স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের আত্মত্যাগ মনে রাখতেই হবে
এবারের নারী দিবস (৮ মার্চ) সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গুরুত্বের সাথেই বলেছিলেন, ‘লিঙ্গ সমতা ছাড়া মহামারীর ধকল সামলে উঠতে পারবে না বিশ্ব। ’ তাই এবছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিলো ‘আজকের লিঙ্গ সমতায় টেকসই আগামী কাল। ’ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীরা আরও বাধার সম্মুখিন হচ্ছে। তাই এই টেকসই পৃথিবীর জন্য এর একটা আশু সমাধানও দরকার।
ঠিক একইভাবে নারীরা যুদ্ধের কারণে আরও অনেক বাধার মুখে পড়ে। মানব সভ্যতার ইতিহাস বলছে, যুদ্ধ সমাজকে বিপর্যস্ত করে। আর এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এই যুদ্ধেও নারী ও অনান্য লৈঙ্গিক সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে। যুদ্ধ কীভাবে লৈঙ্গিকভাবে কোনো একটা শ্রেণিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধও তার সাক্ষী হয়ে আছে।
এই যুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবেই নারীদের পাশবিক নির্মমতার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল পাকিস্তানিরা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ একটা কারণে স্বতন্ত্র ও সম্মানের। যুদ্ধে নারীদের ধর্ষণ এবং এর পরবর্তী জটিলতা; গুরুত্বের সাথে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
১৯৭১, দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটা রক্তক্ষয়ী অধ্যায়।
এই যুদ্ধের মাধ্যমেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। এই যুদ্ধের ইতিহাস ব্যাপক পরিসরে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। সাথে লাখো মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথাও বড় করে দেখানো হয়। তবে সেই ইতিহাসেও পুরুষের আধিপত্য। নারীদের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের বিষয়টিও তাই ইতিহাসের ফাঁক গলিয়ে উপেক্ষিত থাকে।
অথচ এই নারীরাই স্বাধীনতা সংগ্রামে বড় অবদান রেখেছেন। নারী কেবল এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই যাননি, কেবল নির্মমতাই সহ্য করেননি; উল্টো স্বাধীনতার পরও বছরের পর মুখ বুজে থেকেছেন। থেকে গেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সামষ্টিক ইতিহাসের বাইরে। কেবল তাই নয় এই ধর্ষণের কারণে অনেক শিশুও জন্ম নিয়েছে, যাদের পিতা পাকিস্তানি সেনারা; পাকিস্তানীরা বাঙালিদের জাতীয়তার বিশুদ্ধতা নষ্ট করতেই পরিকল্পিতভাবে এমনটা করেছিল।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাঙালিদেরকে ‘সাচ্চা মুসলিমের’ দেশ বানানোর গা শিওরে ওঠা নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও আরেকটা আদেশের আনুষ্ঠানিক কোনো নথি নেই। তারপরও তথ্য বলছে, যে নারীরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছে, হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে তাদের সবাইকে ‘গর্ভবতী’ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইয়াহিয়া ও জেনারেল টিক্কা খান। বলেছিলেন, সাচ্চা পাকিস্তানী জাতি গঠন করতে।
যার ফল হয়েছিল ভয়াবহ। প্রচলিত ইতিহাস বলছে, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে দুই থেকে চার লাখ বাংলাদেশি নারী ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পরই এসব নারীদের সম্মান দিতে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের তিনি বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়াও তাদের বিয়ে দেওয়া, আবার কাউকে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা।
তারপরও অনেক নারী স্বাধীনতা তাদের অবদানের যোগ্য মর্যাদা পাননি। সেই অধিকার আদায়ে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের অবদান ইতিহাসে লিপিবদ্ধ না হলে, মক্তিযুদ্ধের সার্বিক ইতিহাস পূর্ণতা পাবে না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)