‘অনেক করেছেন’ হাসিনা, আমৃত্যু তাকে ভারতে রাখার পক্ষে মণি শঙ্কর আইয়ার
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতদিন চান, ততদিন তাকে ভারতে থাকার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশটির সাবেক কূটনীতিক, কংগ্রেস নেতা মণি শঙ্কর আইয়ার।
বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর যে দাবি বাংলাদেশ জানিয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে ভারতের সাবেক এই মন্ত্রী বলেছেন, আমার মনে হয়, আমরা সবাই একমত হব যে, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য অনেক করেছেন। তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, তাতে আমি খুশি। যত দিন তিনি থাকতে চান, সেটা যদি তার বাকি জীবনও হয়, তাকে সেই আতিথ্য আমাদের দেওয়া উচিত।
ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, ষোড়শ এপিজে সাহিত্য উৎসবে অংশ নিতে শনিবার (১২ জানুয়ারি) কলকাতায় গিয়েছিলেন মণি শঙ্কর আইয়ার। সেখানে পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়েও তিনি কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে গত ৫ অগাস্ট ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা, যার দল আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তাকে এখন দিল্লির একটি সেইফ হাউজে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগ করার সুযোগ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে।
আন্দোলন দমন করতে গিয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। গণহত্যা ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারের মুখোমুখি করার জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারতকে একটি কূটনৈতিক পত্র (নোট ভার্বাল) পাঠায় বাংলাদেশ সরকার।
ভারত এর আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি। বরং হাসিনার ভারতবাস দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দিতে তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে বলে খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
গত ডিসেম্বরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরকে স্বাগত জানিয়ে মণি শঙ্কর আইয়ার পিটিআইকে বলেন, এই আলোচনা অব্যাহত রাখা দরকার এবং ভারতের উচিত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সরাসরি মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক করা।
ভারতীয় কংগ্রেসের এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হামলা হচ্ছে ‘ঠিক’, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ঘটেছে তারা ‘শেখ হাসিনার সমর্থক’ হওয়ার কারণে।
ওগুলো (হিন্দুদের ওপর হামলার যেসব খবর এসেছে) সত্য, তবে অতিরঞ্জিত। অনেকগুলো ঘটনাই মূলত রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে ঘটেছে।
এর আগে এপিজে সাহিত্য উৎসবের একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে মণি শঙ্কর আইয়ার বলেন, পাকিস্তানিরা ভারতীয়দের ‘মতই’, কেবল দেশভাগের দুর্ঘটনা তাদের আলাদা রাষ্ট্রের বাসিন্দা করেছে।
আমি একজন তামিল, আমার স্ত্রী পাঞ্জাবি। আমার স্ত্রীর সঙ্গে একজন পাকিস্তানি পাঞ্জাবির যতটুকু পার্থক্য আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি পার্থক্য রয়েছে আমাদের মধ্যে।
নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা আইয়ার বলেন, আমাদের (পাকিস্তানে) সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সাহস আছে, কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে এক টেবিলে আলোচনায় বসার সাহস এই সরকারের নেই।
তার ভাষায়, পাকিস্তান সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে ঠিক, কিন্তু দেশটি সন্ত্রাসের শিকারও হচ্ছে।
তারা ভেবেছিল তালেবানকে তারা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আনতে পারবে। কিন্তু সেই তালেবানই এখন তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি।
এ বিষয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রশংসা করে আইয়ার বলেন, এককভাবে তার ‘সবচেয়ে বড় সাফল্য’ ছিল কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পথ তৈরি করা, যার ভিত্তিতে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ চার দফা চুক্তির কথা বলেছিলেন।
মণি শঙ্কর আইয়ারের ভাষায়, মনমোহন সিং দেখিয়েছিলেন, সামরিক সরকারের সঙ্গেও আলোচনা সম্ভব। ভারতের উচিত তার দেখানো পথে কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)