কেশবপুরে ‘বৌদির আইসক্রিম’ ব্র্যান্ডের না হলেও বেশ জনপ্রিয়


সোহেল পারভেজ, কেশবপুর: যশোরের কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া পাঁজিয়া দম্পতির আইসক্রিম ব্র্যান্ডের না হলেও বেশ জনপ্রিয়। বিশ্বনাথ পাল দম্পতির দুধ, চিনি, কাজুবাদাম, কিশমিশ, সন্দেশ, দুধের সর দিয়ে মিশিয়ে হাতে তৈরি আইসক্রিম খুব জনপ্রিয় হয়েছে।
পাঁজিয়া দম্পতির আইসক্রিম সম্পর্কে যানাযায়, দোকানের জন্য আইসক্রিম তৈরিতে বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ কেজি থেকে ১ মণ দুধের প্রয়োজন হয়। নিয়োমিত সকালের দিকে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে দুধ জ্বাল দিয়ে পরিমাণে প্রায় অর্ধেকে আনা হয়। এরপর চিনি যোগ করে ঘনত্ব আরও বাড়ানো হয়। তারপর সন্দেশ, কাজুবাদাম, দুধের সর, কিশমিশ মিশিয়ে আবার জ্বাল দেওয়া হয়। তারপর ঠান্ডা হয়ে গেলে সন্ধ্যার দিকে মিশ্রণটি একবার ব্যবহারের উপযোগী কাপে (ওয়ান টাইম কাপে) ঢালা হয়। শেষে ফ্রিজে রাখা হয়। সকালে থেকে বিক্রি কার হয়। আকারভেদে আইসক্রিমটি ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে শুরুর দিকে দাম ছিল ২ থেকে ৫ টাকা। প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আইসক্রিমের দাম বৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০টি আইসক্রিম বিক্রি করেন ওই দম্পতি। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আনুষঙ্গিক খরচ বাদে ৩ হাজার টাকা লাভ থাকে। তবে দুধসহ আইসক্রিম তৈরির অন্য উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমে আসছে। তবে আইসক্রিম বানাতে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবহার করেন না। স্বল্প পরিসরে সম্পূর্ণভাবে নিজ হাতে তৈরি করেন বলেই এগুলোর স্বাদ ও মান অক্ষুণ্ন থাকে বলে দাবি বিশ্বনাথ ও কাকলি দম্পতির। তাঁরা জানালেন, দুই ঈদের সময় এ আইসক্রিমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তখন কষ্ট বেশি হলেও আইসক্রিম তৈরি করতে ভালোই লাগে। এ ছাড়া অনেকেই পাইকারি দরে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও আপাতত তাঁরা নিজেরাই এ আইসক্রিম বেচতে চান।
বিশ্বনাথ পাল বলেন, বর্তমান আমার বয়স (৪৬) বছর। প্রথম দুধ-চিনি মিশিয়ে হাতে তৈরি আইসক্রিম বানানো শুরু করেন। তমন চাহিদা হত ক্রেতাসাধারণের। কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি কিন্তুু থেমে থাকিনি। তারপর আমি ও আমার স্ত্রী পরিকল্পনা করি সুস্বাদু ও স্বাাস্থ্যকর পরিবেশে ভালোমানের আইসক্রিম তৈরি করার। কাজুবাদাম, কিশমিশ, সন্দেশ আর দুধের সর দিয়ে শুরু করি আইসক্রিম তৈরি করা। স্বাদের কারণে বাড়তে থাকে বিক্রি। জনপ্রিয়তা পায় আইসক্রিমটি। বর্তমানে এর খ্যাতি কেশবপুর উপজেলার গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
তিনি বলেন, প্রায় ২৬ বছর আগে বাড়ির সামনে একটি ছাপরা দোকানে বিভিন্ন কোম্পানির আইসক্রিম বিক্রি করতেন। প্রায়ই কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাঁকে আইসক্রিম দিতে চাইতেন না। তখন থেকে প্রতিজ্ঞা করেন, নিজেই আইসক্রিম বানিয়ে বিক্রি করবেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁর স্ত্রী কাকলি (৩০) রেসিপি তৈরি করাকে অনুসরণ করে আইসক্রিম তৈরি করা শুরু করেন। বেশ সুস্বাদু বলে স্বীকৃতিও দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হয়ে ওঠে বেশ জনপ্রিয়।
তাঁর স্ত্রী কাকলি পাল বলেন, আমরা পাঁজিয়া বাজারে বসবাস করি। বর্তমানে পাঁজিয়া বাজারস্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাঁদের দোকানটি। অনেকের কাছে এখন সেটি ‘বৌদির আইসক্রিম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
নিয়মিত আইসক্রিম ক্রতা পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র তানভীর হাসান সিজন ও নবম শ্রেণির ছাত্র মন্দিরা হালদার। তারা জানায়, বিদ্যালয়ে এলে তারা আইসক্রিমটি খায়। আইসক্রিমটি খেতে খুবই মজা। এর স্বাদের কাছে হার মেনে যায় যেকোনো ব্র্যান্ডের আইসক্রিম। এখন দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন এলাকার লোকজন আইসক্রিমটির স্বাদ নিতে দোকানটিতে আসেন। ফলে সেখানে ভিড় লেগেই থাকে।
এলাবাসী বলেন, প্রথমে দোকানের সামনের স্কুল শিক্ষার্থীরা আইসক্রিম খেয়ে ভালো বলতে শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে এর সুখ্যাতি ছড়াতে থাকে।
পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বল ব্যানার্জি বলেন,এটিকে পাঁজিয়ার আরও একটি ঐতিহ্য যোগ হল। পাঁজিয়ার রসগোল্লার খ্যাতি যেমন দেশ-বিদেশজুড়ে, তেমনি বৌদির আইসক্রিমও পাঁজিয়ার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই মাটিতে কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, নাট্যকার, লেখক, সংগীত শিল্পী ও সাংবাদিক, শিক্ষকসহ অনেক গুণী জেনদেন জন্ম। সে কারণে পাঁজিয়ার অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
