মশাবাহিত এই ৭ রোগ থেকে সাবধান
আজ ‘বিশ্ব মশা দিবস’। প্রাণঘাতী এই পতঙ্গের সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য প্রতি বছর ২০ আগস্ট দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ ২৫ হাজার মানুষ মারা যান মশার কামড়ে। অন্য কোনো প্রাণীর কারণে এত মৃত্যু ঘটে না। বাংলাদেশে এ বছর আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৪৬৬ জনের প্রাণ গেছে শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগে।
মশার কামড়ে যত রোগ : বিশ্বে প্রায় ৩,৭০০ এর বেশি প্রজাতির মশা পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে অল্প কিছু প্রজাতি রয়েছে যার কামড়ে বিভিন্ন ধরণের অসুখে আক্রন্ত হয় মানুষ। বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস, ইয়োলো ফিভারের মত রোগ বেশি ছড়ায়।
১. ম্যালেরিয়া : স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ছড়ায়। বাংলাদেশে মোট ৩৬ প্রজাতির অ্যানোফিলিস মশা দেখা যায়, এদের মধ্যে সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়।
এ রোগের লক্ষণগুলো হলো— শীত শীত লাগা, অল্প জ্বর, মাথার ব্যথা, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিদ্রার মতো উপসর্গ শুরু হয়। এরপর নিয়মিত ও নির্দিষ্ট বিরতিতে কাঁপুনি দিয়ে প্রচণ্ড জ্বর (১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে) ম্যালেরিয়ার প্রধান লক্ষণ। অত্যধিক ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে বলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।
২. ডেঙ্গু : এডিস মশার দুইটি প্রজাতি- এডিস ইজিপ্টি এবং অ্যালবোপিকটাস, মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বেড়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে থাকে। তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। সাথে বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
ডেঙ্গু গুরুতর হলে রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, চোখের কোনা, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৩. ফাইলেরিয়া : কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোগ ছড়ায়। ফাইলেরিয়া রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাবে গোদ রোগও বলা হয়।
৪. চিকুনগুনিয়া : চিকুনগুনিয়া রোগও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে। চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণ সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মত। তবে মাথাব্যথা, বমি ভাব, দুর্বলতা, সর্দি-কাশি, এবং র্যাশের সঙ্গে শরীরে হাড়ের জয়েন্ট বা সংযোগস্থলে তীব্র ব্যথা হয়।
৫. জাপানিজ এনসেফালাইটিস : কিউলেক্স মশার মাধ্যমে জাপানিজ এনসেফালাইটিস রোগটি ছড়ায়। ১৯৭৭ সালে মধুপুর বন এলাকায় প্রথম জাপানিজ এনসেফালাইটিস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম এবং খুলনা অঞ্চলে এই রোগটি পাওয়া যায়। পেটে ব্যথা, বমি, খুব জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, কোমা, বারাবার খিচুঁনি, সেপটিক প্যারালিসিসের মত লক্ষণ দেখা যায় এই রোগে।
৬. জিকা ভাইরাস : এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ানো আরেকটি রোগ হলো জিকা ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই কোন উপসর্গ দেখা যায় না। তবে এ রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো—জ্বর, ফুসকুড়ি, জয়েন্ট বা গাটে ব্যাথা এবং চোখ লাল হওয়া। এই রোগে সাধারণত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন হয় না। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মেক্সিকো ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোতে এই রোগ বেশি দেখা যায়। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত দুইজন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন।
৭. হলুদ জ্বর : সংক্রামিত এডিস এবং হেমাগোগাস মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে হলুদ জ্বর (Yellow fever) ছড়ায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ হলো জ্বর, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, মাংসপেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে পিঠে), ও মাথাব্যথা। লক্ষণগুলো সাধারণত পাঁচ দিনের মধ্যে সেরে যায়।
হলুদ জ্বরে আক্রান্ত প্রায় নব্বই শতাংশ রোগীই আফ্রিকার। এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি। তবে এশিয়াতে হলুদ জ্বর খুব একটা দেখা যায় না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)