হত্যার চাপাতি ও তোয়ালে উদ্ধার
কলারোয়ায় ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ভাই, ভাবী, ভাইপো ও ভাইজিকে খুন করে ছোটভাই রায়হানুর
কলারোয়ায় ফোর মার্ডারের ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই রাহানুরের স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সে তার বড় ভাই, ভাবি ও ভাইপো-ভাতিজিকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করে। পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বড়ভাই শাহিনুরসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে চাপাতি দিয়ে একাই হত্যা করেছে ছোট ভাই রায়হানুল।
বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দেন সিআইডির খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তবে কাউকে জানানোর ভয় না থাকায় ৬মাস বয়সী শিশু মারিয়াকে হত্যা করা হয়নি বলে জানান তিনি।
একই সাথে নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই গ্রেফতার রাহানুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুর একাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
সাতক্ষীরা সিআইডি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পড়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সিআইডি এডিশনাল ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান, সিআইডি পরিদর্শক আক্তার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- রায়হানুল বেকার ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় খাওয়ার খোঁটা দিয়ে তাকে ব্যাপক গালমন্দ করে ভাবী সাবিনা খাতুন। তখনই সে ভাবীকে হত্যার পরিকল্পনা আটে। রাতে টিভি দেখার সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে বলে তাকে বকা দেয় বড় ভাই শাহিনুল। এসময় সে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে সে কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই ও ভাবীকে খাওয়ায়। রাতে দরজা না দিয়ে বাইরের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে শাহিনুলসহ পরিবারের সবাই ঘুমাতে যায়। রাতের শেষ ভাগে সে গাছ বেয়ে চিলে কোটা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে ঘুমন্ত ভাই ও ভাবীকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। ছেলে সিয়াম ও মেয়ে তাসনিম জেগে গেলে তাদেরকেও হত্যা করে রায়হানুল। পরে সে চাপাতি পুকুরে ফেলে গোসল করে ঘুমাতে যায়। রায়হানুলের স্বীকারোক্তিতে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি।
লিখিত বক্তব্যে সিআইডি তদন্ত দল আরো জানান- পারিবারিক কলহ ও মাদক সংক্রান্ত বাধা নিষেধের জের ধরে দীর্ঘদিন ধরে ছোট ভাই রাহানুর হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে আসছিলো। ১৫ অক্টোবর রাতে রাহানুর পরিবারের সকল সদস্যকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে চেতনা নাশক ঔষধ খাইয়ে প্রথমে বড় ভাই শাহিনুর রহমান, পরবর্তীতে তার ভাবী সাবিনা এবং ভাইপো ও ভাতিজাকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করে। পরবর্তীতে খুনের সকল আলামত ও তার পোশাক পরিচ্ছেদ পরিবর্তন করে পাড়া-প্রতিবেশীদের একত্রিত করে নাটকীয়ভাবে হত্যার ঘটনা ভিন্নদিকে ঘুরিয়ে দিতে জমিজমা ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধ সামনে এনে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। আলামত সংগ্রহের পরে নিহতের ছোট ভাই রাহানুর ইসলামের হাতের ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে হত্যার আলামত সংগ্রহকারী কিছু পোশাক ও শরীরের বিভিন্নস্থানে রাহানুরের ফিঙ্গার প্রিন্টের মিলে যাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৬অক্টোবর শুক্রবার তাকে হত্যা মামলায় আটক দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে ১০দিনের রিমান্ড চায় সিআইডি। মামলার শুনানীতে বিজ্ঞ আদালত রাহানুর কে রবিবার ৫দিনের রিমান্ডে দেন। রিমান্ডে থাকা রাহানুরের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বুধবার (২১ অক্টোবর) বিকালে সিআইডি’র এডিশনাল ডিআইজি ওমর ফারুক ও সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমানের নেতৃত্বে হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পাশে থাকা নিহত শাহিনুর রহমানের লিজ নেয়া পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র (বড় দা) ও একটি তোয়ালে উদ্ধার করা হয়৷ এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ৪খুন হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রতিবেশি আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের বাসিন্দা ও শাহিনুরের ঘের কর্মচারি আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে। সর্বমোট ৪জন আসামী নৃশংস ও লোমহর্ষক এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৫ অক্টোবর ভোরে সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলশি গ্রামে মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুর, তার স্ত্রী ছাবিনা ও ছেলে মাহি ও মেয়ে তাসনিমকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন রাতে শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে হত্যা মামলা (নং-১৪) দায়ের করেন। বর্তমানে রাহানুরকে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।
রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুর বর্তমানে কোন কাজ করতো না। বিগত বেশ কিছুদিন তার কোন আয় ছিল না। একই সাথে গত ৯-১০ মাস আগে তার বউ চলে যায়। এজন্য সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তার ভাবী সাবিনা খাতুন তাকে প্রায় গালমন্দ করতো। ঠিক মতো খেতে দিতো না। এতে তার মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে সে ভাবী সাবিনা খাতুনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য সে ১৪ অক্টোবর রাতে পাশের ফার্মেসি থেকে ঘুুমের ওষুধ ডিসোপেন ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড (পানীয়) কিনে তাতে মিশিয়ে তার ভাবী ও ভাইপো ভাতিজিকে খেতে দেয়। রাতে রাহানুর তার বড় ভাইয়ের ঘরে টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিল। রাত দেড়টার দিকে বড়ভাই ঘের থেকে বাড়ি এসে দেখে রাহানুর তার ঘরে বসে টিভি দেখছে। এসময় বড় ভাই শাহিনুর তাকে টিভি দেখার জন্য বকাঝকা করে বলে তুই বিদ্যুৎ বিল দিস নে, টিভি দেখছিস কেন। এসময় রাহানুর ভাইকে বলে এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেব তুমি এই স্পিডটি খাও। বড়ভাই তখন তার দেওয়া স্পিডটি খায়। এরপর রাতের কোন এক সময় সে ঘরের কার্নিস বেয়ে বড়ভাইয়ের ঘরের ছাদের উঠে চিলে কোঠার দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় ভাইকে জবাই করে হত্যা করে। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবীকেও একইভাবে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের সময় ভাবী চিৎকার দিলে ভাইপো-ভাতিজিও উঠে যায়। তখন তাদেরও হত্যা করে রাহানুর। পরে সে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ফেলে দেয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, রাহানুরের দেওয়া তথ্য মতে তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বুধবার পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালেটি উদ্ধার করা হয়েছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)