আয়েনউদ্দীন মহিলা মাদ্রাসায় নানা অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন
সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত ভাইস প্রিন্সিপাল ও নৈশপ্রহরী নিয়োগে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার একজন ভাইস প্রিন্সিপাল ও ৪জন কর্মচারীর নিয়োগে গত ৯ ডিসেম্বর লিখিত ও ১৭ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্টিত হয়। ওই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পূর্বে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, অর্থ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠে। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের পর মাদ্রাসার সভাপতি ডা: আবুল কালাম বাবলা নানা অভিযোগে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে গত ১৭ ডিসেম্বর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঐদিন ৫টি পদের মধ্যে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদটি স্থগিত করে বাকি ৪টি পদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ পূর্বক ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ওই ফলাফলে ভাইস পিন্সিপাল পদে মো: আব্দুল আলিম, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদে তামান্নিয়া খাতুন, নিরাপত্তা কর্মী পদে মো: রিপন হোসেন ও নৈশ প্রহরী পদে মো: আব্দুল মাজেদ আলীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য নির্বাচনী বোর্ড সুপারিশ করেন।
নির্বাচনী বোর্ড কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত ওই ৪জনের মধ্যে ভাইস পিন্সিপাল পদে মো: আব্দুল আলিমের নিকট থেকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ৬ লক্ষ টাকা অর্থ বাণিজ্য, ইন্টারভিউ বোর্ডের পূর্ব রাত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার হলে খাতা পরিবর্তন, একে অপরের খাতা দেখা-দেখি, অধ্যক্ষের অর্থ গ্রহণের সময় উপস্থিত শিক্ষককে দিয়ে গার্ড দেওয়াসহ একাধিক অভিযোগ ওঠে। প্রসঙ্গত: ভাইস পিন্সিপাল পদের সুপারিশপ্রাপ্ত মো: আব্দুল আলিম বর্তমানে শহরের কুখরালী আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে কর্মরত আছেন। তিনি গ্রামের বাড়ি থাকা অবস্থায় এবং বর্তমান কর্মস্থালের নারী ঘঠিত একাধিক ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই জন্য তিনি সাময়িক বহিস্কার হয়েছেন। একটি ঘটনা বর্তমানে চলমান রয়েছে বলে জানান কয়েকজন। এ বিষয়ে কুখরালী আহমাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য মো: আবু জাফর বলেন, সহ-সুপার মো: আব্দুল আলিমকে ভালো করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও ভাল হয়নি। ওই মাদ্রাসার সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে ওই মাদ্রাসার আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে চলমান ঘটনার একটি তদন্ত প্রতিবেদন ওই মাদ্রাসার হিতৈষী মো: মাতলুব হোসেন লিয়নের কাছে জমা ছিল বলে জানান ওই মাদ্রাসার কয়েক জন শিক্ষক।
সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার নির্বাচনী বোর্ড কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত ওই আব্দুল আলিমকে সাক্ষাৎকার বোর্ডে আসার পূর্বে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: রুহুল আমিন এবং ঐ মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক যোগসাজশে ৬লক্ষ টাকা চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক ওই দিনে তারা মো: আব্দুল আলিমের নিকট থেকে ২লক্ষ টাকা গ্রহন করেন। উক্ত চুক্তি ও টাকা গ্রহণ সংক্রান্ত একটি অডিও আমাদের হাতে এসেছে।
