৯ বছর পর সমাজসেবা থেকে ফেরত পেলো সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের রেজিস্ট্রেশন
সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশন এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আহ্ধসঢ়;ছানিয়া মিশন এতিমখানা কাম-লিল্লাহ বোর্ডিং এর নামে অবৈধভাবে কমিটি গঠন করে এতিমখানার ফান্ডে থাকা প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা উত্তোলণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় সেই টাকা দিয়ে ওই কমিটিরই বিতর্কিত সদস্য আবু শোয়েব এবেল এর সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরস্থ বিরোধপূর্ণ ও বিতর্কিত মালিকানা জমি দিগুন মুল্যে ক্রয় করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে আহছানিয়া মিশন এতিমখানা কাম- লিল্লাহ বোর্ডিং এর সভাপতি আব্দুর রব ওয়ার্সী, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ ও সহ-সভাপতি শেখ তহিদুর রহমান ডাবলুকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করেছে আবু শোয়েব এবেল।
এদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর কৃতৃক দীর্ঘ তদন্ত শেষে আহছানিয়া মিশন এতিমখানা কাম-লিল্লাহ বোর্ডিং এর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে গত ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশন এর নামে রেজিস্ট্রেশন পূর্নবহাল করায় বিপাকে পড়েছে ওই চক্রটি। এখন তারা নিজেদের রক্ষা করতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে অফিস আদালতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। কেবল চল্লিশ লাখ টাকা তুলে ক্ষ্যান্ত হয়নি ওই চক্রটি ২০১৫ সাল থেকে এতিমখানা পরিচালনার নামে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেছে।
বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে।
একব্যক্তির স্বার্থে এতিমখানার ফান্ড থেকে ৪০ লাখ টাকা তুলে দ্বিগুন দামে কেনা হল বিতর্কিত জমি!
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষা সংস্কারক পীরে কামেল সুলতানুল আউলিয়া হজরত খানবাহাদুর আহ্ধছানউল্লা (র.) সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠার জন্য শহরের মুনজিতপুরে শহীদ নজমুল সরণিতে ১৯৫৪ সালে সাতক্ষীরা আহছ্ধসঢ়;ানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদকের নামে ৪২ শতক জমি ক্রয় করেন। মিশন প্রতিষ্ঠার সময় তিনি নিজ হাতে মিশন পরিচালনার জন্য একটি গঠনতন্ত্র রচনা করেন। গঠনতন্ত্রে অত্র মিশনের অধিনে মাদ্রাসা, এতিমখানা কাম-লিল্লাহ বোর্ডিং, হেফজখানা, লাইব্রেরী, দাতব্য চিকিৎসালয়, ছাপাখানা, গেস্ট হাউজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেন। একইসাথে গঠনতন্ত্রে জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরাকে পদাধিকারবলে সাতক্ষীরা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতির দায়িত্বভার অর্পন করেন। মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সে মোতাবেক মিশনের কমিটির মাধ্যমে অত্র প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচাললিত হয়ে আসছিল। এরমধ্যে ৫/১১/১৯৮৫ তারিখে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সাতক্ষীরা আহ্ধসঢ়;ছানিয়া মিশনের নামে একটি রেজিস্ট্রেশন গ্রহন করে তৎকালিন কমিটি। যার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার- ১৮/৮৫। এই রেজিস্ট্রেশনে পরিচালিত হয়ে আসছিল মিশনের সকল শাখার যাবতীয় কার্যক্রম।
