাজার লড়েও কি অাপনি সত্যি চাকরি পাবেন? এটারও কোন নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারবেন না। চাকরি না পেলে কি আমাদের বসে থাকতে হবে। আর আমরা জানি যে বাংলাদেশের চাকরির বাজার কী। এর মধ্যে অনেকই চাকরি পায়। আবার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্ধেকের ও বেশি তরুন তরুণী বেকার থেকে যায়। আর এই বেকার তরুন তরুণীই হলো বাংলাদেশর হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম। নিজেকে বিকশিত করতে সুযোগ পায় না তারা। এই ভাবে বসে না থেকে আমরা কী উদ্যোক্তা হতে পারি না?
নোবেলজয়ী ড. ইউনুস এর কথাই বলতে হয়, “ভাল একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাল একটি ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়েই একজন শিক্ষার্থী বলছেন, আমাকে চাকরি দিন। কিন্তু এটা বলছেন না যে আমাকে ১০ হাজার ডলার দিন, আমি নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে তুলব। তাঁর ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণ তিনি তুলে দিচ্ছেন আরেকজনের হাতে। এটা আধুনিক দাসত্ব ”।
“প্রত্যেক মানুষই উদ্যোক্তা হয়ে জন্ম নেয় কিন্তু সমাজ তাকে এমনভাবে মগজধোলাই করে যে তিনি চাকরি খুঁজতে বাধ্য হন। সে জন্য বেকারত্ব দেখা দেয় ”।
আমাদের চিন্তা চেতনা বদলাতে হবে। আমাদের সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে। আর এই পরিবর্তন ই আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় পরিবর্তন আনতে পারবে । সফল হতে গেলে নিজেকে স্থির রাখতে গেলে চলবেনা। আমরাই দেশের সম্পদ, আমাদেরকে দেশের জন্য লড়তে হবে। আমরাই পারব আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
আমাদের দেশের জাতীয় খেলা কি জানেন নিশ্চয়ই? ” হা ডু ডু “। আর “হা ডু ডু” খেলার নিয়ম হচ্ছে আপনি এগুতে চাইবেন আর একদল আপনার পা ধরে টানবে, ঝুলবে যাতে আপনি এগুতে না পারেন। এর মধ্য দিয়েই একদল জয় লাভ করে। কাজেই আপনাকে বসে থাকলে চলবে না সমাজের অনেকেই পিছন থেকে অনেক কথা বলবে। আপনাকে এগুতে দেবে না। আপনার পিছনে লোক লেগেই থাকবে। তবে এই দেশে এই সমাজের মধ্য থেকে আপনি নিজেকে বের করে এনে এগিয়ে চলুন। নিজেকে উদ্যোক্তা করে গড়ে তোলেন। মানুষকে উদ্যোক্তা হতে সহযোগী করুন।
এতক্ষণে যে উদ্যোক্তা নিয়ে আলোচনা করলাম উদ্যোক্তা আসলে কি? উত্তর টা আমরা এই ভাবে নিতে পারি যে কোন সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে নিজের কর্ম ও অন্যের কর্মসংস্থানের তৈরি করার চিন্তা এবং তা বাস্তবে রুপ দেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ। আর যিনি এই মহৎ কাজটির প্রতিষ্ঠাতা তিনি হচ্ছেন একজন উদ্যোক্তা।
আর এই উদ্যোক্তা হতে হলে আমাদের কিছু করণীয় হল:-
-নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জানা
-কি পেতে চাও, কেন করছো কাজটি তা ঠিক করা।
-নিজের উপর বিশ্বাস রাখা।
-নিজের কাজের উপর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রাখা।
-নিজের সাহস ছাড়া বড় কোন উদ্যোগ নেওয়া উচিত নয়।
-আশেপাশের মানুষ অনেক কথা বলবে, তাই তাদের কথায় কান না দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
-সব সময় সব কিছু নিয়ে স্বাভাবিক চিন্তা করা।
-মাথা খাটিয়ে কাজ করা, শক্তি খাটিয়ে নয়।
-জীবন টাকে উপভোগ করা।
আমরা যদি এই করনীয় গুলো কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমরা একদিন সত্যি অনেক বড় হব। হয়ে যাব একজন সফল উদ্যোক্তা। যা আমাদের দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় পরিবর্তন আনবে ইনশাল্লাহ।
লেখক
হেলাল আজম
শিক্ষার্থী, সরকারী বাঙলা কলেজ (অধিভূক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)