ভারত ফেরত যাত্রীদের নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার আকুতি


বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদেরকে স্থানীয় বিভিন্ন হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। এতে শারীরিক নানা অসুস্থতায় ভারতে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার আকুতি জানিয়েছেন।
যাত্রী বলছেন, গত বছর সরকারি খরচে যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন পরিচালনা করা হলেও এ বছর নিজ খরচে ১৪ দিন হোটেলে থাকতে হচ্ছে। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। তাদেরকে যশোরে না রেখে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হোক।
প্রশাসন বলছে, করোনা সংক্রমণ রোধে এই কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন থেকে দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি দিয়ে হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হবে। এক ডোজ টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তবে কোয়ারেন্টাইন খরচ কমাতে হোটেল ভাড়া, যানবাহন খরচ কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
যশোর জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতে ব্যাপক করোনা সংক্রমণের কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে দুই দেশের মধ্যে পারাপার বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। এ সময় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি আটকা পড়েন ভারতে। তাদেরকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপ-হাইকমিশন থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৭ হাজার ৯৬৪ জন ভারত থেকে দেশে এসেছেন। এর মধ্যে বর্তমানে জেলায় কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪৩৪ জন।
করোনায় মৃত্যুবরণ করা ৪৪ জনের মরদেহ এসেছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন মারা গেছেন পাঁচজন যাত্রী। ভারত থেকে দেশে ফেরার পর যাত্রীদের হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে। এদের মধ্যে একেবারে অসহায় যাত্রীদের রাখা হচ্ছে যশোরের গাজীর দরগা মাদরাসায়। ভারত ফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রীদের আরটিপিসিআর ল্যাবের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও বাংলাদেশে প্রবেশের পর তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে ফেরা এসব মানুষ হোটেলে থাকতে গিয়ে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন।
যাত্রীরা জানান, যারা ভারতে প্রবেশ করছে তাদের আরটি পিসিআরের সনদ থাকলে ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে তারা নিজ গন্তব্যে যেতে পারছেন। সেখানে কোয়ারেন্টাইন নিয়ম প্রথম থেকেই নেই। অথচ বেনাপোল দিয়ে ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রীদের আরটি পিসিআরের করোনা নেগেটিভ সনদ দেখালেও ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হচ্ছে। এতে করে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে ফেরা যাত্রীরা অর্থেকষ্টে রয়েছেন। করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেই সরকার যেন নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার অনুমতি দেয় তারা এই আকুতি জানিয়েছেন।
চলতি মাসের ২৩ আগস্ট কলকাতা থেকে চিকিৎসা নিয়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর গ্রামের হুমায়ন কবির। তিনি নিজেই কিডনি রোগী। তারপরও অসুস্থ বাবাকে নিয়ে তিনি বেনাপোলে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
তিনি বলেন, হোটেলে একেকটা দিন আমার কাছে এক বছর মনে হচ্ছে। গ্রামে বাসায় দুইটা বাচ্চা আমার জন্য কান্নাকাটি করছে, আমাকে দেখার জন্য। আমি পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারী ব্যক্তি। তারপরও বাবা-ছেলের চিকিৎসা সেরে দেশে ফিরে কাছে কোনো টাকা নেই। অর্থকষ্টে ভালো নেই আমরা। তাই নিজ বাড়িতে সাবধানে হোম আইসোলেশন থাকতে চাই।
বেনাপোল সিটি আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ভারতফেরত যাত্রী রুপক পোদ্দার। তিনি ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরও তার চিকিৎসা শেষ হয়নি। এজন্য ডাক্তার তাকে আরও তিন মাস থাকতে বলেছেন। এদিকে তিন মাসের বেশি থাকায় রুপককে ভারতীয় এফআরআরও অফিসে ২০ হাজার রুপি এক্সিট পারমিটের জন্য গুনতে হয়। ফলে তিনি এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এদিকে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সেবা দিতে গিয়ে আতঙ্কে আছেন হোটেলকর্মীরা। ভীত এসব হোটেলের আশপাশের বাসিন্দারাও। আবার বেনাপোলের বিভিন্ন হোটেলে ভারতফেরত যাত্রীরা কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। হোটেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসারদের ম্যানেজ করে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর আলিফ রেজা বলেন, আমরা ভারতফেরত কোয়ারেন্টাইনে থাকা পাসপোর্ট যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তাদের হোটেল ভাড়া যাতে বেশি না নিতে পারে সেদিকে তদারকি করছি। হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে হোটেল ভাড়া কমানো হয়েছে। তাছাড়া কোনো যাত্রী বাড়ি যাওয়ার সময় যদি তার কাছে গাড়ি ভাড়ার টাকা না থাকে তাহলে আমাদেরকে জানালে আমরা তাদের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিব। আবার কেউ আবাসিক হোটেলে কোয়ারেন্টাইন থাকার সামর্থ্য না থাকলে আমাদেরকে জানালে আমরা বিনা খরচে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
এ বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিব বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতফেরত যাত্রীদের জন্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট চার ক্যাটাগরির যাত্রীদের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের একটি নির্দেশনা বেনাপোল ইমিগ্রেশনে এসে পৌঁছেছে। ক্যানসার, কিডনি রোগী, গর্ভবতী নারী ও দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে অব্যাহতি দিয়ে হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। তবে এক ডোজ টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ খরচে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আর টিকা না দেওয়া থাকলে আগের নিয়ম অনুযায়ী ভারতফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক ও জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, গত ২৬ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে দেশে ফেরা বাংলাদেশিদের বেনাপোল ও যশোরের ১৬টি হোটেল ছাড়াও আশেপাশের জেলাতেও রাখা হয়েছে। করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতে প্রশাসন কঠোর রয়েছে। একই সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
ভারতে আরটি পিসিআরের সনদ থাকলে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে যাত্রীরা নিজ গন্তব্যে যেতে পারছে- এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, সরকার এই বিষয়টি বিবেচনা করছে। ভারতফেরত যাত্রীদের জন্য সরকার ধাপে ধাপে শর্ত শিথিল করছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
