ম্যান ইউকে হারিয়ে শীর্ষে ফিরল লিভারপুল
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সত্যিই বুঝি মোহামেদ সালাহর প্রিয় প্রতিপক্ষ। ম্যাচ শুরু হতেই গোল করিয়ে ও করে সেটাই যেন প্রমাণ করলেন তিনি। সতীর্থের গোল খরা কাটার দিনে আলো ছড়ালো পুরো লিভারপুল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে উড়িয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠে এলো ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
অ্যানফিল্ডে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচজুড়ে আধিপত্য ধরে রেখে ৪-০ গোলে জিতেছে লিভারপুল। সালাহ জোড়া গোল ছাড়া জালের দেখা পেয়েছেন দলটির আক্রমণত্রয়ীর বাকি দুজনও, লুইস দিয়াস ও সাদিও মানে।
লিগে গত শনিবার নরিচ সিটির বিপক্ষে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকে ৩-২ গোলে জিতেছিল ইউনাইটেড। গত মাসে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষেও তিন গোল করেছিলেন তিনি।
পর্তুগিজ তারকার কাঁধে চেপে শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করার আশায় ছিল দলটি। কিন্তু নবজাতক ছেলেকে হারিয়ে রোনালদো নিজেই আজ দিশেহারা।
দলের সেরা তারকাকে ছাড়া ইউনাইটেড পারল না ন্যুনতম লড়াইটুকুও করতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগোমী আসরে তাদের খেলার সম্ভাবনাও আরও মিইয়ে গেল।
লিগে টানা ১০ জয়ের পর আগের রাউন্ডে ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে দুবার পিছিয়ে পড়ে ২-২ ড্র করেছিল লিভারপুল। এর ছয় দিন পর গত শনিবার এফএ কাপের সেমি-ফাইনালে তারা পেপ গুয়ার্দিওলার দলকেই ৩-২ গোলে হারিয়ে দেয়। এবার এই দারুণ জয়ে লিগে সিটির চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে গেল লিভারপুল। অবশ্য আজ বুধবার ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিওনের বিপক্ষে জিতলেই আবার শিরোপা লড়াইয়ের লাগাম হাতে নেবে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।
নামের ভারে দুই দল একই সারিতে।
তবে গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্স ও সাফল্য বিবেচনায় ব্যবধানটাও বেশ পরিষ্কার। আর ম্যাচ শুরু হতেই অনায়াসে ইউনাইটেডের রক্ষণ গুঁড়িয়ে যেভাবে এগিয়ে যায় লিভারপুল, তাতে পার্থক্যটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পঞ্চম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে ডি-বক্সে থ্রু পাস দিলেন মানে। গতিতে সবাইকে পেছনে ফেলে বল পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় ছয় গজ বক্সে বাড়ালেন সালাহ। আর ছুটে গিয়ে জোরাল শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেন কলম্বিয়ার ফরোয়ার্ড দিয়াস। এগিয়ে গেল লিভারপুল।
এরপর যেন আরও ফিকে হয়ে পড়ে ইউনাইটেড। প্রত্যাশিত চাপ ধরে রেখে ২২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকরা। এই গোলেও জড়িয়ে দারুণ ছন্দে থাকা মানের নাম। ডিফেন্ডারদের ওপর দিয়ে বাড়ানো তার দারুণ ক্রস ডি-বক্সে ডান পায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সঙ্গে লেগে থাকা দিয়োগো দালোতকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বাঁ পায়ের প্লেসিং শটে গোলটি করেন সালাহ।
এক মাসেরও বেশি সময় ও ৬ ম্যাচ পর জালের দেখা পেলেন তিনি। ক্লাবের হয়ে তার আগের তিনটি গোল ছিল পেনাল্টি থেকে, স্পট কিক বাদে সবশেষ গোল করেছিলেন গত ১৯ মার্চ। একসঙ্গে ‘দুই খরা’ কাটালেন মিশরের এই স্ট্রাইকার। কোণঠাসা ইউনাইটেড ৩৩তম মিনিটে পায় প্রথম কর্নার। যদিও তাতে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি তারা। একের পর এক আক্রমণে ৩৫তম মিনিটে আবারও জালে বল পাঠান দিয়াস, তবে পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন তিনি। প্রথম ৪৫ মিনিটে লিভারপুলের দাপটের সামনে কোনো জবাবই যেন জানা ছিল না ইউনাইটেডের। সংখ্যার চিত্রেও সেটা পরিষ্কার; এই সময়ে লিভারপুল ৯ শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারে তিনটি, সেখানে ইউনাইটেড কোনো শটই নিতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের গতি কিছুটা কমে আসে। সেই সুযোগে আক্রমণে উঠতে থাকে সফরকারীরা। তবে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারছিল না তারা। ৫৫তম মিনিটে গোলে দলের প্রথম শট নেন জ্যাডন স্যানচো, অনায়াসে বল হাতে জমান আলিসন। ৬৮তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে স্কোরলাইনে নাম লেখান লিভারপুল আক্রমণত্রয়ীর আরেক তারকা মানে। বাঁ দিক থেকে দিয়াসের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন সেনেগালের ফরোয়ার্ড। আসরে এটি তার ১৪তম গোল। ৮৫তম মিনিটে ইউনাইটেডের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন সালাহ। বাঁ থেকে দিয়োগো জটার থ্রু পাস বক্সে বাঁ পায়ের আলতো ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শট নেন তিনি। স্লাইডে ঠেকানোর চেষ্টা করা ডিফেন্ডার অ্যারন ওয়ান-বিসাকার পায়ে লেগে বল আগুয়ান দাভিদ দে হেয়ার ওপর দিয়ে জালে জড়ায়।
আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতার গোল বেড়ে হলো ২২টি। ইউনাইটেডের বিপক্ষে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এই নিয়ে সবশেষ ৬ ম্যাচে ৯ গোল করলেন সালাহ। মৌসুমে দুইবারের দেখাতেই ইউনাইটেডের জালে গোল উৎসব করল লিভারপুল। গত অক্টোবরে আসরে প্রথম পর্বে সালাহর হ্যাটট্রিকে ৫-০ গোলে জিতেছিল ‘অল রেড’ নামে পরিচিত দলটি। এই নিয়ে লিগে সবশেষ আট দেখায় অপরাজিত রইলো তারা, পাঁচ জয় ও তিন ড্র।
শীর্ষে ওঠা লিভারপুলের ৩২ ম্যাচে ২৩ জয় ও সাত ড্রয়ে পয়েন্ট হলো ৭৬। এক ম্যাচ কম খেলা সিটির পয়েন্ট ৭৪। ৩০ ম্যাচে ৬২ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে চেলসি। ৩২ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে টটেনহ্যাম। ৩১ ম্যাচ খেলা আর্সেনালের সমান ৫৪ পয়েন্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। কিন্তু গোল ব্যবধানে পিছিয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছে ৩৩ ম্যাচ খেলা রালফ রাংনিকের দল।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)