কিন্তু সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব ওয়ার্সী ২২ বছর ধরে কুক্ষিগত করে মিশনের লক্ষ ও উদ্দেশ্য ও পীর কেবলার আদর্শ না মেনে ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিল করায় ২০১৫ সালে তৎকালিন জেলা প্রশাসক ওই কমিটি ভেঙে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জেলার আলোচিত কূখ্যাত রাজাকার মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত আসামী আবাদুল্লাহেল বাকীর জামাতা আব্দুর রব ওয়ার্সী গোপনে এতিমখানার নামে আলাদা ভুয়া সভা দেখিয়ে অনেক সদস্যের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আহ্ছানিয়া মিশনের ৩০ বছরের রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন করেন। তিনি সমাজসেবার তৎকালীন কর্মকর্তা মো. মহসিনের মাধ্যমে ১১/০৩/২০১৫ তারিখে আহ্ছানিয়া মিশন এতিমখানা কাম-লিল্লাহ বোর্ডিং এর নামে করে নেন। মিশনে তিনি না থাকতে পেরে তার অনুগত লোক দিয়ে মিশনের গঠনতন্ত্র, সরকারি গেজেট, পরিপত্র লংঘন করে পৃথক কমিটি গঠন করে একজন সাবেক জন প্রতিনিধিকে ভুল বুঝিয়ে তার সহযোগিতায় আহ্ছানিয়া মিশন এতিমখানা কাম-লিল্লাহ বোর্ডিং এর আলাদা কমিটি গঠন করে এতিমখানা পরিচালনা করতে থাকেন।
পর্যায়ক্রমে এসব বিষয়গুলি জানতে পেরে মিশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২/১০/২০২৩ তারিখে সমাজসেবা অধিদপ্তর, ঢাকা’র উপ-পরিচালক (কার্যক্রম-১) মো. আব্দুল হামিদ সাতক্ষীরায় তদন্তে এসে যাবতীয় অভিযোগের সত্যতা পান। তদন্তে মিশনের নামে জমি, মিশনের নামে রেজিস্ট্রেশন, এমনকি জেলা প্রশাসকে না জানিয়ে মিশনের ১৯৮৫ সালের রেজিস্ট্রেশনটি বেআইনীভাবে এতিমখানার নামে করে নেন এসব বিষয় প্রমান পান। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় উপ- পরিচালক (কার্যক্রম-১) মো. আব্দুল হামিদ মিশনের অনুকুলে রেজিস্ট্রেশন পূর্নবহাল করার সুপারিশ করেন। তার তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে সহমত পোষন করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক ড. রওশন জামাল গত ৮/৪/২০২৪ তারিখে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদনসহ পত্র প্রেরণ করেন। এর প্রেক্ষিতে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সন্তোষ কুমার নাথ ২৪.০৪.২০২৪ তারিখে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের অনুকুলে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশনের রেজিস্ট্রেশন পূর্নবহাল করে এতিমখানা কাম লিল্লাহ বোডিং এর নামের সনদ বাতিল করেন।
এর ফলে মিশনকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তড়িঘড়ি করে তদন্ত চলাকালিন সময়ের মধ্যেই এতিমখানার ফান্ড থেকে ৪০ লাখ উত্তোলণ করে বিতর্কিত জমি ক্রয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে ওই চক্রটি। শুধু তাই নয় মিশনের কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এখান থেকে স্থানান্তর করা যাবেনা বলেও গঠনতন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। এই চক্রটি ২০১৫ সাল থেকে এতিমখানার নামে অর্ধকোটি টাকা সরকারি ক্যাপিটেশন গ্রান্ট উত্তোলন করেছে। এই সময়ের মধ্যে বহু সরকারি টিআর জিআরের অর্থ ও বিভিন্ন
দান অনুদানের অর্থও তছরুপ করা হয়েছে।
বিষয়টি তদন্তাধিন অবস্থায় এবং মিশনের কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মিশন থেকে স্থানান্তর করা যাবেনা এসব বিষয় জেনেও কেন একজন ব্যাক্তির স্বার্থ রক্ষা করতে বিতর্কিত জমি অধিকমুল্যে কেনা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে সাতক্ষীরা আহছানিয়া মিশন এতিমখানা কাম লিল্লাহ বোডিং এর বাতিল হওয়া কমিটির সম্পাদক আব্দুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, তারা নয় বছর ধরে এতিমখানা চালাচ্ছেন। এতিমখানার জমি না থাকায় আলাদা জমি কেনা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশন বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আদালত যাবো। তবে মিশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি আলাদা করা বা আলাদা কমিটি করার কোনো সুযোগ আছে কী না এবিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)