রমজান মাসে ভোক্তাদের যেন হয়রানি না হয়: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে বাজার পরিস্থিতি কেমন। কিছু কিছু ব্যবসায়ী থাকে রমজান মাসে পণ্য মজুত করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, কোথাও যেন ভোক্তাদের এভাবে হয়রানি হতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশে পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে।
রোববার (৩ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হল থেকে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং কোভিড অতিমারির প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন এমন এমন দেশ রয়েছে যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ শতাংশে রয়েছে। বাংলাদেশও এর থেকে দূরে নয়; যদিও বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের নিচে আছে। কিন্তু তারপরও এটা একটা সমস্যা রয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালে আমরা জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সম্মেলন করেছিলাম। সেখানে অনেকগুলো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমি সব জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই, নির্বাচনের আগে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, আপনারা সঠিকভাবে সেটি পালন করেছেন।
সরকারপ্রধান বলেন, এবারই প্রথম আমরা আইন তৈরি করে আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। একইসঙ্গে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন।
১৯৭৫ সালের পর থেকে যতগুলো নির্বাচন আমি দেখেছি; অনেক নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছি, কীভাবে জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে আমি দেখেছি। কিন্তু এবারের নির্বাচন সবচেয়ে সুষ্ঠু এবং অবাধ, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে অনেকেই নির্বাচন চায়নি। অনেকেই চেয়েছে দেশে অনির্বাচিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আবার সৃষ্টি হোক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দীর্ঘ ২১ বছর এদেশের মানুষ যে কষ্ট ভোগ করেছে, আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত; আবার সেই পরিস্থিতি যেন আসে।
তাদের কাছে নির্বাচনটা পছন্দ নাও হতে পারে। কারণ নির্বাচন তাদের মন মতো হয়নি। কিন্তু নির্বাচনে সাধারণ মানুষ একদম গ্রাম পর্যায়ের মহিলা এবং তরুণ ভোটারদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ছিল। তারা যে সঠিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পেরেছে এর সব কৃতিত্ব আপনাদেরই (ডিসি)।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন বড় কিছু সমস্যা আছে। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দেখি। পড়ালেখা করা ছেলে-মেয়েরা কেন এসবে জড়াবে? এটা সবার দেখতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকসহ সবাইকে নজরদারি বাড়াতে হবে।
ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় কি না, নজরদারি বাড়াতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। (কিশোরদের) গ্রেফতার করে লাভ নেই। গ্রেফতার করলে অপরাধীদের সঙ্গে মিশে আরও খারাপ হয়ে যাবে। গোড়া থেকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এসময় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেনো সঠিক মানুষেরা সুফল পায় সেটি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। গতানুগতিক শিক্ষার বদলে কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদিও ভালো কাজে প্রথম দিকে অনেকেই সমালোচনা করেন। কিন্তু পরে এর সুফল পেলে সমালোচনা থেমে যায়। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে তরুণদের মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের থেকে মুক্ত করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কোন মতেই যেনো তিন ফসলী জমি নষ্ট না হয়। চাষাবাদের জমি নষ্ট করা যাবে না। বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি তৈরি করতে হবে, থাকতে হবে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা।
জনগণের অর্থেই সবাই চলে, জেলা প্রশাসকদের এই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা করাই কর্তব্য। জনগনের সেবার বিষষয়টি মাথায় রেখে সব কাজ করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় আছি মানেই ক্ষমতা ভোগ করার জন্য আছি এমন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির মধ্যে পরশ্রীকাতরতা বেশি। অহেতুক সমালোচনা হয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না আমি। সমালোচকরা শুধু তাৎক্ষণিক সুবিধার কথা চিন্তা করে। জনগণের কল্যাণ আমাদের চেয়ে ভালো কেউ বোঝে না। কে কি বললো সেটি শুনে কাজ করবেন না। প্রতিটি প্রকল্প নেয়ার সময় সাধারণ মানুষ ও দেশের কথা বিবেচনা করবেন। প্রকল্পে জেলা প্রশাসকদের যথাযথ নজরদারি করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সূচনা বক্তব্যে শুরু হওয়া সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)