মণিরামপুরে শাহা ইটভাটার চিমনির গ্যাসে গাছ-গাছালি ও ফসলের অপূরনীয় ক্ষতি
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রোহিতা ইউনিয়নের পলাশি মাঠপাড়া এলাকার শাহা ইটভাটার চিমনির দাহ্য গ্যাসে তিন কিলোমিটার ব্যাপি ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ইটভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তরা ঠিকমত তাদের ক্ষতিপূরণ পাবেন কী না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (২৬মে) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন রোহিতা ইউনিয়নের ভান্ডারি মোড় সংলগ্ন পলাশি মাঠপাড়া গ্রামে শাহা ইটভাটা এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, ফসল ও গাছ-গাছালীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ গাছ পুড়ে মারা যাচ্ছে। বহুবছরের পূরানো নারিকেল গাছ, সুপারিগাছ, তাল গাছ, আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, আমড়া, বেল, আতা, পেঁয়ারাসহ নানা জাতের ফলজ ও বনজ গাছ, বাঁশ গাছ, নার্সারী ও সবজির ক্ষেত পুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলজ গাছের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়।
সাহা ইটভাটা সংলগ্ন ওবায়দুল হক ভান্ডারির পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় পাবার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ওবায়দুলের স্ত্রী মনোয়ারা (৬০) কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, গত ৫/৬ দিন হবে সাহা ইটভাটার চিমনি ছেড়ে দিবার পর ইটভাটার ঝাররা আগুনে আমাদের সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে! আট বিঘা জমিতে আমাদের বসত। মাঠে কোন জমি নেই। বাড়ীর সবটুকু জায়গায় গাছ-গাছালি লাগিয়েছি। এই গাছ-গাছালির ফল ফলাদি বিক্রি করে আমার সংসার চলে। সব গাছ পুড়ে মরে যাচ্ছে। ফল পুড়ে ঝরে যাচ্ছে। পাতা পর্যন্ত ঝরে যাচ্ছে। তেজপাতা শুকাতে শুকাতে তিনি এসব কথা বলছিলেন। আর হা-হুতাশ করে বলছিলেন ৮/৯ জনের সংসার এখন কিকরে চালাবো। পাশের বাড়ি সুজনের স্ত্রী রুমিচাও এ ধরনের অভিযোগ করেন।
কৃষক ওবায়দুল, সুজন, রেজাউল, হাসান, মিজান, খলিল, জলিল, সেলিম, মতিয়ার, সাইদুল, জসিম, আনোয়ার, ছলেমান, ইউছুপ, মানিক, শাহদাত, আফজাল, বিল্লাল, আঃ রহমান, কাদের ,লেদু, লেদা, আসাদসহ পলাশি মাঠপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক কৃষকের মাঠের ফসল, সবজি, গাছপালা, ফল-ফলাদির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
ক্ষতির বিস্তার পাশের বাসুদেব ও দোস্তপুর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান হফিজ উদ্দীন জানান।
ক্ষতির পরিমাণ দশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা ধারনা করছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের ক্ষতিপূরণ ও ভাটাটি উচ্ছেদের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হেসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাবার পর ভাটা মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কয়েকজনের সাথে বৈঠক করে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের পর ক্ষতি পূরনের একটি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ভাটা উচ্ছেদ সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, আমার অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করার পর ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
এদিকে এলাকায় গুঞ্জন চলছে যে ভাটা মালিক কৃষি অফিসকে ইতোমধ্যে ম্যানেজ করে ফেলেছে। ফলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন ও ক্ষতি পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে সাহা ইটভাটার মালিক সনাতন সাহা বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)