সাতক্ষীরায় গড়ে উঠেছে শতাধিক শুঁটকিপল্লি, মাসে আয় কোটি টাকা
আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক শুঁটকিপল্লি রয়েছে। মিষ্টি পানির দেশি মাছের শুঁটকিপল্লি বলে পরিচিত সাতক্ষীরার বিনেরপোতা। এ শুঁটকিপল্লিতে জেলেদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ পল্লিতে এখন সারি সারি শুকানো হচ্ছে নানা জাতের মাছ।
এখান থেকেই খাবার উপযোগী হয়ে শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। তবে জেলেরা দাবি করেন সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানি হলে তারা আরও লাভবান হবেন। সূত্রে জানায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি প্রায় শতাধিক শুঁটকিপল্লিতে ১০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এখানের প্রতিটি শুঁটকিপল্লি হতে প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ মণ মাছ রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকিপল্লিতে নিয়ে আসার পর নারী-শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন।
এরপর মাছগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। নদী থেকে চিংড়ি, সিলবারকাপ, তেলাপিয়া, লইট্টাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ একসঙ্গে কিনতে হয় এবং দাম ১৫০ শত থেকে ২৫০ শত টাকা। শুকানোর পর দুই-আড়াই কেজি শুঁটকি বিক্রি করে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা লাভ থাকে। এখানকার শুঁটকিতে কোনো ধরনের বিষ-কীটনাশক ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা হয়।
এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা থাকায় এখান থেকে শুঁটকি চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা, বরিশাল ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুড়ি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা অন্যতম। এ ছাড়া চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রয়েছে প্রচুর চাহিদা। বর্তমানে প্রতি কেজি ছুড়ি মাছের শুঁটকি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার, মাইট্টা ৬০০ থেকে ১ হাজার, লইট্টা ৮০০ থেকে ৯০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এখানকার শুঁটকিপল্লির মাছের গুঁড়ি সারা দেশে পোলট্রি ফার্ম ও ফিশ ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বিনেরপোতা শুঁটকিপল্লিতে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলে ও নারী-পুরুষ কাজ করছেন। সেখানে প্রায় কয়েকটি ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে।
পল্লিতে কেউ মাছ মাচায় রাখছেন, কেউ মাচায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউবা শুকনো মাছ কুড়িয়ে জমা করছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন চরের শুঁটকিপল্লিতে শুঁটকি উৎপাদন শুরু করেছে। আশার চর শুটকিপল্লির সুসান্ত বলেন, ‘নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় এ বছর শুঁটকি উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। তা ছাড়া এ বছর কাঁচা মাছের চাহিদা বেশি, দাম কম থাকায় শুঁটকিতে লাভ ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে সরকারিভাবে দেশে-বিদেশে এই শুঁটকি রপ্তানি হলে খুব লাভবান হওয়া যাবে।’
সাতক্ষীরা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ সাতক্ষীরার এসব এলাকা শুঁটকি মাছের জন্য উপযোগি। এই পেশাকে আরও আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)