সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

জীবন রক্ষায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কথা বলায় জীবন বিপন্ন ব্লগার, এক্টিভিস্টের

শুধুমাত্র মানুষের অধিকারের পক্ষে, নারীদের পোশাকের স্বাধীনতার কারনে, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লেখালিখির কারনে পালিয়ে জীবন রক্ষা করছেন একজন অনলাইন এক্টিভিস্ট, মানবাধিকারকর্মী, বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার জনাব এস এম সাইফুর রহমান। তিনি পেশায় একজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিদ। ডি ফাইভ ক্রিয়েশান নামে নিজের একটি স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান আছে যা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়দের একটি। অবসর সময়ে তিনি তার অনলাইন ব্লগে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালিখি করেন। ধর্মীয় মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে তিনি দুই দশক ধরে স্বোচ্চার। নিজেকে মানববাদী বা হিউম্যানিস্ট দাবী করা এই ব্লগার অধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার, নারী অধিকার, শিশু অধিকার, বাক-স্বাধীনতার পক্ষেও নিয়মিত লেখালিখি করেন। এই লেখালিখিই এখন তার জীবনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভয়ংকর এক দুঃসময় অতিক্রম করছেন তিনি, অন্য মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে তার নিজের অধকারই আজ ভুলন্ঠিত। নিজের বাড়ি ছেড়ে বন্ধুদের বাড়ি, এখানে সেখানে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। বাড়িতে থাকলেও বাজার করার জন্য, অফিসের কাজে, দৈনন্দিন প্রয়োজনে বাইরে তেমন বের হন না। পরিবারের সবাই তাকে নিয়ে শংকিত।

দুই শিশুসন্তান ও এক স্ত্রী নিয়ে তার ছিল সুখের সংসার। কিন্তু এখন সেই সুখের জীবনে ছেদ ঘটিয়েছে জঙ্গি, মৌলবাদীদের একের পর এক নির্যাতন ও হত্যার হুমকি। আগে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী গোষ্ঠীর গালিগালাজ, হুমকিকে পাত্তা না দিলেও এখন নিয়মিত হত্যার হুমকি পেতে থাকায় তিনি নিজে ও পরিবারের লোকজন শংকিত। তার পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পরিবার দেখাশুনার পাশাপাশি তিনি কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন অনেক তরুণ, যুবকদের। কিছু সমাজসেবামূলক বিশেষ করে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়েও তিনি কাজ করেন। এই সবার জীবনই আজ বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। পরিবারের লোকজন এখন কোন লেখালেখিই করতে দেন না। বাবার জীবনের কোন সম্ভাব্য ক্ষতির কারনে দুই শিশুসন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

জনাব সাইফুর স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, পুলিশ ও প্রশাসনে তার বন্ধু ও শুভান্যুধায়ীদের সঙ্গেও বলেছেন কথা। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়কে সবাই খুব সংবেদনশীল হিসাবে দেখে। ৯০% মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ, প্রশাসন সবাই ধর্মীয় বিষয়ে খুব হিসাব করে কাজ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক উর্দ্ধতন সরকারী কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন এসব ক্ষেত্রে পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়ে না। পুলিশের অভিযোগের খাতা থেকেও যে তার বর্তমান অবস্তান প্রকাশ্য হয়ে যাবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই। অন্য অনেক ব্লগার, এক্টিভিস্টের মতো তারও উচিৎ এই দেশ ছেড়ে অন্য কোন নিরাপদ দেশে আশ্রয় নেয়া। কিন্তু জনাব সাইফুর উল্টো প্রশ্ন রাখেন প্রতিবেদকের কাছে, এই দেশের জন্যই তিনি তার জীবনের অধিকাংশ মূল্যবান সময় কাটিয়েছেন, দেশে বসেই তিনি দেশের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার মূল্যবান বৈদেশিক মূদ্রা নিয়ে এসেছেন। এখানেই তার শৈশব, কৈশর ও শিকড়, বাংলা ভাষা ছাড়া তিনি তার কথাও ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারবেন না, কোথায় যাবেন তিনি?

