মাসুদ রানা সিরিজের স্বত্ব আবদুল হাকিমের: হাইকোর্ট
সেবা প্রকাশনীর ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানা স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমের বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রুল শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত।
মাসুদ রানা সিরিজের বইয়ের স্বত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই চলতি বছরের আগস্টে না ফেরার দেশে চলে যান জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক শেখ আবদুল হাকিম।
সেবা প্রকাশনীর ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানা স্বত্ব শেখ আবদুল হাকিমকে দিয়েছিল কপিরাইট অফিস।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’ সিরিজের কিছু বইয়ের বিষয়ে কপিরাইট অফিসের দেওয়া আদেশ এক মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে, কপিরাইট অফিসের এই সিদ্ধান্ত কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিলেন আদালত।
কপিরাইট অফিসের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
গত বছরের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ দাখিল করেন।
তুমল জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’। এই বিখ্যাত সিরিজটির লেখক হিসেবে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। সবাই তাই জানত। কিন্তু শেখ আবদুল হাকিম নিজেকে এই সিরিজের অধিকাংশ বইয়ের লেখক হিসেবে দাবি করে কপিরাইট আইনে মামলা করেন।
দীর্ঘ প্রায় এক বছরের আইনি লড়াই শেষে গত ১৪ জুন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস এই মামলায় আবদুল হাকিমের পক্ষে রায় দেয়।
রায়ে বলা হয়, গোয়েন্দা সিরিজ মাসুদ রানার প্রথম ১১টি বইয়ের পরের ২৬০টি বইয়ের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন নন। এর লেখক হলেন শেখ আবদুল হাকিম।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেছিলেন, শেখ আবদুল হাকিমের দাবিকৃত ২৬০টি মাসুদ রানার বইয়ের মধ্যে একটি এবং কুয়াশার ৫০টি বইয়ের মধ্যে ছয়টিতে লেখক হিসেবে তার নামে কপিরাইট করা আছে। বাকিগুলোর কপিরাইট করা নেই। তবে সেগুলো তার লেখা এটা তিনি প্রমাণ করেছেন।
কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৯ জুলাই শেখ আবদুল হাকিম অভিযোগ করার পরে অভিযোগকারী ও প্রতিপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে ওই বছরের ১১ ও ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৪ নভেম্বর শুনানি হয়।
শুনানিতে উভয়পক্ষ তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। দাখিলকৃত অভিযোগের বিষয়ে প্রতিপক্ষ লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। প্রতিপক্ষের উক্ত লিখিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাদী পুনরায় নিজের স্বপক্ষে লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করেন। পরবর্তীতে অভিযোগকারীর দাখিলকৃত যুক্তির বিষয়ে প্রতিপক্ষ পুনরায় লিখিত যুক্তিতর্ক পেশ করেন।
বিষয়টি বেশ জটিল এবং দেশের প্রকাশনা শিল্পের ক্ষেত্রে লেখক ও প্রকাশকের পারস্পরিক সম্পর্কের গুরুত্ব বিবেচনা করে এর সন্তোষজনক ও সুষ্ঠু সমাধানের উদ্দেশ্যে অভিযোগের বিষয়ে দেশের বিখ্যাত ও প্রথিতযশা কয়েকজন লেখক ও প্রকাশক এবং সেবা প্রকাশনীর সাবেক ব্যবস্থাপকের লিখিত মতামত চাওয়া হয়।
যাদের মধ্যে ছিলেন লেখক বুলবুল চৌধুরী ও শওকত হোসেন, প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান এবং সেবা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক ইসরাইল হোসেন খান। তাদের লিখিত মতামতের ওপর ভিত্তি করেই কপিরাইট অফিস ওই রায় দেয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)