অন্যদিকে নৈশ প্রহরী পদে সুপারিশপ্রাপ্ত মো: আব্দুল মাজেদ আলীর বয়স ভোটার তালিকা অনুযায়ী বয়স ৪০ বছর। অথচ সরকারের সর্বশেষ জনবল কাঠামো অনুযায়ী চাকরিতে প্রবেশের সময় সীমা নির্ধারণ করেছে ৩৫ বছর। এছাড়া উক্ত মো: আব্দুল মাজেদ আলীর কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তার কথিত ৮ম শ্রেণি পাসের ওই সনদটি জাল বা তৈরী করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আব্দুল মাজেদ আলীর পিতা এশারাত আলী ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: রুহুল আমিন জানান, মো: আব্দুল মাজেদ আলী মিশন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতো। তার বয়স সংশোধনের আবেদন করা হয়েছে। অন্যদিকে এশারাত আলীর কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, মো: এশারাত আলীর ৬জন ছেলে মেয়ের মধ্যে প্রথম মো: জাহাঙ্গীর আলম। তার জন্ম তারিখ ০১-০২-১৯৭৯। এরপর ছালেহা খাতুন। সে আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছে। সেখানে দেওয়া তার জন্ম তারিখটি অধ্যক্ষ সাহেব জানেন। এরপর জন্ম গ্রহন করে মো: আব্দুল মাজেদ আলী। তার জন্ম তারিখ ১৫-০৪-১৯৮২। এরপর ফতেমা খাতুন, আরব আলী ও রেনু। তারা আরও জানায়, মো: আব্দুল মাজেদ আলী তার চাকরির স্বার্থে বয়স কমালে মো: এশারাত আলীর সন্তানদের জন্মের ক্রমিক বিভ্রাট ঘটবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির প্রতিনিধি সাতক্ষীরায় আসেন গত ৮ ডিসেম্বর রাত্র ৯.৩০মিনিটে। এসময় অধ্যক্ষ সাহেব তার সাথে সাক্ষাত করে আবাসিক হোটেল টাইগার প্লাসে রাত যাপন ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে চলে যান। এরপর রাত ১.৩০মিনিটে অধ্যক্ষ মো: রুহুল আমিন নৈশ প্রহরী পদের প্রার্থীর পিতা মো: এশারত আলীকে সাথে নিয়ে আবারো আসেন হোটেলে। এসময়ে তারা গোপনে বৈঠক করেন। এসময় হোটেল থেকে নামতে দেখেন অনেকে। তাছাড়া হোটেলের সিসি ক্যামেরা তার বড় প্রমান। উল্লেখ্য, ডিজির প্রতিনিধি একক ভাবে ঢাকা থেকে প্রশ্নপত্র তৈরী করে তা ফটোকপি করে সাতক্ষীরায় নিয়ে আসেন। সাক্ষাতকার বোর্ডে উপস্থিত অপর ৪জনের কোন প্রশ্নপত্র গ্রহন করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদ্রাসার সুপারিশপ্রাপ্ত ভাইস পিন্সিপাল ও নৈশ প্রহরী পদে সুপারিশ প্রাপ্তদ্বয়ের বিরুদ্ধে এ সব নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল মাদ্রাসার গর্ভানিং বডির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী এবং নিরাপত্তা কর্মী পদে সুপারিশ প্রাপ্তদের সুপারিশ অনুমোদন করে নিয়োগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সাথে ভাইস পিন্সিপাল ও নৈশপ্রহরী পদের প্রার্থীদের ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগের বিষয় তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। যার আহবায়ক-মাস্টার আব্দুল মজিদ, অভিভাবক সদস্য ডা: কবির ও শিক্ষক সদস্য রেজাউল করিম। মাদ্রাসার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ের ওই মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাথে কথা হলে তারা মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে এতটুকু জনিয়েছে-মাদ্রাসার সভাপতি ডা: আবুল কালাম বাবলা অনেকবার নিয়োগের স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি মুক্ত থাকার জন্য প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছিলেন। এর পরও যদি কেউ অপরাধ করে তবে শাস্তি পাওয়াটা স্বাভাবিক।
ভাইস প্রিন্সিপাল ও নৈশপ্রহরী পদে সুপারিশ প্রাপ্তদ্বয় ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে এলাকাবাসি ও নৈশপ্রহরী পদের প্রার্থী মো: রাশেদুজ্জামানের পিতা মো: নজরুল ইসলাম পৃথক ভাবে মাদ্রাসার সভাপতি ডা: আবুল কালাম বাবলার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)