এই মাসের ০৭ তারিখে জনাব এস এম সাইফুর রহমান আবারো প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি পেয়েছেন মোহাম্মদ ইসমাইল নামের এক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে। মাওলানা মামুনুল হকের ছবি প্রোফাইলে সংযুক্ত করা এই হুমকিদাতা এর আগেও অসংখ্যবার তাকে পিটানো ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন। অন্যদেরকে উৎসাহিত করেছেন যেখানে পাওয়া যাবে প্রকাশ্যে জনাব সাইফুরকে হত্যা করতে। সরকারের একজন সাবেক সচিব ও মন্ত্রী পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার জনাব আজিজুর রহমান জানান, এই সমস্ত হুমকিকে সহজভাবে নিলে চলবে না, নিজেকেই নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এর আগেও হুমকি দিয়ে একাধিক ব্লগারকে হত্যা ও জখম করা হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে দুর্বল ভাবার সুযোগ নেই। পথে-ঘাটে চলার সময়, এমনকি বাসায়, অফিসে ঢুকেও নির্মমভাবে প্রকাশ্য ও চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে তারা হত্যা করেছে অনেক মূল্যবান প্রতিভা, বিজ্ঞান লেখককে। আর কোন প্রতিভা যেনো জঙ্গিদের হাতে ঝরে না যায় সেজন্য তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে বলেছেন।

২০১৩ সালে জঙ্গিরা প্রকাশ্যে ৮৪ জন ব্লগার, এক্টিভিস্টের তালিকা করে তাদের হত্যার ঘোষনা দেয়। অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর বাবু, নাজিমুদ্দিন সামাদ, নীলয় নীল, রাজীব হায়দার, অধ্যাপক রেজাউল করীম সিদ্দিকী, শাহজাহান বাচ্চু, ফয়সাল আরেফিন দীপনসহ অনেকে রাস্তায় ও বাড়িতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে মাথায় ও ঘাড়ে গুরতর জখম হন বন্যা আহমেদ। তারা দুজনই ছিলেন আমেরিকার নাগরিক। জন্ম দেশে এসেছিলেন বাংলা বই মেলায় অংশ নিতে। মেলা থেকে বের হওয়া মাত্রই শত শত মানুষ, পুলিশ, সিসি ক্যামেরার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে পিছন থেকে চাপাতি দিয়ে ঘাড়ে কোপ দেয়া হয়। অভজিৎ রায় ঘটনাস্থলেই মারা যান, দীর্ঘ দিনের চিকিৎসায় বন্যা আহমেদ জীবন ফিরে পান। এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্মম আক্রমনের শিকার হন অধ্যাপক ও নাস্তিক লেখক ডক্টর হুমায়ুন আজাদ, যে হামলার জেরে তিনি পরবর্তীতে মারা যান। প্রায় সব ক্ষেত্রেই জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার-আল-ইসলাম ও নব্য জেএমবি এসব হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে। এরা আল কায়েদা ও আই এস মতাদর্শে চালিত দেশীয় জঙ্গি গোষ্ঠী। এদের ভয়ে জীবন বাঁচাতে অনেক ব্লগার, এক্টিভিস্ট জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে অন্যদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বিদেশে আশ্রয় নেয়া ব্লগার এক্টিভিস্টদের মধ্যে আসিফ মহীউদ্দিন, ইব্রাহীম খলিল সবাক, অমি রহমান পিয়াল, মাহবুব আলম কিন্তু, আসাদ নূর, মাহমুদুল হাসান মুন্সি, সুসুপ্ত পাঠক, সানিউর রহমান উল্লেখযোগ্য।

