বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে: মির্জা ফখরুল


অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখতে চায় না বিএনপি, বরং এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে মূল্যায়ন করেই দলটি জুলাই সনদের সুপারিশপত্র বুধবার রাতে সরকারের কাছে জমা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিইউজে ও বিএফইউজে আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ওপর চালানো নির্যাতনের চিত্র নিয়ে বিএফইউজে ও ডিইউজে আয়োজিত আলোচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই। কিন্তু কেউ যদি বলে বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, তাহলে সেটা ভুল ব্যাখ্যা।
তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এই বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না। যারা এই বাস্তবতা অস্বীকার করছেন, তারা গণতন্ত্রের দিকেই চোখ বন্ধ করে আছেন।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা আশাবাদী সামনে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা হবে, যেখানে দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে তিনি বলেন, সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা হচ্ছে। পুশইন চলছে। এটা কোনোভাবেই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারকে এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দরকষাকষি করতে হবে। তিনি ন্যায্য পানির প্রাপ্তি নিয়েও ভারতের সঙ্গে আন্তরিক আলোচনার দাবি জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ধরনের শুল্ক আরোপ পোশাকশিল্পকে মুখ থুবড়ে ফেলতে পারে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় সংকট তৈরি করবে। সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়ে গুরুত্বসহকারে পদক্ষেপ নিতে হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিভক্তি নয়, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে জাতিগত ঐক্য গড়ে তোলা। যেখান থেকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তিনটি শক্তি দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম- এই তিনটির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। রাষ্ট্র বিনির্মাণে সব মৌলিক শক্তিকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিবেধ, বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। কমন ইস্যুতে আমাদেরকে এক থাকতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক হোক, মিডিয়াতে বিতর্ক হোক, কলামিস্টরা বিতর্ক করুক সমস্যা নেই। কিন্তু দলে দলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বিভেদ, আক্রোশ যেন না হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার চলে গেলেও তার মানসিকতা এখনো সমাজে রয়ে গেছে। তরুণ নেতৃত্বের কেউ কেউ বলছেন- ‘অমুক না হলে তমুক হবে না’। এই মনোভাব আর স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এক ও অভিন্ন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে-এই ভাষা গণতান্ত্রিক সমাজের নয়।
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এই বিজয় ধরে রাখতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সহনশীলতা। জনগণ সব দেখছে—তাদের বোকা ভাবা ঠিক হবে না। অতীতে যারা এই ধরনের দম্ভোক্তি করেছেন, তারা আজ ইতিহাসে নেই। বাংলার মানুষ এসব কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার তার বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই বিপ্লবে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি যারা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নানা পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মামলার ভারে ভারাক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তার লেখা কবিতা ‘জুলাই বাংলাদেশ’ পাঠ করেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহ-সভাপতি একেএম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান প্রমুখ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)

একই রকম সংবাদ সমূহ

ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে খু*নের ঘটনা বড়ই দুঃখজনক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যারবিস্তারিত পড়ুন

রাজধানীতে প্রকাশ্যে পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে হ*ত্যা: আরো এক আসামি গ্রে*প্তার
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরও এক আসামি টিটনবিস্তারিত পড়ুন

মিটফোর্ডে হ*ত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ চাঁদ মিয়া ওরফেবিস্তারিত পড়ুন