আমানতে কোন ব্যাংকে কত সুদ
উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের দাবি ও সরকারের নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। ঋণের সুদহার কমায় ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহারও কমিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু সুদহার কমলেও ভবিষ্যতের চিন্তা করে ব্যাংকে টাকা জমানোই বড় ভরসা মনে করে সাধারণ মানুষ। তাই কষ্টার্জিত অর্থ কোন ব্যাংকে রাখলে একটু বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে তার খোঁজে থাকেন আমানতকারীরা।
সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে তিন বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখার সুযোগ রয়েছে। আমানতের বিপরীতে যে সুদ দেয়, তার নাম ফিক্সড ডিপোজিট রেট বা স্থায়ী আমানতে সুদের হার (এফডিআর)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত সেপ্টেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫৯টি ব্যাংকের সুদহার এক রকম নয়। বিভিন্ন মেয়াদে সর্বনিম্ন ২ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ পর্যন্ত এফডিআরে সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের তিনটি বিশেষায়িতসহ মোট ৯টি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকগুলো আমানতের বিভিন্ন মেয়াদে সাড়ে ৪ থেকে ৬ শতাংশ সুদ অফার করছে। এর মধ্যে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ দিচ্ছে আমানতকারীদের। ব্যাংকটি তিন মাস থেকে এক বছরের কম সময়ের সুদ ৪ দশমিক ৫০ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, এক বছর থেকে তার বেশি সময়ের সুদ ৫ দশমিক ৭৫ থেকে ৭ শতাংশ এবং তিন বছর বা তার বেশি সময়ের সুদ ৬ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত দিচ্ছে। এছাড়া সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, জনতা, বেসিক, বিডিবিএল, পিকেবি ও বিকেবির সুদ ৫ দশমিক ৫০ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত।
বেসরকারি ব্যাংক
দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে চতুর্থ প্রজম্মের পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ব্যাংক। ব্যাংকটি তিন থেকে ছয় মাসের কম সময়ের সুদ ৭ শতাংশ, ছয় মাস থেকে এক বছরের কম সময়ের জন্য ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং এক বছর থেকে তার বেশি সময়ের জন্য আমানতের সুদ দিচ্ছে সাড়ে ৭ শতাংশ।
দীর্ঘমেয়াদী আমানতের সবচেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকটি তিন বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য আমানতে সুদ দিচ্ছে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ। তিন বছরের কম সময়ের এফডিআরে ব্যাংকটির সুদহার সাড়ে ৫ থেকে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।
তিন মাস থেকে তিন বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাউথবাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এসএবিসি) ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। দুই বছরের বেশি সময়ের আমানতে পূবালী ব্যাংক দিচ্ছে সাড়ে ৬ থেকে ৮ শতাংশ সুদ। এক বছর পর্যন্ত এফডিআরে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে মেঘনা ব্যাংক।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড আমানতের মুনাফা দিচ্ছে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত। দীর্ঘমেয়াদী আমানতে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ দিচ্ছে দি সিটি ব্যাংক। এছাড়া বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকেরই এফডিআরে সুদহার ৫ থেকে ৬ শতাংশ।
বিদেশি ব্যাংক
বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে তিন বছর থেকে তার বেশি সময়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ৯ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের সুদ সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম সুদ এইচএসবিসির। ব্যাংকটির আমানতের সুদহার এক শতাংশের নিচে। এক বছরমেয়াদী আমানতে হাবিব ব্যাংক দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদ। তবে এক বছরের ওপরে এফডিআরে ব্যাংকটির সুদহার ৬ শতাংশ। এছাড়া আল ফালাহ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ওরি এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় সুদের হার ১ দশমিক ২০ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, মহামারি করোনার প্রভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ব্যবসা কমে গেছে। এখন টিকে থাকতে হলে ব্যয় কমাতে হবে। এ কারণেই আমানতের সুদহার কমাতে হচ্ছে। এর বিকল্প নেই, কারণ সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দিতে হচ্ছে। এটি নিশ্চিত করতে হলে আমানতের সুদ কমাতেই হবে। যদিও এটি আমানতকারীদের জন্য খুব কষ্টকর। কিন্তু তারপরও আমাদের কিছু করার নেই। তবে যতটুকু সম্ভব আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের ওপর রাখার চেষ্টা করছি।
তবে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় আমানতের সুদ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। আমানতের সুদের হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি। যদি মূল্যস্ফীতির চেয়ে আমানতের সুদ কম হয় তাহলে ব্যাংকে আমানত রাখা মানে টাকা কমে যাওয়া। এটা আমানতকারীদের জন্য ক্ষতি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস কমে যাবে।
তাই যে কোনো মূল্যে মূল্যস্ফীতির চেয়ে আমানতের রেট বেশি রাখতে হবে— উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)