কপালিয়া বিলে টিআরএম সহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে কেশবপুরে সংবাদ সম্মেলন


যশোরের কেশবপুর প্রেসক্লাবে কেন্দ্রীয় পানি কমিটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার সকালে প্রেসক্লাব কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পানি কমিটির অন্যতম নেতা প্রাক্তন অধ্যক্ষ এ বিএম শফিকুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন যে, অকাল জলাবদ্ধতা নিরসনে অবিলম্বে কপালিয়া বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টি আর এম) বাস্তবায়ন,আমডাঙ্গা খাল সংস্কার ও প্রশস্তকরণ,ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝখান দিয়ে টেকা-মুক্তেশ্বরী নদীর সাথে হরিনদীর অবাধ সংযোগপোল্ডার অভ্যন্তরের আবদ্ধ নদীগুলো উন্মুক্ত করে ভৈরব, কপোতাক্ষ এবং বিল ডাকাতিয়ার নদীগুলোর সাথে সংযোগ।অভ্যন্তরীণ বিল, খাল ও ¯øুইসগেট ব্যবস্থাপনা এবং সকল কাজে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা ইস্যুটি বহুল আলোচিত জাতীয় পর্যায়ের একটি ইস্যু। সুদীর্ঘ ৩০-৩৫ বৎসর যাবৎ এ সমস্যাটি অব্যাহত আাছে। বতর্মানে ভবদহ অঞ্চল অতিক্রম করে সমস্যাটি নিম্নে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত অসহায় মানুষদের জীবন জীবিকায় দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নীচু বসতি এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় ঐসব এলাকা থেকে ব্যাপকহারে মানুষ স্থানান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। খুকশিয়া বিলে ৭ বৎসর ধরে টিআরএম বাস্তবায়নের পর পরবর্তীতে বিল হিসাবে পার্শবতী কপালিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু জনগণ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে উক্ত বিলে টিআরএম কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। জনগণের সাথে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণ খুকশিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়নে বিল অধিবাসীদের ভোগান্তি যার প্রভাব পড়ে বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের উপর। কপালিয়া ও খুকশিয়া বিল পাশাপাশি দুটি বিল। কপালিয়া বিল অধিবাসীদের অনেকের জমি রয়েছে খুকশিয়া বিলে। বিভিন্ন ধরণের জটিলতার কারণে খুকশিয়া বিলের অধিকাংশ জমির মালিক সরকারের বরাদ্দকৃত ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করতে পারেনি। তাছাড়া বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় প্রতি বৎসর এলাকা প্লাবিত হওয়া, বিল ব্যবস্থাপনায় কর্তৃৃপক্ষের উদাসীনতা প্রভৃতি কারণে বিল অধিবাসীদের দীর্ঘ ৭ বৎসর যাবৎ চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হতে হয়েছে।
এতে পার্শ্ববতী বিল কপালিয়ার অধিবাসীদের মনে এ ধারণা তৃণমূল হয় যে, তাদেরকেও অনুরূপ ভোগান্তির শিকার হতে হবে। জনগণের এ ধরণের মনোভাবকে পুঁজি করে ঘের মালিকরা এবং রাজনৈতিক দলাদলিতে দ্বন্দ্ব সংঘাতের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত কপালিয়া বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানে কপালিয়া বিল অধিবাসীদের মনোভাব টিআরএম বাস্তবায়নের অনুকূলে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বর্তমান নথিপত্রে ২৪ নং পোল্ডারকে ভবদহ এবং তার সন্নিহিত এলাকাকে ভবদহ এলাকা হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে হরিশ্রী, টেকা-মুক্তেশ্বরী, আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদী। প্রশাসনিক দিক থেকে এলাকাটি যশোর জেলার সদর, মণিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর উপজেলা, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত। এলাকার আয়তন প্রায় ৮০০০০ হেক্টর, জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ এবং গ্রাম সংখ্যা ৪৯৫টি। চিহ্নিত এলাকার সকল নদীর পানি কাসিমপুর ত্রিমোহনায় মিলিত হয়ে তেলিগাতী-ঘ্যাংরাইল নামে প্রবাহিত হয়ে বারআড়িয়া মোহনায় মিলিত হয়েছে।
বিগত ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাই কমিটির সভায় বিল কপালিয়ার জন্য প্রস্তাবিত টিআরএম কার্যক্রমকে বাদ দিয়ে ৬৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকার একটি সংশোধিত প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে এলাকার জনগণের কাছে ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাতের সামিল।
জনগণ এতোদিন ধরে আশায় বুক বেঁধে আছে যে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়িত হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, হতাশার অন্ধকারে জনগণ এখন হাবুডুবুু খাচ্ছে। অবিলম্বে সরকারের ডেল্টা প্রকল্পে টি আর এম অর্ন্তভুক্ত করে মানুষের দূর্দশা লাঘবের দাবি জানানো হয়।
প্রভাষক হাশেম আলী ফকির, নজরুল ইসলাম খান, দিলীপ সানাসহ পানি কমিটির নের্তৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
