সাতক্ষীরার অপরিপক্ব আমে সয়লাব সারাদেশের বাজার
বৈরী আবহাওয়া ও ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাব পড়েছে সাতক্ষীরার আমের ফলনে। ঘূর্ণিঝড় আসছে, এমন খবরে আতঙ্কিত হয়ে আগেভাগেই গাছ থেকে আম নামিয়েছেন চাষিরা। ফলে অপুষ্ট ও অপরিপক্ব আমে সয়লাব সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার।
প্রশাসনিক তৎপরতা থাকার পরও গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বে, গোলাপখাস, ক্ষীরসরাই, বৈশাখিসহ নানা জাতের অপরিপক্ব আমে ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হচ্ছে। তারপর এসব আম পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
জ্যৈষ্ঠ আসার অগেই সাতক্ষীরার বাজারে উঠতে শুরু করে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বেসহ সুস্বাধু বিভিন্ন জাতের আম। আবহাওয়া আর মাটির গুণাগুণের কারণে দেশের অন্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগেভাগেই পাকে।
সাতক্ষীরা কুখরালী গ্রামের আমচাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৮ বিঘা জমিতে এ বছর আম চাষ করেছি। এ বছর গাছে মুকুল আসার আগে থেকেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে আম উৎপাদন কম হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির আঘাত হানার খবরে আতঙ্কিত হয়ে আমচাষিরা অপরিপক্ব আম আগেভাগে নামিয়ে ফেলেছেন। মৌসুম শুরুর আগেই অপুষ্ট এসব আমে এখন বাজার সয়লাব। গত বছর যে আম ২৮০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে, সেই আম চলতি বছর ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে আমচাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আর এ বছর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি ৫ মে গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে। ১৬ মে থেকে হিমসাগর এবং মে মাসের শেষে ন্যাংড়া আম পাড়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে চাষিরা বাগান থেকে আগেভাগেই হিমসাগর ও ন্যাংড়া আম পেড়েছেন।
সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, বাজারে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বে, গোলাপখাস, ক্ষীরসরাই, বৈশাখিসহ নানা জাতের আমে ভরপুর হয়ে উঠেছে বাজার। গ্রামাঞ্চল থেকে ভ্যান ও বিভিন্ন পরিবহনযোগে শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের আড়তগুলোয় আসছে এসব আম।
তিনি আরও বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর আমের ফলন গত কয়েক বছরের তুলনা অনেক কম। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে আগাম আম ভেঙে বিপাকে পড়েছেন আমচাষিরা। অপুষ্ট আম নানা কেমিক্যাল দিয়ে বাজারে ওঠানো হচ্ছে। এসব আম পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রশাসনিক তৎপরতা থাকার পরও কেমিক্যাল দেওয়া থামছে না।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কল্যাণশীষ জানান, যেসব কেমিক্যাল দিয়ে অপুষ্ট আম পাকানো হচ্ছে, তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। লিবার, কিডনি, পাকস্থলী এমনকি ক্যানসারের জীবাণু বহন করে এসব কেমিক্যাল। তাই ফল খাওয়ার আগে মানুষকে সচেতন হতে হবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর আমের ফলন কিছুটা কম। আমের যে রং হওয়ার কথা, তা হয়নি। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে আমচাষিরা আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়ো করে আম পেড়ে ফেলেছেন। হঠাৎ বাজারে আমের চাপ বাড়ায় দামও কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর এক হাজার আম-বাগান আমরা নির্ধারণ করেছি। ওই সব বাগান থেকে বাছাই করে বিদেশে আম পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, কেমিক্যালযুক্ত অপুষ্ট আম যাতে বাজারে না ওঠে, সে ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)