রাত পোহালেই পৌর নির্বাচন, কে হচ্ছেন সাতক্ষীরার পৌর পিতা!
রাত পোহালেই সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকা। সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে মক ভোটিং। প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় মুখরিত গোটা সাতক্ষীরা পৌর এলাকা। সর্বস্তরে চলছে ভোটের আলোচনা।
সাধারণ মানুষ শান্তি চায়, চায় উন্নয়ন। তারা চায় নাগরিক অধিকার। এখনই সুযোগ, সময় এসেছে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার। কিন্তু কে নাগরিকদের এসব অধিকার ও দাবি ফিরিয়ে দিতে পারবেন সেটি নির্ধারণ করবে সাতক্ষীরা পৌরবাসী।
বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন মোট ৭৯ হাজার ৬ হাজার ৩৪ জন ভোটারের মধ্যে ৫১ হাজার ৬২০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন বিএনপির প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতীক) তাজকিন আহমেদ চিশতি ১৬ হাজার ৪৭০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী মো. আজহার হোসেন পেয়েছিলেন ১২ হাজার ৮৭৩ ভোট। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাছিম ফারুক খান মিঠু ১২ হাজার ৫৩২ ভোট পেয়ে ৩য় অবস্থানে ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের (নৌকা প্রতীক) নিয়ে মো. সাহাদাৎ হোসেন ৯ হাজার ৭২ ভোট পেয়েছিলেন।
২০২১ সালে সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ৮৯ হাজার ২২৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৩ হাজার ৪১৮ জন ও নারী ভোটার ৪৫ হাজার ৮০৬ জন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ নাসেরুল হক, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এসএম মুসতাফীজ উর রউফ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক যুবদল নেতা নাছিম ফারুক খান মিঠু ও জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী মো. নুরুল হুদা। এছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মোট ৭৫ জন প্রার্থী তাদের মোনানয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে সাত নং ওয়ার্ডে রেজাউল করিম সংবাদ সস্মেলন করে বৃহস্পতিবার তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। নির্বাচনে ৮৯ হাজার ২২৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে নির্বাচন অফিস জানিয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার ভোটার ভোট প্রদান করতে পারেন। ৫ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ভোট যদি সমবণ্টন করা হয় তাহলে প্রত্যক ১৩ থেকে ১৪ হাজার ভোট পেতে পারেন।
উল্লেখ্য, এবছর জাতীয় পার্টির পক্ষে কোন প্রার্থী না থাকায় বিপুল একটি ভোটের অংশ যে কোন একজন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও ১৪দলের সমন্বয় সভায় জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন সবাই।
সাধারণ ভোটার ও নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, বিগত ২০১৫ সালের সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতি বিজয়ী হয়েছিলেন এবং ৫ বছর সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করেছেন। এবারও বিএনপি থেকে তিনিও মনোনয়ন পেয়েছেন। বিগত ৫ বছর জনসাধারণের সাথে সম্পর্কের উপর নির্ভর করছে তার এবারের সফলতা।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গত নির্বাচন প্রার্থী ছিলেন মো. সাহাদাত হোসেন। এবছর কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ নাসেরুল হক। যিনি সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক সফল চেয়ারম্যান মরহুম শেখ আশরাফুল হকের পুত্র। শেখ নাসেরুল হক সৎ নিষ্ঠাবান হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পরিচিত।
আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নাছিম ফারুক খান মিঠু গত নির্বাচনে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী তাজকিন আহমেদ চিশতির থেকে ৩ হাজার ৯৩৮ ভোটের ব্যবধানে ৩য় অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু বর্তমান তার অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিগত দিনগুলোতে তিনি সাতক্ষীরার মানুষের সাথেই ছিলেন। সর্বস্তরের মানুষের সাথে নাছিম ফারুক খান মিঠুর আচরণই নির্ধারণ করবে এ নির্বাচনে তার ফলাফল।
অন্যদিক থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মো. নুরুল হুদা। সাতক্ষীরাবাসীর জন্য এযাবত কি কাজ করেছেন তা জনগণই জানেন। সাতক্ষীরা ও পৌরবাসীর জন্য মো. নুরুল হুদার পূর্বের কর্মকান্ডের উপরই আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি নিধার্রণ হবে তার ফলাফল।
সর্বশেষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. এস এম মুসতাফীজ উর রউফ। দলীয় প্রতীক হাতপাখা নিয়ে তিনি লড়ছেন সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন। সাধারণ মানুষ ও সাতক্ষীরা পৌরসভাকে তিনি কি উপহার দিবেন তার উপরই নির্ভর করছেন নির্বাচনী ফলাফল।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্ণিং অফিসার মোঃ নাজমুল কবীর জানান, রোববার সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তবে প্রতিটি বুথে যে পরিমান পুলিশ, বিজিবি ও আনছার -ভিডিপি নিয়োগ করা হবে সে তালিকা শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)