কোন কারণে ইমরানের এমন পতন? আল জাজিরার বিশ্লেষণ
নাটকের শেষ অঙ্কে কেবল ট্রাজেডি, ক্রিকেটের ২২ গজ মাতিয়ে ২২ বছর রাজনীতির পর ইমরান খানের মুখে ফুলচন্দন পড়েছিল। ২০১৮ সালে বসেছিলেন পাকিস্তানের মসনদে। মুখে ছিল তার নয়া পাকিস্তানের স্লোগান।
তবে শনিবারের টানা ১৩ ঘণ্টার পার্লামেন্ট সেশনে ইমরান খানের পতন নিশ্চিত করে ছেড়েছে বিরোধীরা।
বলেছে, ‘নয়া পাকিস্তানের পর আপানাদের আবারও পুরানা পাকিস্তানে স্বাগত। ’
পাকিস্তানের কোনও প্রধানমন্ত্রীই ক্ষমতার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেননি, সে হিসেবে ইমরান খানের বেলায়ও অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। তবে একটা জায়গায় ইমরান খান ব্যতিক্রম, তিনিই পাকিস্তানের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যে অনাস্থা ভোটে গদি হারিয়েছেন।
যদিও এই অনাস্থা ভোটের পেছনে ইমরান বিদেশি ষড়যন্ত্র দেখেছেন বারবার।
তিনি এক ‘গোপন চিঠি’ দেখিয়েও দাবি করেছেন, ওই চিঠিতে বিদেশি হুমকির প্রমাণ আছে। ইমরান এটাও বলেছেন, তার ফেব্রুয়ারি মাসের রাশিয়া সফরকে ভালোভাবে নেয়নি ক্ষমতাবান দেশগুলো। শেষ পর্যন্ত হুমকিদাতা হিসেবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র নামও উল্লেখ করেছিলেন ইমরান।
তবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিদেশি নয় দেশের অভ্যন্তরীণ কী কী কারণে ইমরানের পতন হয়েছে সেদিকগুলোই তুলে আনা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর জোরালো সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। তবে পদায়নের নানা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সাথে ইমরানের আর সেই ভালো সম্পর্ক নেই। যদিও সম্পর্ক থাকা আর যাওয়া উভয় বিষয়ই অস্বীকার করছে সেনাবাহিনী ও পিটিআই।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে ইমরান খানের পতনের অন্যতম কারণ বলা হয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। এ বিষয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভান্টিক স্কুল অব গভর্নমেন্টের অর্থনীতিবিদ শাহরুখ ওয়ানি বলেন, ‘আগের সরকারে রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি আর করোনা দুই মিলে বিপর্যয়ে পড়েছেন ইমরান।
তবে তার সরকার দ্রুত এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। পুনর্গঠনের উদ্যোগও কখনো নেওয়া হয়নি। ’
ইমরান খানের একসময়কার মিত্র নাদিম আফজাল চানও মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতি, সার সংকট, পাঞ্জাবের স্থানীয় সরকারসহ নানা ইস্যু মাত্রা ছাড়িয়েছিল।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে ইমরান পতনে আরেকটা বড় কারণ হিসেবে সেনাবাহিনীর ভূমিকা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যখন ‘নিরপেক্ষ নীতি’র নামে সেনাবাহিনী ইঙ্গিত দিয়েছে তারা আর ইমরান খানের সাথে নেই, তখন বিরোধীরা ইমরানের খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরালো করেছে।
বালুাচিস্তান আওয়ামী পার্টির সিনেটর আনওয়ারুল হক কাকার এ বিষয়ে বলেন, ‘যখন অবস্থান নিরপেক্ষ হয়ে গেল, তখন বিরোধীরা দেখল সরকার টিকতে পারবে না। এক দৃষ্টিতেই তাই দেখা গেছে সে থাকতে পারবে না, তার পতন কেবল সময়ের ব্যাপার। ’
গত বছরের অক্টোবরেই সেনাবাহিনী আর ইমরান খানের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সেসময় ইমরান খান গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট ফয়েজ হামিদকেই রেখে দেন। তবে ওই পদে সেসময় সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিমের নাম প্রস্তাব করেছিলেন।
সূত্র: আল জাজিরা
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)