তালায় পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার ও টিআরএম চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
জরুরী ভিত্তিতে তালা উপজেলার পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার পূর্বক টিআরএম চালু, ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সাথে নদী পুনঃখননের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ জুন) বিকালে তালা উত্তরণ আইডিআরটিতে উপজেলা পানি কমিটির আয়োজনে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তালা উপজেলা পানি কমিটি সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ময়নুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার জনজীবনে স্বস্তি দেখা দিয়েছে, দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কবল থেকে এলাকা মুক্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতার সমাধানকল্পে জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ নামের একটি বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে এবং সমাপ্ত হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিল ঃ ৯০ কি.মি নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেসরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন।
পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে ১৫ লক্ষ অধিবাসী। অববাহিকার মানুষরা এখন নির্বিঘেœ ধান, মাছ, সবজি চাষ ও পশুপালন করতে পারছে। বসতি এলাকা, চলাচলের রাস্তা ও বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠানসমূহ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত হয়েছে এবং এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ প্রতিবেশেরও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ইতিমধ্যে ২য় পর্যায় প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিগত ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জুলাই’২০২০ থেকে জুন’২০২৪ পর্যন্ত ৪ বৎসর মেয়াদী ২য় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটির মূল কাজ হলো পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং নদী খনন।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও উচ্চ জোয়ারের চাপে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। ভেসে যায় ফসলীক্ষেত, মৎস্য খামার এবং চলাচলের রাস্তা। বাঁধের ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রকল্পের স্বার্থে ও জনগণের দাবীর মুখে পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে বিগত ২০২১ সালের মার্চ-এপ্রিলে টিআরএম বিলের সংযোগ খালের মুখ বেধে দিয়ে টিআরএম বন্ধ করা হয় যা এখনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে নদী যে পরিমাণ প্রশস্ত ও গভীর হয়েছিল তা আবারও পলি দ্বারা ভরাট হতে শুরু করেছে। এখন পলি মৌসুম চলছে। টিআরএম না থাকায় বালিয়া কাট পয়েন্টের উজানে প্রতিবছর যে ক্রসড্যাম দেওয়া হয় নদীর উপর সেটিও এবার দেওয়া হয়নি। ফলে পলি জমে সংযোগ খাল মুত্যুমুখে পতিত হয়েছে এবং কপোতাক্ষ নদ আবারও সবার চোখের অগোচরে ভরাট হচ্ছে। খনন কার্যক্রমে, শালিখা থেকে নি¤œাংশে ৩০ কিমি. নদী পুনঃখনন কাজ ধীর গতিতে চলমান রয়েছে যেখানে জনগণ স্বচ্ছতার সাথে ডিজাইন অনুযায়ী নদী খনন দেখতে চায়।
অন্যদিকে ফসলের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে বিভিন্ন ধরণের ভোগান্তির কারণে এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ। বিল অধিবাসীদের বক্তব্য পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের ফলে বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ উপকৃত হলেও তাদের দুঃখ দুর্দশা ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি চলমান রয়েছে এবং ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত টিআরএম বিল অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সম্ভব হয়নি।
তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কার পূর্বক টিআরএম চালু, ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং স্বচ্ছতার সাথে নদী পুনঃখননের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকল মহলের জোরালো ভূমিকা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)