নড়াইলে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন, স্ত্রী গ্রেফতার
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল: নড়াইলে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হয়েছে। এ ঘটনায় স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মোঃ ইমরুল ইসলাম (৩৭), পিতা-মোঃ আব্দুল্লাহ গাজী, মাতা-রাজিয়া বেগম, সাং-শ্রীধরপুর, থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোর এর আপন ছোট ভাই মোঃ শিমুল হোসেন গাজী (৩৪) অনুমান ৫ বছর পূর্বে বিধবা মোছাঃ পলি খাতুনকে বিবাহ করেন। মোছাঃ পলি খাতুন অনুমান ২ বছর পূর্বে হতে নড়াইল সদর থানাধীন কাইচদাহ গ্রামে জমি ক্রয় করে বাড়ী-ঘর তৈরী করে পলি খাতুনের ১ম স্বামীর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়া বসবাস করতে থাকে। মোঃ শিমুল হোসেন বেশীরভাগ সময় তার ২য় স্ত্রী পলি খাতুনের বাড়ীতেই থাকত। মাঝে-মধ্যে শ্রীধরপুর গ্রামে তার নিজ বাড়ীতে এসে দুই একদিন থেকে আবারও ২য় স্ত্রী পলি খাতুনের কাছে চলে যেত। গত ৩১ আগস্ট/ বিকাল অনুমান ৪:টার সময় শিমুল হোসেন শ্রীধরপুরে তাদের বাড়ীতে আসে এবং সংসারের বাজারের জন্য ৫০০/- টাকা দিয়ে তিনি বাজার করার কথা বলে বাড়ী থেকে চলে যান। পরবর্তীতে গত ৬/৯/ সন্ধ্যা ৭:৩৯ মিনিটের সময় শিমুলের মোবাইলে তার ছেলে রায়হান (১৪) এর মোবাইল থেকে একটি মেসেজ আসে যে, তাকে কারা ধরে নিয়ে গেছে। কোথাও আটকে রেখেছে, তার মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নিয়েছে, সময় পেলে পরে কথা বলবে। উক্ত মেসেজ পাওয়ার পরে শিমুলের মোবাইল নম্বরে ফোন করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মোছাঃ পলি খাতুনকে মোঃ ইমরুল ইসলাম ফোন করে তার ভাই শিমুলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে, গত (২ সেপ্টেম্বর) রাত্র অনুমান ১০ টার সময় শিমুল হোসেন তাকে মারধোর করে বাড়ী থেকে কোথাও চলে গেছে । এরপর থেকে তিনি আর কিছুই জানেন না।
মোঃ ইমরুল ইসলাম তার ভাই শিমুলকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়টি গত ৭সেপ্টেম্বর যশোর জেলার অভয়নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু বাদীর ভাইয়ের ২য় স্ত্রীর বাড়ী নড়াইল এবং তার ভাইও নড়াইলে বসবাস করায় অভয়নগর থানা পুলিশ তাদেরকে নড়াইল থানা পুলিশের সহায়তা নিতে বলেন। বাদীর ভাইয়ের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় ও পলি খাতুনও কোন তথ্য দিতে না পারায় তিনি তার ভাই শিমুলকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করতে থাকেন। খোঁজাখুজির একপর্যায় সোমবার (৯/৯/) সকাল অনুমান ৯:৩০ মিনিটের সময় নড়াইল সদর থানাধীন কাইচদাহ সাকিনস্থ শিমুল হোসেনের ২য় স্ত্রী পলি খাতুনের বাড়ীতে এসে তার ভাই কোথায় আছে জানতে চাইলে পলি খাতুন তাদের উপর উত্তেজিত হয়ে যায়। একপর্যায় আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গেলে তারা পার্শ্ববর্তী শেখহাটি পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানালে পুলিশ পলি খাতুনকে ফোন করে ক্যাম্পে ডাকেন। পলি খাতুন ক্যাম্পে আসলে পুলিশ তাকে বাদীর ভাইকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এলোমেলো কথাবার্তা বলাতে সন্দেহ হয়। তখন পুলিশসহ বাদীপক্ষ পুনরায় পলি খাতুনের বাড়ীতে গিয়ে বাড়ী-ঘর সহ আশপাশে খোঁজাখুজি করাকালে আসামির বাড়ীর পশ্চিম পোতায় একচালা টিনশেড টিনের বেড়াযুক্ত ছাপড়া ঘরের মধ্যে একটি কাঠের চৌকির নিচে মাটি খোড়ার চিহ্ন ও মাটি একটু উঁচু দেখতে পায় । এছাড়া সেখানে সিমেন্টের বস্তায় বালু ভরে উপর করে রাখা দেখতে পায়। বিষয়টি তাদের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি হলে শেখহাটি ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই/মোঃ শফিকুল ইসলাম পলি খাতুনকে গ্রেফতার করেন।
নড়াইল জেলার নবাগত পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবীর নির্দেশনায় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ দোলন মিয়া এবং নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ আসামি মোছাঃ পলি খাতুন (৩৬), পিতা-মোঃ নূর মোহাম্মদ মোল্যা, মাতা-ময়না খাতুন, স্বামী-মোঃ শিমুল হোসেন গাজী, সাং-কাইচদাহ, থানা ও জেলা-নড়াইলকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি তার স্বামীকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেন।
আসামি পলি খাতুনের দেখানো মতে তার ছাপড়ার মধ্যে গর্ত থেকে মাটি খুঁড়ে বাদীর ছোট ভাই শিমুলের অর্ধগলা-পঁচা লাশ উদ্ধার করা হয় । পুলিশ লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে মৃতদেহ নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন। আসামি মোছাঃ পলি খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, গত (২/৯)তারিখ দিবাগত রাত্র অনুমান ১১:০০ টার সময় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার স্বামীকে ভাতের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ায়। এতে তার স্বামী ঔষধ মেশানো ভাত খেয়ে অচেতন থাকা অবস্থায় ৩/ ৯/ রাত্র অনুমান ১:৩০ সময় থেকে ২:০০ সময়ের মধ্যে আসামি পলি খাতুন তার স্বামীকে পাজা কোলে করে ঘর থেকে তার বাড়ীর উঠানের উপরে শোয়াইয়ে সাদা রংয়ের লম্বা মোটা রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে উক্ত রশি গলায় প্যাঁচ দিয়ে টেনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তার স্বামীকে খুন করে লাশ গুম করার জন্য তার বাড়ীর পশ্চিম পোতায় একচালা টিনশেড টিনের বেড়াযুক্ত ছাপড়া ঘরের মধ্যে মাটি খুঁড়ে লাশ পুতে রাখে ও সিমেন্টের বস্তায় বালু ভরে উপরে রাখে এবং তার উপরে কাঠের চৌকি দিয়ে লাশ গুম করে।
আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আসামি দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)