সাতক্ষীরা কারাগারে আসামীদের সাথে আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ ৬ মাস
‘‘হৃদয়ের কান্না, চোখে জল। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে তোরা সরাসরি কবে দেখা করতে দিবি বল।’’ এমনইভাবে আকুতি করছে সাতক্ষীরা কারাগারের থাকা ৫৬৫ জন বিভিন্ন মামলার আসামী। এতে করে আসামীর আত্মীয়-স্বজনরাও ক্ষুব্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সম্প্রতি দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছে সরকার। আশা করছি, খুবই দ্রুত কারাগারে থাকা আসামীদের সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও সরাসরি সাক্ষ্যৎ করার অনুমতি দিবে।
সাতক্ষীরা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন মামলার বিচারাধীন/হাজতী ৪২৩জন, কয়েদী ১১১ জন, যাবজ্জীবন প্রায় ৩০ জন ও ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত ০১ জন আসামী রয়েছে। ওই আসামীর আত্মীয়রা মাসে একবার কারাগারে যেয়ে তাদের সরাসরি সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেতো। তবে করোনা পরিস্থিতি উর্দ্ধমুখী থাকায় সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কারা কর্তৃপক্ষ বিগত ০৬ মাস আসামীদের সাথে তাদের আত্মীয়দের দেখা করতে না দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছিল। সেই নির্দেশনা মোতাবেক চলছিল সাতক্ষীরা কারাগারের জেলারও। এরমাঝে প্রায় ১৫ দিন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সরাসরি দেখা করতে দিয়েছিল। পরবর্তীতে সেটিও বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে অদ্যবধি সেই নিয়মই চালু রয়েছে।
সাতক্ষীরা কারাগার সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতিপূর্বে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং বিকাল ৩ টা থেকে সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত আসামীদের সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা সরাসরি দেখা করার সুযোগ পেতো।
জেলার সচেতন নাগরিকরা জানান, শহর-গ্রামে প্রতিনিয়ত হামলা, মামলা ও হয়রানির ঘটনা ঘটছে। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ কেউ থানা ও আতালতে মামলা করে প্রতিপক্ষকে সর্বশ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এমনকি অধিক টাকা খরচ করেও তাদের জেলের ভাত খাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সেটি বন্ধের পাশাপাশি নিরীহ মানুষগুলো যারা (আসামী সেজে) কারাগারে যেয়ে দিনের পর দিন স্ত্রী-সন্তান ছাড়া দিনপাত করছেন। সেই মানুষগুলোকে চিহ্নিতপূর্বক আইনের আওতায় এনে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পœন করার দাবি জানান তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে সাতক্ষীরা কারাগারের জেল সুপার মো. সাঈদ হোসেন জানান, কোভিড পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক কারাগারে আসামীদের সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সরাসরি বা সামনা সামনি সাক্ষাৎ বন্ধ রেখেছি আমরা। তবে মোবাইলের মাধ্যমে আসামীরা তাদের আত্মীয়দের সাথে কথা বলতে পারছে। আগামীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে আবারও পূর্বের নিয়মে সাক্ষাৎ কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম জানান, কোভিভ পরিস্থিতির মধ্যেও সকল কার্যক্রম চলমান। এমন সময় কারাগারের আসামীদের সাথে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সরাসরি দেখা করতে না দেওয়া অমানবিক ঘটনার সামিল। মানবিক দৃষ্টি অতিদ্রুত কারাগারে সাক্ষাৎ কার্যক্রম চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এ বিষয়ে দহাকূলা গ্রামের এক ভুক্তভোগী আসামীর বাবা মারুফ হোসেন জানান, আমার বয়স প্রায় ৬০। শরীর এখন নুইয়ে পড়েছে। কোনো রকমে আমার ছেলে উপার্জন করে সংসার চালাতো। সেই ছেলেকে পুলিশ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। আমার ছেলেকে বাইরে থেকে খাবার কিনে সবসময় তো দিতে পারি না। সেজন্য রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর প্রায় পনে ১২ টায় সাতক্ষীরা কারাগারে ধার-দেনা করে ৮’শত টাকা এনেছি ছেলে নামীয় পিসি কার্ডে টাকা জমা দিতে। সেটি জমাও দিয়েছি। জমাগ্রহণকারী পুলিশ সদস্য বলেছেন, আজকে এই টাকা তুলতে পারবে না। আগামীকাল (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে ১১ টার দিকে তুলতে পারবে। তিনি আরও জানান, আর পারছি না। খুবই কষ্টে দিনপাত করছি। আমার ছেলেকে জামিন দিয়ে আমার বুকে ফিরিয়ে দিতে জেলা প্রশাসক, সিনিয়র জেলা জজ ও দায়রা জজ, জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারে থাকা এক ভুক্তভোগী আসামী জানান, আমাকে ৪৫৭ ও ৩৮৩ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ওই মামলায় আমার রিমান্ডও নিয়েছে। অথচ নির্দোষ তার প্রমাণ করার কোনো আলামত নেই কাছে আমার। এরপরেও গত ১৫ থেকে ১৮ দিনে আমার উকিল জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন। অজ্ঞাত কারণে কেন পারছে না তা আমার বোধগম্য নহে। আমার স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে এখানে থাকতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। তাদের ছাড়া রাতে ঘুমাতে পানি না। এখানে রাতে আমার ঘুমও হয়না। মানসিক টেনসনে শরীরও ক্রমান্বয়ে নুইয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় আমার জামিন আবেদন মঞ্জুর ও ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় জেলা পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী আসামী।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)