মণিরামপুরে স্কুলের জমি স্ত্রীর নামে লিখে দিলেন সভাপতি!
যশোরের মণিরামপুরের জিএইচ পাড়দিয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শতক জমি স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে নিবন্ধন করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের সভাপতি কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। সেই জমিতে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭টি দোকান ঘর নির্মাণ করছেন সভাপতি। এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।
রোববার (২০ নভেম্বর-২০২২) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার সরেজমিন তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে ঘুঘুরাইল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুছ আলী বলেন- মাদরাসা শিক্ষক কামরুজ্জামান পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টানা ৫ বারের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এ সুযোগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের সহযোগিতায় মণিরামপুর-রাজগঞ্জ সড়ক সংলগ্ন প্রতিষ্ঠান চত্ত্বরে ৩৬২ খতিয়ানের ১০ শতক জমি সভাপতি নিজের স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম, শ্যালিকা রেহেনা খাতুন ও শ্যালক বিল্লাল হোসেনের নামে লিখে দিয়েছেন। এছাড়া সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ও সারিবদ্ধ গাছ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে।
ইউনুস আলী বলেন- ২০১৯ সালের দিকে সভাপতি এ জমি নিকট আত্মীয়দের নামে নিবন্ধন করে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি সেখানে দোকান ঘর তোলার কাজ শুরু করায় জমি লিখে দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে গেছে। আমরা বিচার চেয়ে ইউএনও’র কাছে আবেদন দিছি। আগামী বুধবার (২৩ নভেম্বর-২০২২) ইউএনও অফিসে সভাপতি ও হেডমাস্টারকে ডেকেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সভাপতি বলেন- ২০১৯ সালে জিএইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪ তলা ভবন আসে। ভবন নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হয়। বিদ্যালয়ের তহবিলে টাকা ছিলো না। এজন্য তখন বিদ্যালয়ের ডোবা জমি বিক্রির প্রয়োজন হয়। সেখান থেকে ৭ শতক জমি বিক্রির জন্য নোটিশ ঝুলিয়ে দিই। আগ্রহী ক্রেতারা ৫ লাখ টাকার বেশি দাম দিতে চাননি। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য ৮ শতক জমি কিনতে ৮ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল।
সভাপতি বলেন- বাইরের কাঙ্খিত ক্রেতা না মেলায় আমার অবসরপ্রাপ্ত বিশেষ বাহিনীর সদস্য শ্যালক বিল্লাল হোসেনের কাছে ৩ শতক, শ্যালিকা রেহেনার কাছে আড়াই শতক ও আমার স্ত্রী হোসনেয়ারার কাছে দেড় শতক মোট ৭ শতক জমি ৮ লাখ টাকায় বিক্রি দিই। প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর ও তখনকার কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করে সব করা হয়েছে। এ সবের প্রমাণ আছে।
কামরুজ্জামান বলেন- এলাকার কিছু লোক শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে এসব করছে। ৭ শতক জমি বিক্রি করেছি। কিন্তু তারা অভিযোগে ১০ শতক লিখেছে।
এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। রোববার তিনি বিদ্যালয়ে হাজির না থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। অবৈধভাবে জমি বিক্রির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন- অভিযোগ পেয়ে রোববার সরেজমিন তদন্তে গিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে পাওয়া যায়নি। ৭ শতক জমি বিক্রির সত্যতা মিলেছে।
বিকাশ সরকার বলেন- এভাবে সভাপতি বা প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি করতে পারেন না। জমি বিক্রি করতে হলে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিবের অনুমতি নেওয়া দরকার ছিলো।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবির হোসেন বলেন- অভিযোগ পেয়ে আগামী ২৩ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক ও সভাপতিকে ডেকেছি। তারা ব্যাখ্যা দিলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)