বিদেশি মিডিয়ার স্লট ভাড়া করে দেশবিরোধী অপপ্রচার করছে একটি চিহ্নিত চক্র : তথ্যমন্ত্রী
‘বিদেশি মিডিয়ার স্লট ভাড়া করে একটি চিহ্নিত চক্র দেশবিরোধী অপপ্রচার করছে, দেশবাসীকে এদের বিরুদ্ধে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত ’একুশের চেতনায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে, মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছিল, আমাদের স্বনামধন্য একজন আইনজীবীর মেয়ের ইহুদী জামাতাসহ স্বাধীনতাবিরোধী জামাত চক্র, যারা আজ দেশের মানুষের কাছে নিন্দিত, ঘৃণিত, ধিকৃত ও বর্জিত, তারা এখন তাদের অর্থ-বিত্ত দিয়ে মানুষ ভাড়া করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার স্লট ভাড়া করে, মানুষ ভাড়া করে দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু প্রতিবেদন সেই অপচেষ্টারই প্রতিফলন মাত্র। কিছু ভুল ও অসত্য তথ্য কাট-পেস্ট করে যে ধরনের প্রতিবেদন প্রচার করা হচ্ছে, সেটি আসলে দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়।’
‘অতীতে যেমন বঙ্গবন্ধুর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল, এখনও দেশের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এগুলো করা হচ্ছে’ উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরূদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে কারণ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে -এটি অনেকের পছন্দ নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিকভাবে করোনা মোকাবিলায় সমর্থ হয়েছে, এটি অনেকের গাত্রদাহ, এজন্যই তারা এই ঘৃণ্য নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। কিন্তু এই খেলা খেলে কোনো লাভ হবে না। বিশ্বব্যাংক একসময় বড় একটি দেশের সহায়তা নিয়ে এদেশে পদ্মাসেতুর বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেটি ভেস্তে গেছে। এখনও যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেগুলোও ভেস্তে যাবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা পলাতক, যুদ্ধাপরাধী ট্রাইবুন্যালে যাদের বিচার হচ্ছে, তারা এখন বিদেশি গণমাধ্যমের স্লট ভাড়া নিয়ে এসব বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। দেশের মানুষ সজাগ আছে, সতর্ক আছে এবং আওয়ামী লীগের ভিত্তি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এই সরকারের ভিত্তি তৃণমূলে প্রোথিত। সুতরাং এই ছোটখাট কাতুকুতু দিয়ে লাভ হবে না।’
ইতিহাসের সূত্র ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ যখন দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই দেশবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। একে একে পাঁচজন আওয়ামী লীগের এমপিকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুহত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয় এবং জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এখনও বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে যখন বিশ্ব প্রশংসায় পঞ্চমুখ, মানব উন্নয়ন-অর্থনৈতিকসহ সমস্ত সূচকে যখন আমরা বহু আগে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছি, করোনাকালে ধ্বনাত্মক জিডিপি প্রবৃদ্ধির মাত্র ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ যখন বিশ্বে তৃতীয় স্থান অর্জন করে, করোনাকালে অনাহারে মৃত্যুর সকল শংকা মিথ্যে প্রমাণ করে বাংলাদেশ যেভাবে করোনা মোকাবিলা করেছে সেজন্য যখন সারাবিশ্ব এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, এই সময়ে দেশের বিরূদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এসব তারই অংশ।’
ড. হাছান এসময় ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার মাস এবং একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রথম স্ফুলিঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ইতিহাস কখনো চাপা থাকেনা, ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান ছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার কার্জন হলে ‘উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেইসময় যে প্রতিবাদ হয়েছিল, তা তুলেছিলেন সেসময়ের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুুজিবুর রহমান এবং তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন্নাহ’র ঘোষণার প্রতিবাদে প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তিনি কারাগারে দীর্ঘ অন্তরীণের মধ্যে ভাষার দাবিতে, হত্যা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে অনশন করেছিলেন। এ ইতিহাস সবার জানা নেই।’
ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিকে ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা’ শ্লোগানে মুক্তির মন্ত্রে জাগ্রত করে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এদেশকে স্বাধীন করেছেন এবং প্রথমবারের মতো বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন’ উল্লেখ করেন ড. হাছান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল আমিন রুহুল, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার ও এম এ করিম বিশেষ অতিথি হিসেবে সভায় বক্তব্য রাখেন। স্বাধীনতা পরিষদের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জাকির আহম্মদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন টয়েলের সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি জিন্নাত আলী জিন্নাহ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি, মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ এসময় বক্তব্য দেন।
তথ্যবিবরণী-পিআইডি
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)