এতো হুমকি, জখম ও হত্যার পরও হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া ধীরগত‌‌‌িতে চলায়  নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাইফুর রহমানের মতো অন্য ব্লগার, মুক্তমত ও বাক-স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলা এক্টিভিস্টরা। অন্যদিকে তালিকা করে হত্যার হুমকি এবং ধারাবাহিকভাবে একাধিক জনকে হত্যা করা হলেও নিরাপত্তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় উদ্বিগ্ন ব্লগারা। এ কারণেই অনেকেই প্রাণনাশের আশঙ্কায় আত্মগোপনে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ-কেউ মনে ব্লগাররা  সেক্যুলার মতাদর্শে বিশ্বাস করে ধর্মীয় গোঁড়ামি, মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এ পর্যন্ত ব্লগার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটকরা বলেছেন ইসলামবিদ্বেষী লেখার কারণে ‘নাস্তিক’ ব্লগারদ‌‌ের হত্যা করা হয়েছে। বর্তমানে ব্লগার বলতেই নাস্তিক, ইসলামবিরোধী পরিচয় দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ঢালাওভাবে প্রচার  করা হচ্ছে, যারা ব্লগে লেখেন, তারা সবাই নাস্তিক। এতে সমাজের সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের মনেও ব্লগারদের উপরে একটা বিদ্বেষমূলক মনোভাব তৈরি হচ্ছে । অনেক ইসলামী বক্তা, জঙ্গি ও মৌলবাদীরা ব্লগারদের নাস্তিক হিসাবে আখ্যায়িত করে এবং বাংলাদেশের মুসলিম প্রধান সমাজে নাস্তিকদের নির্যাতন ও হত্যাকে সমর্থন করার মতো মানুষ একেবারে কম নয়। বাংলাদেশের সমাজে ইসলামী বক্তা ও তাদের বক্তব্যের প্রভাব অনেক বেশী।

জনাব সাইফুরকে ইদানিং কিছু লোক অনুসরন করছে বলে তিনি জানালেন। এজন্য তিনি এখন বাড়ি থেকে তেমন বের হন না, অফিসের কার্যক্রমও এক প্রকার থেমে আছে। যে স্টার্ট-আপ নিয়ে একসময় তিনি স্বপ্ন দেখতেন এদেশের শত শত তরুণ, যুবকের কর্মস্থানের সেটির গতি এখন স্থবির। স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যাচ্ছে, উৎসাহ হারাচ্ছেন তিনি। এভাবেই কি দেশের মুক্তমনা মানুষ, অধিকার কর্মী, বিজ্ঞান লেখকেরা হত্যা, গুম, নির্যাতনের শিকার হতে থাকবে ? দেশ ও পৃথিবী হারাতে থাকবে তার প্রতিভাধর মানুষগুলোকে ? পুলিশ বলছে তাদের কাছে অভিযোগ দিলে তারা ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু পুলিশের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন দেশের সচেতন মহল।

একই রকম সংবাদ সমূহ

সাতক্ষীরা শহর শিবিরের উদ্যোগে আন্ত:থানা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের ৫৪ বছর পূর্তিবিস্তারিত পড়ুন

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি ঋণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা কৃষি ঋণ কমিটির বিশেষ সভা অনুষ্ঠিতবিস্তারিত পড়ুন

তালায় বার্ষিক জলবায়ু অভিযোজন সমাবেশ অনুষ্ঠিত

তালা প্রতিনিধি: রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে তালার শাহাপুর উইমেন জব ক্রিয়েশন সেন্টারবিস্তারিত পড়ুন

  • আজীবন সম্মাননা পাওয়ায় সাংবাদিক শেখ আমিনুর হোসেনকে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সংগঠনের অভিনন্দন
  • তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ
  • কলারোয়ায় গো-খাদ্যে বিচুলীর দাম চড়া হাওয়ায়, বিপাকে পড়েছেন গো-খামারিরা
  • সাতক্ষীরায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ করেছে বিজিবি
  • জামায়াতে ইসলামী রমজাননগর ইউনিয়নের আমিরের শপথ টিম গঠন
  • সচিবালয় থেকে চিকিৎসা গাড়ি ও পাসপোর্ট নবায়ন সুবিধা পাবেন সাংবাদিকরা
  • হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির তথ্য দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  • লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার, মা-ছেলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু
  • কলারোয়ায় যুবদলের বর্ধিত সভা
  • সাতক্ষীরা বিজিবির বিশেষ অভিযানে সত্তর হাজার টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ
  • সাতক্ষীরায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বহিষ্কার
  • কেন্দ্রীয় কৃষকদল নেতাকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় সাতক্ষীরায় কৃষক সমাবেশ স্থগিত